জামায়াতের বিরুদ্ধে সাক্ষী ছিলেন ফারুকী

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: অপরাধীসংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার মামলার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন মাওলানানুরুল ইসলাম ফারুকী। এই সংগঠনের বিরুদ্ধে সাক্ষীদের নামের তালিকাটিট্রাইব্যুনালের কম্পিউটার থেকে গোপনে কপি হয়ে গেছে। জুন মাসের শেষ ভাগেসাক্ষীদের নামের তালিকা কপি হওয়ার ৭০ দিন পর ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় রাজারবাগেরবাসায় খুন হন নুরুল ইসলাম ফারুকী।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেরপ্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এ প্রসঙ্গে বলেন, জামায়াতেইসলামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ইসলামিক চিন্তাবিদ মাওলানা ফারুকীস্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্মত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, জামায়াতের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যদেয়ার জন্য ফারুকীসহ যাদের নামের তালিকা তৈরি হয়েছিলো তা কে বা কারাকম্পিউটার থেকে কপি করে নিয়ে গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শাহবাগ থানায় সাধারণডায়েরি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘আমি বিভিন্ন গোয়েন্দাসংস্থার কাছেও বলেছি যে, এই কম্পিউটারে আমার রিসার্চের বিভিন্ন কপি আছে।অন্যান্য আর্গুমেন্টের কপি ছিলো যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ নয়। এগুলো পাবলিকডকুমেন্ট। সব আদালতে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে- এখানে অপরাধীসংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার মামলায় সম্ভাব্য সাক্ষীদের নাম ছিল। যেখানেফারুকীর নামও ছিলো।’

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ফারুকী খুনের ঘটনা তদন্তকরতে গিয়ে ওই জিডির ঘটনাটিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গেঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, সব বিষয় মাথায় রেখে ফারুকী হত্যার তদন্ত চলছে। এতে করে শাহবাগ থানায় করা ওইজিডির সূত্রটি কাজে লাগানো হচ্ছে। এর ভেতরে কোনো ক্লু লুকিয়ে আছে কিনা তাখতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা টিম।
অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীরবিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি বর্তমানে ঝুলে আছে। তদন্ত রিপোর্টট্রাইব্যুনালে জমা দেয়ার পর থেকেই এই মামলায় কে বা কারা সাক্ষী হবেন তানিয়ে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা কাজ শুরু করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেরপ্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ সাক্ষীদের সম্ভাব্য তালিকা তৈরিকরেছিলেন। তালিকাভুক্ত ইসলামি চিন্তাবিদদের মধ্যে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য যারাস্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্মত ছিলেন তাদের নামেরও তালিকা ছিলো। ওই তালিকায় ছিলোমাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীর নাম। সেখানে আরও যাদের নাম ছিলো নিরাপত্তারস্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হল না। ট্রাইব্যুনালের অফিস কক্ষে ব্যবহৃতকম্পিউটারে এ ধরনের তালিকা তৈরির কাজ করেন তিনি। কাজ শুরুর পর এক পর্যায়েতিনি কয়েক দিনের ছুটিতে যান। ছুটি থেকে ফেরার পর ওই কম্পিউটারেরহার্ডডিস্কের সংযোগ বিচ্ছিন্ন দেখতে পান। এতে ক্ষতির আশংকায় তিনি রাজধানীরশাহবাগ থানায় ২২ জুন একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি নম্বর ১১৯৬।পুলিশকে গুরুত্বের সাথে তদন্তের অনুরোধ করলেও রহস্যজনক কারণে কাজ এগোয়নি।

ব্যারিস্টারতুরিন আফরোজ বলেন, কম্পিউটারে যে তথ্য ছিলো সেখানে মাওলানাফারুকী ও ইসলামিক আরও কয়েকজন ফিলোসোফারসহ ৮০ থেকে ৯০ সাক্ষীর নাম ছিলো।তিনি আরও বলেন, অনেকে এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে চাননি। তিনি অনেকের সাথেযোগাযোগ করেছেন তারা একবাক্যে বলেছেন- ‘তারা সাক্ষ্য দেবেন না।’ এ ধরনেরনামও ওই তালিকায় আছে।

জিডিতে ছিল ভয়ানক ক্ষতির আশঙ্কা: ব্যারিস্টার ড.তুরিন আফরোজ তার জিডিতে উল্লেখ করেন ‘আমি প্রসিকিউটর কার্যালয়ের ৯নং কক্ষঅফিস হিসেবে ব্যবহার করে আসছি। আমার অফিসের কাজে আমি নিজের দায়িত্বাধীনেএকটি কম্পিউটার ও একটি প্রিন্টার ব্যবহার করে আসছি। কম্পিউটারে আমার নিজস্বপাসওয়ার্ড সংরক্ষিত। গত ১৫ থেকে ১৯ জুন আমি ছুটিতে ছিলাম। ছুটি শেষে ২২জুন অফিসে যোগদান করে আমার কম্পিউটর ও প্রিন্টারসহ সরঞ্জামাদি এলোমেলোঅবস্থায় দেখতে পাই। তখন আমি অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) আশিক ও হারুনসহকর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করি। আশিক আমার ও অন্যদের উপস্থিতিতে সিপিউরহার্ডডিস্কসহ সব তার খোলা পায়। এতে ধারণা হয়, আমার অনুপস্থিতিতে অজ্ঞাতে কেবা কারা কম্পিউটার থেকে তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি, মামলার কাগজপত্রএবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি কপি নিয়ে যেতে পারে। যার ফলে চলমান মামলা বাভবিষ্যতে এই অফিসের কোনো ভয়ানক ক্ষতি সাধিত হতে পারে এবং বিচারাধীনমামলাসমূহ প্রভাবিত হতে পারে। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অতীবজরুরি।’ ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের এই জিডিতে ভয়ানক ক্ষতি সাধিত হতে পারেবলে আশঙ্কা করা হয়। কারণ, তিনি জানতেন ওই হার্ডডিস্কে স্পর্শকাতর বিচারাধীনমামলার তথ্য আছে। যেখানে সম্ভাব্য সাক্ষীদের তালিকা ছিলো বলে তিনি শঙ্কাপ্রকাশ করেছিলেন।