জামায়াতকে বাদ দিয়ে হলেও বৃহত্তর ঐক্য গড়ার পক্ষে বিএনপি

 

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে ক্ষমতাসীনরা সাড়া না দেয়ায় বিচলিত নয় বিএনপি। কারণ আওয়ামী লীগ এই ডাকে সাড়া দেবে না এমনটা জেনেই কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছিলো বিএনপি। এবার তা প্রকাশ্যে আসায় অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম গড়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে দলটি। তবে জামায়াত ইস্যুতে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে পথ চলবে বিএনপি, যাতে জামায়াতকে কেন্দ্র করে অন্যদের হারাতে না হয়।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা জানান, বিএনপি চেয়েছিলো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা ঐক্যের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করছে। ফলে সন্ত্রাসীদের সাহস বাড়ছে, যা জাতির জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে না। তবে বিএনপিও বসে থাকবে না। সন্ত্রাসীদের চিরতরে নির্মূলে ক্ষমতাসীনদের আবারো ঐক্যের আহ্বান জানাবে। প্রয়োজনে জামায়াত ইস্যুতেও ছাড় দেবে। এরপরও যদি কাজ না হয় তাহলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির সাথে সহমত পোষণ করা রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে এক মঞ্চে আনার টার্গেট করা হয়েছে।

দলের অপর এক সিনিয়র নেতা জানান, সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়েছিলো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে সন্ত্রাস নির্মূলের পাশাপাশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের জন্য ক্ষমতাসীনদের বাইরের সবাইকে এক মঞ্চে আসার রাস্তাও পরিষ্কার করেছেন। ফলে বিএনপিই রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে। বিএনপি সূত্রমতে, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য খালেদা জিয়ার আহ্বানকে বাস্তবে রূপ দিতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্য পূরণে প্রাথমিক পরিকল্পনা হচ্ছে ‘সরকারের ব্যর্থতা, অপশাসন ও গণতন্ত্রহীনতার কারণে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে’ এমন বার্তা দেয়া এবং একটি কনভেনশন করা।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে এখন থেকে দলের তিনটি পৃথক টিম সমান্তরাল কাজ করবে। এগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক, নাগরিক ও কূটনৈতিক টিম দলে। রাজনৈতিক টিমে আওয়ামী লীগসহ সক্রিয় সব রাজনৈতিক দলের কাছে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসনের ঐক্যের আহ্বান তুলে ধরবে। পৃথকভাবে দেয়া হবে চিঠি। পাশাপাশি একই প্লাটফর্মে থেকে সন্ত্রাস ও গণতন্ত্রহীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কর্মসূচি গ্রহণের বিষয়ে মতামত নেয়া হবে। নাগরিক টিম দেশের বিশিষ্টজন ও বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করবে এবং তাদের কাছেও খালেদা জিয়ার আহ্বান তুলে ধরা হবে। দলের কূটনৈতিক টিম ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে বসে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলবেন। এই তিনটি টিম আগামী একমাস অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যাবে। খালেদা জিয়ার নির্দেশে পুরো বিষয়টি সমন্বয় করবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। টিমগুলোর কাজ শেষ হলে খালেদা জিয়া ঢাকায় জাতীয় কনভেনশনের ডাক দেবেন। আগামী মাসের শেষদিকে কনভেনশন করার প্রাথমিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে জামায়াতকে বাধা মনে করছে বিএনপি। সেজন্য প্রয়োজনে জামায়াতকে বাদ দেয়ার কথা চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। বিগত সময় জামায়াতের কারণে যারা বিএনপির জোটে আসতে চায়নি তাদের সাথে কথা বলে জামায়াতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে। এমন ইঙ্গিত অবশ্য এরই মধ্যে ২০-দলীয় জোটের সর্বশেষ বৈঠকে দিয়েছে বিএনপি। ১৩ জুলাইয়ের বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেন, বৃহত্তর ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে জামায়াতই সবচেয়ে বড় বাধা। জামায়াতের কারণেই বি চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর দল ঐক্যের আহ্বানে সাড়া দিতে চান না। জবাবে জামায়াত প্রতিনিধি ভোটের রাজনীতিতে তাদের অবস্থান নেই বললে খালেদা জিয়া বলেন, ভোটের রাজনীতিতে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় না হলেও জাতীয় রাজনীতিতে তাদের গুরুত্ব অনেক। এই বক্তব্যের পরই জোটের অন্য দলের শীর্ষ নেতারা জানান, জামায়াতকে বাদ দিয়ে হলেও বৃহত্তর ঐক্য গড়ার পক্ষে বিএনপি। আর জামায়াতসূত্র বলছে, বিএনপির এই মনোভাব বুঝতে পেরে তারাই ঐক্যে প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখার কৌশল নিতে শুরু করেছে।

বিএনপির বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের টার্গেটের বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয় ঐক্যের আহ্বানকে ক্ষমতাসীনরা প্রত্যাখ্যান করলেও হাল ছাড়বে না বিএনপি। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীনরা সাড়া না দিলে বিএনপি ২০-দলীয় জোটের বাইরে থাকা সমমনা দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা করে একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যারা একমত হবে, তাদের নিয়ে এই ঐক্য গঠন করা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সাল থেকে একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছিল বিএনপি। সে সময় দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে ছিলেন। কৃষক-শ্রমিক জনতা পার্টি, গণফোরাম, বিকল্প ধারা, জাসদ (রব), নাগরিক ঐক্যসহ কয়েকটি দলের সাথে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি।