জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে এগুচ্ছে দলটি : সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে নির্বাচনে যাবে বিএনপি

 

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে এগুচ্ছে বিএনপি। নির্ধারিত সময় বা এর আগে নির্বাচন দেয়া নিয়ে ক্ষমতাসীনরা যে কৌশলই অবলম্বন করুক না কেন, তা মোকাবেলা করবে দলটি। যে কোনো পরিস্থিতিতে সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে দলটি। সেভাবে এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দুই দফা সরকার-বিরোধী আন্দোলন ব্যর্থ হলেও বিএনপি বরাবরই সব কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেয়ায় বিএনপিও এখন আগামী নির্বাচনসংক্রান্ত কার্যক্রমে পূর্ণ মনোযোগ দেবে।

বিএনপি সূত্রমতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আগামীতে আর কাউকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেবে না বিএনপি। নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও রাখবে দলটি- এটাই এখন দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সরকারের ওপর যতটা চাপ সৃষ্টি করা যায়, তার সবকিছুই করার চেষ্টা থাকবে। তবে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন থেকে দূরে থাকবে না দলটি। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, তাদের কাছে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে নির্বাচনের বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের কৌশলের বিষয়টি মাথায় রেখে তারা পথ চলতে শুরু করেছেন। বিএনপি নেতারা মনে করেন, নির্ধারিত সময়ের আগে আওয়ামী লীগ নির্বাচন দেবে না। তবে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে আরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকতে সুবিধাজনক সময়ে একটি নির্বাচন দিতেও পারে। সেক্ষেত্রে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার চেষ্টা করবে তারা। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই বিএনপি নির্বাচন নিয়ে ছক তৈরি করছে।

দলের প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, ক্ষমতাসীনরা নিজেদের স্বার্থেই নির্ধারিত সময়ের আগেই একটি নির্বাচন দিতে পারে। এতে বিএনপির শীর্ষ নেতারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সে ব্যবস্থাও করতে পারে। আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের এসব নেতিবাচক কৌশল মোকাবেলা করার জন্য বিএনপি এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে। যে কোনো সময় নির্বাচন হলে যেন দাপটের সাথে অংশগ্রহণ করতে পারে সেই প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির সব ধরনের পরিকল্পনা হচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে সংগঠন শক্তিশালী করা, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে সরকারকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা, পরবর্তী নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করতে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়, আন্দোলনে জনগণের সহায়তা পেতে জনগুরুত্বপূর্ণ সব ইস্যুতে বিএনপির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং শীর্ষ নেতারা নির্বাচনের অযোগ্য হলে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র অথচ যোগ্য নেতাদের দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করা।
বিএনপি সূত্রমতে, নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে সর্বস্তরের কমিটি গঠনের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সারাদেশে ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার অধীন সব ক’টি ইউনিট নতুন নেতৃত্ব দিয়ে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠনে সরকারকে বাধ্য করার জন্য কর্মসূচি দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে চিঠিও দেয়া হবে। এরপরও ক্ষমতাসীনরা যদি সবার মতামত উপেক্ষা করে বর্তমান কমিশনের মতো ফের ‘পক্ষপাতমূলক নির্বাচন কমিশন গঠন’ করে, তবে জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি রাজপথে নামবে।

বিএনপি সূত্র জানায়, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের বিষয়টিকেও। দলের হাইকমান্ড উপলব্ধি করেছেন, বিগত সময়ে যোগ্য নেতাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি বিএনপির দাবির পক্ষে সমর্থন আদায়ে অভিজ্ঞ ও পরিক্ষিত নেতাদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি যার যার অবস্থান থেকে কাজ শুরু করেছেন। দায়িত্বের বাইরে যাতে কেউ অযাচিত কোনো কর্মকা- না করতে পারেন সেই বিষয়টিও হাইকমান্ড নিজেই তদারকি করছেন।
সূত্রমতে, আন্দোলনকে নির্বাচনের দাবি আদায়ের ‘সর্বশেষ বিকল্প’ হিসেবে হাতে রেখেছে বিএনপি। পরবর্তী আন্দোলনের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে তারা। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া হুট করে বড় ধরনের আন্দোলনে যাবে না দলটি। তৃণমূল থেকে শীর্ষ প্রতিটি পর্যায়ে আলোচনা করার পর তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলেই বড় আন্দোলনের দিকে যাবে। এর আগে দলের অস্তিত্বের স্বার্থে সাদামাটা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি।

আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভাবনার বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলে দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও সময়ের প্রবাহে তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। একই ভুল আর করতে চায় না বিএনপি। পরবর্তীতে যদি শীর্ষ থেকে শুরু করে অধিকাংশ নেতা নির্বাচন করার অযোগ্য হন বা দল ভাঙ্গার মতোও যদি কোনো ঘটনা ঘটে; তবুও আগামীতে তারা আর নির্বাচন থেকে বিরত থাকছেন না।
পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বিএনপি সবসময়ই প্রস্তুত। এমন নির্বাচন হলে যেকোনো সময় বিএনপি নির্বাচনে যেতে রাজি আছে। কিন্তু কারচুপির নির্বাচন বা আগে থেকে ফল ঠিক হওয়া নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি প্রস্তুত নয়।