জরুরিভাবে বরাদ্দ নেয়া হয়েছে স্যালাইন : মহল্লায় মহল্লায় ঘুরছে মেডিকেল টিম

 

সরবরাহকৃত পানি ৪০টি স্থান থেকে সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ : হাসপাতালের সৌচাগারগুলো অবশেষে হলো ব্যবহারের উপযোগী

কামরুজ্জামান বেল্টু: চুয়াডাঙ্গায় ডায়রিয়া পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। তবে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাদানের মান বৃদ্ধিতে নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে জীবনরক্ষাকারী কলেরা স্যালাইন দ্রুত বরাদ্দ পওয়া গেছে। পর্যাপ্ত পাওয়ার জন্য গতকালই ঢাকায় বিশেষ প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। সৌচাগার? ব্যবহারের উপযোগী হয়েছে। অপরদিকে ডায়রিয়া রোগী ও রোগীর লোকজনের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে বিজিবি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। পৌরসভা ইতোমধ্যেই ৪০টি স্থান থেকে পানির নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করেছে। মহল্লায় মহল্লায় মেডিকেল টিম গতকাল পরিদর্শন করেছে।

চুয়াডাঙ্গায় গত তিন দিনে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। একদিকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছে, অপরদিকে একের পর এক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ফলে উপচেপড়া ভিড় লেগেই আছে। ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী সামলাতে চিকিৎসক সেবিকাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে গতকাল গতপরশু ও তার আগের দিনের তুলনা কিছুটা কম ছিলো রোগী। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত 35 জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে 25 জনই চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার। ফলে পৌর সরবরাহকৃত পানিরই দোষ বলে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। অবশ্য এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সচিব কাজী শরিফুল ইসলাম জানান, পৌর এলাকার সরবরাহকৃত পানির ৪০ স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ঝিনাইদহ জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরে পরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যেই প্রেরণ করা হয়েছে। রিপোর্টটি হাতে পেলে সঠিক কারণ জানা যাবে।

এদিকে গতকাল বুধবার সকাল থেকেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের সৌচাগারে পানি সরবরাহের লাইন মেরামতের কাজ শুরু হয়। লাইটও লাগানো হয়েছে। ফলে সৌচাগার ব্যবহারের উপযোগিতা পেয়েছে। আর পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের সৌচাগার? সেটাও পরিষ্কার করা হয়েছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো স্যালাইন। খাওয়ার স্যালাইন যেমন পর্যাপ্ত মজুদ করা হয়েছে, তেমনই জীবনরক্ষাকারী কলেরা স্যালাইনও পর্যাপ্ত মজুদ করা হয়েছে। এসবই হয়েছে গতকাল চুয়াডাঙ্গার নবাগত সিভিল সার্জন ডা. পীতাম্বর কুমার রায়ের বিশেষ উদ্যোগে। তিনিই সকালে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকা পড়েই একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। তিনি বলেছেন, ভোরে মাথাভাঙ্গা পড়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ পথ্যর জন্য খুলনায় ছোটেন। সন্ধ্যায় ওষুধ পথ্য নিয়ে ফেরেন। খুলনার পথে রওনা হয়ে গাড়িতে বসেই তিনি পৌরসভাকে পৌর সরবরাহকৃত পানি পরীক্ষার তাগিদ দেন। বিজিবিকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য অনুরোধ জানান। দুপুর থেকে বিজিবি-৬’র বিশুদ্ধ পানি বহনকরা গাড়িতে করে হাসপাতালে পানি সরবরাহ শুরু হয়। হাসপাতালের মহিলা ও পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডসহ সকল সৌচাগার পরিষ্কারের বাড়তি উদ্যোগ নেয়ার জন্য আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে তাগিদ দেন। ফলে দুপুরের মধ্যেই হাসপাতালের চিত্র বদলাতে থাকে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ও রোগী লোকজনের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করে।

খুলনা থেকে ওষুধ পথ্য নিয়ে ফেরার পর গতরাতেই হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এ সময় চুয়াডাঙ্গায় হঠাত ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সিভিল সার্জন ডা. পীতাম্বর কুমার রায় বলেছেন, শুধু পানির জন্যই নয়, ময়লা আবর্জনার জন্যও ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে পারে। যেহেতু চুয়াডাঙ্গায় দেড় বছর আগে গণহারে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয় এবং তখন পৌর সরবরাহকৃত পানিই দায়ী বলে প্রমাণ পাওয়া যায়, সেহেতু এবার আগে ভাগেই ওই পানি দ্রুত পরীক্ষা করার জন্য পৌরসভাকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যেই পৌরসভা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। তাছাড়া যেকোনো প্রকারের পরিস্থিতি সমাল দেয়ার জন্য চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে। তবে তার আগে জনসাধারণকে বাড়তি সতর্ক হতে হবে। বাড়ির ও বাড়ির আশপাশের পরিবেশ যেমন স্বাস্থ্যকর করে রাখার বিষয়ে যত্নবান হতে হবে, তেমনই পচা-বাসি খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে আবহাওয়া পরিবতনের এই সময় বাসি খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।