জনগণ চাইলে আইন করে হরতাল বন্ধ করা যেতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের জনগণ চাইলে এবং সকল সংসদ সদস্য একমত হলে আইন করে হরতাল বন্ধ করা যেতে পারে। কেননা, আইন দিয়েই সবকিছু করা যায় না। আইন করে হরতাল বন্ধ হবে কি-না তা দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করে। তাই আইন করে হরতাল বন্ধের বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারবো না। হরতাল ও আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক ও বীভৎস কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে জনগণকেই সচেতন হতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কেননা, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগ পর্যন্ত যা করা হয়েছে তা কোনো রাজনীতি বা আন্দোলন নয়, সরাসরি মানুষ খুন। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের আরেক রূপ। গতকাল সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরপর্বে তিনি একথা বলেন। স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে এ সংক্রান্ত সম্পূরক প্রশ্ন করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এমএ হান্নান। জবাবে তিনি আরও বলেন, হরতাল ও আন্দোলনের নামে বীভৎস ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড আমরা দেখেছি। বাসে আগুন দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারা, জনগণের সম্পদ বিনষ্ট করা, মসজিদে আগুন দিয়ে পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ানোর ঘটনা কোন রাজনীতি বা আন্দোলন হতে পারে না, এটা সরাসরি মানুষ খুন করা। জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করলে কিভাবে এ ধরনের বীভৎস কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে? আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস চাই না। এগুলো দেশের অগ্রগতির প্রতিবন্ধক। আমরা চাইবো দেশের মানুষ সচেতন হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। জাসদের সংসদ সদস্য শিরীন আখতারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, আমরা এতোবেশি কাজ করেছি যে, কোনটা ছেড়ে কোনটা প্রচার করবো তা ভেবে পাই না। প্রচারের চেয়ে দেশের দ্রুত উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। তিনি তথ্যমন্ত্রীসহ সকল সংসদ সদস্যকে নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সামনে সরকারের বিপুল উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা পরনিন্দা করে যতোটা আনন্দ পাই, ভালো কাজের প্রচারের ক্ষেত্রে ততোটাই লজ্জা পাই। এটা ঠিক নয়।

সরকারি দলের মুহিবুর রহমান মানিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ঢাকা শহরের তীব্র যানজট নিরসনকল্পে ৮৯৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ওঠা-নামার জন্য ৩১টি ৱ্যাম্পসহ মোট ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম তিনটি ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রথম ধাপ- হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপ- বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং তৃতীয় ধাপ- মগবাজার থেকে কুতুবখালী, চট্টগ্রাম মহাসড়ক পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। দেশের পোশাক শিল্প নিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা জানান, গত মহাজোট সরকারের আমলে দেশের পোশাক শিল্পসহ সকল শিল্প সেক্টরকে রক্ষার লক্ষ্যে মালিক-শ্রমিক এবং ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে যে সকল পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণ করেছিলো তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় বর্তমান সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

এদিকে লিখিত প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানান, সম্প্রতি ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান বাংলাদেশ মানব উন্নয়নে এক ধাপ এগিয়ে এবং ১৮টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে অন্যতম। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এ সফলতা অর্জন করায় আমি আনন্দিত। তবে এ সফলতার পুরো কৃতিত্বই বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনসাধারণকে দিতে চাই। আওয়ামী লীগ জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে, জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে। তাই সফলতা/ব্যর্থতা মূল্যায়নের এ কাজটি আমি জনগণের ওপরই ছেড়ে দিতে চাই।