জঙ্গি নিয়ে নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছেন শাকিলা

স্টাফ রিপোর্টার: চট্টগ্রামে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে করা অধিকাংশ মামলা হাইকোর্টে চালাতেন বিএনপি নেতা সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা। স্বল্প খরচ ও বেশির ভাগ মামলায় আসামিপক্ষকে সুবিধা নিয়ে দিতে পারার কারণে তার কাছেই ছুটে যেতেন চট্টগ্রামের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মামলার আসামিরা। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলনে ভাঙচুর, নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে চট্টগ্রামে বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সহস্রাধিক মামলার মধ্যে অর্ধেকই পরিচালনা করতেন শাকিলা। এছাড়া ২০০৫ সালে দেশজুড়ে জঙ্গিরা যে সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছিলো ওই হামলার ঘটনায় চট্টগ্রামসহ সারাদেশে জেএমবি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলার মধ্যে সাড়ে তিনশ মামলা পরিচালনার ভারও ছিলো শাকিলার হাতে। জঙ্গিদের মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করা এবং এ সুবাদে জঙ্গি কার্যক্রম ও অর্থায়ন সম্পর্কেও অনেক কিছুই জানেন শাকিলা। শুধু জানেনই না তিনি নিজেই অর্থায়নের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছেন বলে দাবি ৱ্যাবের।

শাকিলার পরিবারের পক্ষ থেকে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে- জঙ্গি অর্থায়ন নয়, মামলা পরিচালনার জন্য জঙ্গিরা যে টাকা তাকে দিয়েছিলেন শাকিলা মামলায় সফল না হওয়ায় সেসব টাকা ফেরত দিয়েছেন জঙ্গিদের অ্যাকাউন্টে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদেও এমন কথা বলেছেন শাকিলা। তবে ৱ্যাব দাবি করছে, দেশব্যাপি জঙ্গি কার্যক্রম বিস্তার ও জঙ্গিদের অর্থায়ন সম্পর্কে আরও নতুন নতুন তথ্য দিয়েছেন শাকিলা। জঙ্গিদের বিদেশি অর্থদাতা মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী আল্লামা লিদবি ও আরেকজন বড় ভাই সম্পর্কেও শাকিলার কাছে তথ্য রয়েছে।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ৱ্যাব-৭ এর সিও মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জঙ্গি কার্যক্রম সম্পর্কে শাকিলার কাছ থেকে আমরা আরও নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে এখনই তা বলতে পারছি না। সময় হলে সব বলবো। শুক্রবারও দিনভর শাকিলা ও তার দু জুনিয়রকে ৱ্যাব সদর দফতরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ঢাকা থেকে বুধবার গ্রেফতারের পর বাঁশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে তাদের ৪ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। শুক্রবার তিন আইনজীবীকে দ্বিতীয় দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে ৱ্যাব বলছে, গ্রেফতার তিনজনই আইনজীবী হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদে তারা অনেক কিছুই কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। জঙ্গি অর্থায়ন নয়, মামলা পরিচালনার জন্য জঙ্গি ক্লায়েন্টদের দেয়া টাকা মামলা সফল না হওয়ায় ফেরত দেয়া হয়েছে- শাকিলার পরিবারের এমন বক্তব্য সম্পর্কে ৱ্যাবের সিইও বলেন, এটা ঠিক নয়। সময় হলে আমরা এর জবাব দেবো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় বহু মামলা হয়। এর মধ্যে ২০১৩ সালে জেলায় ২৮৭টি, নগরীতে ১২০টি, ২০১৫ সালে নগরীতে আড়াইশ ও জেলায় দেড় শতাধিক মামলা দায়ের হয়। ২০০৪ সালের সিরিজ বোমা হামলা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় দায়ের হয় ৫৯টির মতো মামলা। এসব মামলায় শাইখ রহমান, বাংলাভাই (পরে ফাঁসি কার্যকর হয়), জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার মোহাম্মদ, মিজান ওরফে বোমারু মিজানসহ শীর্ষ জঙ্গি আসামি রয়েছেন।