জঙ্গি দমনে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান শুরু

 

স্টাফ রিপোর্টার: এক সপ্তাহের অভিযান শুরু হবে আজ। অভিযানে পুলিশের সাথে থাকবে  বিজিবি, ৱ্যাব ও আনসার। কিছু ওসির উদাসীনতায় এসপিদের ক্ষোভ দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে আজ শুক্রবার থেকে সারাদেশে তালিকাভুক্ত জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ধরতে সপ্তাহব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানে নামছে পুলিশ। তবে অভিযানে পুলিশকে সহায়তা করবে বিজিবি, ৱ্যাব ও আনসার। যুক্তরাষ্ট্রে কনফারেন্স শেষে দেশে ফেরার পর গতকাল বৃহস্পতিবার আইজিপি একেএম শহীদুল হক পুলিশ সদর দফতরে এক জরুরি বৈঠকে এই সিন্ধান্ত দেন। বৈঠকে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যা ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলির ওপর করণীয় নির্ধারণ সম্পর্কে আলোচনা হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় শোকাহত, মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ পুলিশ অভিযানে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এই ঘটনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করছে পুলিশ। যে কোনো উপায়ে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে গ্রহণ করা হচ্ছে সব ধরনের পদ্ধতি। গত কয়েক দিনে রাজশাহী, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বগুড়া ও গাইবান্ধায় পুলিশ ও ৱ্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১০ জন নিহত হয়েছে। তবে এদের মধ্যে অন্তত ৫ জন জঙ্গি বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ সদর দফতরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম। পুলিশ সদস্য আক্রমণের শিকার হলেও তাদের পরিবার কখনো টার্গেট হয়নি। কিন্তু এবার সেটা হয়েছে। পুলিশ তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেবে।

গত এক বছরে যেভাবে লেখক, প্রকাশক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, বিদেশি, যাজক, পুরোহিতকে হত্যা করা হয়েছিলো, গত ৫ জুন সেই কায়দায়ই কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় এসপি বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে। বাবুল পুলিশ সদর দফতরে বদলি হয়ে ঢাকায় এলেও তার স্ত্রী ও দুই সন্তান চট্টগ্রামেই ছিলেন। ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দেয়ার সময় বাড়ির কাছেই আক্রান্ত হন মিতু। এই হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিদের সন্দেহ করলেও পাঁচ দিনেও খুনিদের শনাক্ত কিংবা গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

আইজিপির এ ঘোষণার আগে গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জঙ্গি গ্রেফতার করতে যেখানে প্রয়োজন সেখানেই কম্বিং অপারেশন চালানো হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সুপার অভিযোগ করেন, বেশ কিছু থানার ওসি জঙ্গিদের ব্যাপারে পুরোপুরি উদাসীন। তাদেরকে বারবার তাগিদ দেয়ার পরও তাদের কোনো তত্পরতা দেখা যায়না এমন অভিযোগের ব্যাপারে আইজিপি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যে এলাকায় সহিংসতা বা নাশকতার ঘটনা ঘটবে ওই এলাকার ওসিকে তার দায়দায়িত্ব নিতে হবে। তাছাড়া দায়িত্বে কোনো ধরনের শৈথিলতা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে জঙ্গিদের হালনাগাদ তালিকা করে পুলিশ সদর দফতরে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয় এসপিদের। পরে পুলিশ সুপারদের তালিকা ও অন্যান্য সংস্থার তালিকার সাথে সমন্বয় করে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। বৈঠকে বাবুল আক্তারের স্ত্রী খুনের ঘটনাকে আইজিপি অত্যন্ত নির্মম, বর্বরোচিত ও দুঃখজনক ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেন। আইজিপি দৃঢ় মনোবল নিয়ে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, টিম স্পিরিট নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সভার শুরুতে মিতুর স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় দেশব্যাপী জঙ্গিদের তালিকা হালনাগাদ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি বাড়ানো, ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশিংকে কার্যকর, আগন্তুক ও ভাড়াটিয়াদের ওপর নজরদারি বাড়ানো, বিদেশিদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আইজিপি বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণা জোরদার করতে হবে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য কমিউনিটি পুলিশিংকে কাজে লাগাতে হবে। সভায় অতিরিক্ত আইজিপি ফাতেমা বেগম, সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেন, রেলওয়ে রেঞ্জের অতিরিক্ত আইজিপি আবুল কাশেম, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, সকল কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি এবং ঢাকা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, বগুড়া, ঝিনাইদহ ও নাটোর জেলার পুলিশ সুপাররা উপস্থিত ছিলেন।