জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ছাত্র-শিক্ষকসহ অর্ধশত আহত

স্টাফ রিপোর্টার: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হল উদ্ধারের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে শিক্ষক ও ছাত্রসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সকাল ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। ৯টার দিকে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড় ও নয়াবাজার মোড় সড়ক অবরোধ এবং বিক্ষোভ করেন।

এর এক ঘণ্টা পরে শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার ইসলামপুরে হাজি সেলিমের দখলে থাকা তিব্বত হল উদ্ধারে রওনা হন। শিক্ষার্থীরা বাংলাবাজার ফুটওভার ব্রিজের নিচে পৌঁছুলে পুলিশ বাধা দেয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুলিশের বেরিকেড ভেঙে সামনে এগিয়ে যান। শিক্ষার্থীরা পাটুয়াটুলী নুরুল হক মার্কেটের সামনে পৌঁছুলে তাদের আবার বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

পরে শিক্ষার্থীরা সামনে আগাতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বাধা উপেক্ষা করে সামনে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকেন।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ রাবার বুলেট, ফাঁকা গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে শিক্ষার্থীরা পিছু হটেন। মুহুর্মুহু টিয়ারশেল নিক্ষেপে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় পুরো এলাকা। এ সময় পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে ছোটে এবং যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

পুলিশের গুলিতে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসিরউদ্দিন আহমেদসহ চার শিক্ষক গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। গুরুতর আহত হন ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী। আহতদের সুমনা হসপিটাল, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেলে ২০-২৫ জন পুলিশ আহত হয়েছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি সরকার আলী আক্কাস সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেও প্রবেশ করে পুলিশের রায়ট কার। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলা বন্ধ করতে অনুরোধ জানান।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীরা হল দখল করতে গেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধবে। এতে জানমালের ক্ষতি হবে। তাই টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়।

ঢাকা-৬ আসনের এমপি কাজী ফিরোজ রশিদ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, তোমরা আন্দোলন চালিয়ে যাও। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি তুলে ধরব। প্রয়োজনে সংসদে বিল উত্থাপন করবো। তিনি বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এ সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালানোর অভিযোগে লালবাগ জোনের ডিসি ও কোতোয়ালী থানার ওসির বিচার দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

আজ প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের মানববন্ধন: সোমবার সকালে প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. সরকার আলী আক্কাস বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে সোমবার সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসে কালো ব্যাজ ধারণ, শোভাযাত্রা করে প্রেসক্লাবে গিয়ে মানববন্ধন করা হবে। এছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লালবাগ জোনের ডিসি হারুন এবং কোতোয়ালী থানার ওসি মনিরুজ্জামানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হলটি ১৯৮৮ সালে দখলে নেন ঢাকা-৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিম। তিব্বত হলসহ বেদখলে থাকা সব হল উদ্ধারের দাবিতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।