ছেলের আশায় পর পর ৬ মেয়ে : শেষটাকে কোলে নিলেন না মা!

কামরুজ্জামান বেল্টু/আশিক পারভেজ/শরিফ হোসেন শান্ত: ছেলের আশায় পর পর পাঁচ মেয়ে। ৬ষ্ঠ সন্তানও কন্যা। প্রসবের পরপরই তাকে আর কোলে না নিয়ে ফিরে গেলেন প্রসূতি মা। ঘটনাটি গত শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ঘটে।

প্রথমবারের পর দ্বিতীয় বার থেকে প্রতিবারই প্রতিজ্ঞা, ছেলে হোক মেয়ে এটাই শেষ। কিন্তু না, আবারও ইচ্ছে জাগে। অভাবের সংসারে একের পর এক সন্তান আসে। সকলেই কন্যা। তাই ৬ষ্ঠ সন্তানও যখন কন্যা হলো তখন তাকে আর চুয়াডাঙ্গা সদর  হাসপাতাল থেকে নিলেন না প্রসূতি মাসহ তার লোকজন। তারপর? অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে অনেক কথা।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সদ্যজাত কন্যাসন্তান রেখে বাড়ি ফেরা প্রসূতির ঠিকানা হাসপাতালের খাতায় লেখা আছে, রূপালী (৩০), স্বামী জাফর আলী, বাড়ি হানুরবাড়াদী, ইউনিয়ন শঙ্করচন্দ্র। থানা জেলা চুয়াডাঙ্গা। কন্যা সন্তান হওয়ার পর তা না নিয়ে ফেলে যাওয়া ওই প্রসূতির সন্ধানে গতকাল হানুরবাড়াদী গ্রাম তন্নতন্ন করে খুঁজেও ওই নামের কোনো প্রসূতির হাদিস মেলেনি। রূপালীর স্বামীর নামের সাথেও তেমন কারো মিল পাওয়া যায়নি। তা হলে কি হাসপাতালে লেখা ঠিকানাটি ভূয়া? আগে থেকেই কি তা হলে সন্তান না নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্যই ভুয়া ঠিকানা লেখা? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই সেই নবজাতকের হদিস শুরু হয়। কেউ তো তেমন তথ্য দিতেই চাননি। রহস্যজনক কারণে অধিকাংশেরই মাঝে ছিলো গোপন করার মানসিকতা। শেষ পর্যন্ত জানা যায়, সেই নবজাতককে নিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা তালতলার একলাস নামের এক ব্যক্তির শালিকা।  একলাসের স্ত্রীর মাধ্যমেই তার নিঃসন্তান শালিকা ওই নবজাতককে নিয়ে নিজের সন্তান হিসেবে বড় করে তোলার স্বপ্নে এখন বিভর।

একলাসের মাধ্যমেই জানা গেছে, রূপালী খাতুন যখন তার সন্তান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেখে চলে যান, তখনই তার পূর্বের ৫ কন্যা সন্তানের কথা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তার বাড়ি হানুরবাড়াদী নয়, মেহেরপুরের কোলাগ্রামে। স্বামী অসুস্থ। এক ছেলের আশায় আশায় ৫ কন্যার পর ভেবেছিলো এবার হয়তো ছেলে হবে, হলো না। তাই সন্তান প্রসবের পরপরই যখন ফেলে রেখে চলে যেতে চায়, তখনই লোকমারফত খবর পেয়ে একলাস তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে নিঃসন্তান শ্যালিকার জন্য তা গ্রহণ করেন। শ্যালিকার বাড়ি কোথায়? কন্যা নবজাতক কেমন আছে? এসব প্রশ্নের জবাবে একলাস বলেছেন, ওদের বাড়ি হরিণাকুণ্ডু থানাপাড়ায়। সেখানে ভালোই আছে। তা ছাড়া মেয়েটা বেশ ফুটফুটে। ওর কোলে (একলাসের শ্যালিকা) থাকলে ভালোই হবে।

কিন্তু ছেলের আশায় যে মা একে একে ৬ সন্তান জন্মদিলো, সেই মায়ের নিকট কি জন্মনিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কোনো প্রতিনিধি এতোদিনে একবারও পৌঁছেছেন? তা ছাড়া কন্যার প্রতি নাকসিটকানিই বা কেন? চুয়াডাঙ্গা রেলবস্তির এক দরিদ্র প্রসূতি গত ঈদের দিন মাতৃসদনে কন্যা সন্তান প্রসবের পর তুলে দেন অন্যের কোলে। ওই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলতে না চলতে আবারও কন্যা সন্তান ফেলে বাড়ি ফেরা এক প্রসূতি উঠে এলেন আলোচনায়।