ছামছদ্দিন খোকন ও নাজমুলের ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর

চুয়াডাঙ্গার খাসপাড়ায় রিপন খুনের ঘটনায় আসামিদের রিমাণ্ড চেয়ে আদালতে আবেদন

বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সদরের খাসপাড়ায় রিপন খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে রিমান্ড চেয়ে পুলিশ আবেদন করেছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে খুনি মঈনের পিতা ছামছদ্দিন, ভাই খোকন ও সহযোগী নাজমুলকে ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বিজ্ঞ আদালত। রিপন খুনের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আসামিদের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলে পুলিশ মনে করছে। আদালতের পরবর্তী নির্দেশনা পেলে গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে আনা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। যদিও খুনি মঈন বিজ্ঞ আদালতের বিচারকের নিকট খুনের কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এদিকে রিপন খুনের ঘটনা ২৫ দিন অতিবাহিত হলেও পরিবারের লোকজন রয়েছে শোকার্ত। কারণ রিপন ছিলো ওই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
গত ১ অক্টোবর রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়নের খাসপাড়া গ্রামের সরকার পাড়ার শামসুল হক ওরফে ছামছদ্দিনের ছেলে মুহিন উদ্দিন ওরফে মঈন স্ত্রীর সাথে পরকীয়া সম্পর্কের সন্দেহে মোতালেব সরকারের ছেলে চাচাত ভাই রিপনকে (৩০) পরিকল্পিতভাবে খুন করে। পরের দিন সোমবার সকাল ৬টার দিকে মানচে গাড়ির বিলের পাট জাগের নিচ থেকে রিপনের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরপরই ব্যাগপত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় মঈনের মা মর্জিনা বেগম, স্ত্রী মৌসুমি খাতুন ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শান্তনা খাতুনকে আটক করে এলাকাবাসী। ঘটনার ১২ ঘণ্টার মাথায় চুয়াডাঙ্গা গয়েন্দা পুলিশের চৌকস অফিসার এসআই ইব্রাহীম ও আশরাফ আলী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খুনের মূলহোতা মঈনকে জীবননগরের পেয়ারাতলা নামকস্থান থেকে আটক করেন। এ ঘটনার ২ দিনের মাথায় রিপনের সেজোবোন নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে ছামছদ্দিন, ছেলে খুনি মঈন ও খোকন এবং সড়াবাড়িয়া গ্রামের আক্কাচ আলীর ছেলে নাজমুলসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলার সকল আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আকটকৃতদের মধ্যে মামলার প্রধান আসামি মঈন বিচারকের নিকট খুনের কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলোক জবানবন্দিও দিয়েছেন। মামলার তদন্তকারী অফিসার ডিবি পুলিশের এসআই ইব্রাহীম খলিল গত ৪ দিন আগে বাকি আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে বিজ্ঞ আদালতের নিকট আবেদন করেন। গতকাল বুধবার বিজ্ঞ আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হালিম আসামি ছামছদ্দিন, খোকন ও নাজমুল প্রত্যেকের ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদেশনামা পেলে রিপন খুনের প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনে আসামিদের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে আনবেন বলে মামলার তদন্তকারী অফিসার জানান।
ঘটনার ২৫ দিন অতিবাহিত হওয়ায় পর স্থানীয়রা জানান, মঈনসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা রিপনকে খুন করে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। পরে মঈন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বিষয়টি বাড়িতে এসে বলে এবং বাড়ির সদস্যদের সাথে করে নিয়ে গিয়ে রিপনের লাশ গুমকরার উদ্দেশে পাটের জাগের নিচে লুকিয়ে রাখে। সেই সাথে মঈন পরনের রক্তে ভেজা জামাকাপড় পাল্টিয়ে নতুন জামাকাপড় পরে ভোররাতের দিকে বাড়ি থেকে সটকে পড়েন। রিপনকে মঈন খুন করেছে বিষয়টি পরিবারের লোকজন জানতে পেরে সকালে সূর্য ওঠার আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কারণ যেখানে রিপনকে খুন করা হয়েছে সেখানে মঈনের মা মর্জিনার সেন্ডেল পড়ে ছিলো। ঘটনাস্থল থেকে মঈনের বাড়ি ২শ গজ দূরে। খুনের সাথে মঈনের মা, স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সরাসরি জড়িত না হলেও খুন পরবর্তী লাশগুম এবং মঈনকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে।
এদিকে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে খুনি মঈন বন্ধু নাজমুলের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে বলেও এলাকাবাসী মনে করছে। তবে পুলিশ রিমা-মঞ্জুর হওয়া আসামিদের আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করলে খুনের সাথে কারা জড়িত, খুন পরবর্তী লাশগুম করায় কারা জড়িত, খুনিদের পালিয়ে যেতে কারা সহযোগিতা করেছে সব জট খুলবে বলেও এলাকাবাসী মনে করছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী অফিসার বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেলে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে রিপন খুনের প্রকৃত ঘটনা উদ্ধার হবে। এদিকে রিপন খুনের ঘটনার পর থেকে পরিবারের লোকজন রয়েছে শোকার্ত। কারণ রিপন ছিলো ওই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।