ছাত্রসমাজের স্মারকলিপি পেশ : জনস্বার্থে দাবি-দাওয়া দ্রুত পূরণের আহ্বান

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অনিয়ম চুরি ও দালালচক্রের অপতৎপরতা এবং ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের অসময়ে সাক্ষাত বন্ধসহ বিভিন্ন দাবি

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল দালালমুক্ত ও জরুরি বিভাগে মহিলা কর্মচারী নিয়োগসহ ৮ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি পেশ করেছে আন্দোলনরত ছাত্রসমাজ। গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের নিকট স্মারকলিপি পেশ করে জনস্বার্থে দাবিগুলো দ্রুত পূরণের আহ্বান জানানো হয়। জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি পেশের আগে কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে ছাত্রসমাজ।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. জানিফ স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কিছু অনিয়ম, চুরি, ছিনতাই, দালাল চক্রের দৌরাত্ম বেড়ে যাওয়ায় এর প্রতিবাদে আমরা ছাত্রসমাজ বিভিন্ন কমসূচি গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যেই মানববন্ধন কমসূচি পালন করা হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সিভিল সার্জনের দৃষ্টিগোচেরও নেয়া হয়েছে। এরপরও সিভিল সার্জন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। সে কারণে আমরা ৮ দফা দাবি লিখিতভাবে পেশ করছি।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল দালালমুক্ত করতে হবে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে প্রতিনিয়ত রোগী ও তার সাথে আগত লোকদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র, টাকা পয়সা চুরি হচ্ছে। চুরি রোধে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধি অফিস চালাকালীন সময়ে অফিসে প্রবেশ করে হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে সাক্ষাত বন্ধ করতে হবে। ইমার্জেন্সিতে মহিলা কর্মচারী নিয়োগ করতে হবে। হাসপাতাল ও হাসপাতালের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের খাবারের মান বৃদ্ধিসহ খাবার সরবরাহে অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। হাসপাতালে আগত রোগী ও তাদের সাথে থাকা ব্যক্তিদের নিরাপত্তার স্বার্থে সকল সময় পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করতে হবে। রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ওষুধ বাইরে বিক্র বন্ধসহ ওই ওষুধ যাতে গরিব অসহায় রোগীরা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বরাবর পেশকৃত স্মারকলিপির অনুলিপি স্বাস্থ্য বিভাগের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনকেও দেয়া হয়। স্মারকলিপি পেশকালে ছাত্রসমাজ নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জানিফ, জাহাঙ্গীর হোসেন, জানি, জ্যাকি, বাবু, ইমদাদ, সুজন, বিপ্লব, নয়ন, মিলন, রানা, ইরান, আক্তার, সুমন, শাওন, টোটন, জাকির, হাসিবুল, আল আমিন, স্বপন ও মিল্টনসহ অনেকে। স্মারকলিপি গ্রহণকালে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন ছাত্রসমাজের দাবি-দাওয়াগুলোকে গুরুত্বসহকারে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সিভিল সার্জন স্মারকলিপি গ্রহণকালে তিনি বলেন, লিখিতভাবে অভিযোগগুলো পাওয়ার পর এখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা আন্তরিক হবো। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অর্থপেডিক কনসালটেন্ট ডা. আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি দাবি দাওয়ার প্রতি তার সমর্থন জানিয়ে বলেন, আমরা যারা হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি তারা চাই চিকিৎসা সেবাদানের সুষ্ঠু পরিবেশ। দালালমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলে অবশ্যই হাসপাতালে আগত রোগী সাধারণ প্রতারণানার হাত থেকে রক্ষা পাবে। অনাকাঙ্খিত বহিরাগত রুখতে পারলে চুরি ছিনতাই হ্রাস পাবে। মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আহ্বান করে না, অনেকেই আছেন যারা ভিড় জমিয়ে চিকিৎসাদানের সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত করে। এখন থেকে এদিকে সকল চিকিৎসক আন্তরিক হবে বলে আমার বিশ্বাস। রিপ্রেজেন্টিটিভরাও এদিকে বিশেষ যত্মবান হলে আমরা চিকিৎসাদানের সুষ্ঠু পরিবেশ পাবো। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাসুদ রানা বলেন, অনিয়ম তো একদিনে ব্যাপকতা পাইনি। আমরা অনিয়ম দূর করতে আন্তরিক। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু দৃষ্টি অবশ্যই হাসপাতালের পরিবেশ ফেরাতে সহায়ক হবে।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগী ও রোগীর লোকজন একের পর এক চুরি ও ছিনতাই এবং দালালচক্রের অপতৎপরতায় প্রতারিত হওয়ার এক পর্যায়ে ছাত্রসমাজের ব্যনারে ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল আন্দোলনকারীরা শোভাযাত্রাসহকারে স্মারকলিপি পেশ করে।