চেয়ারম্যান পদে ৬ প্রার্থী : প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে চতুর্মুখী

আলমডাঙ্গার নাগদাহ ইউপি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আগামী ২৯ মার্চ

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ও আইলহাস ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে ইউনিয়ন দুটির সকল গ্রামে প্রচার প্রচারণা এখন তুঙ্গে। নাগদাহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬ প্রার্থী। বর্তমান চেয়ারম্যান দারুস সালাম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, আবুল হোসেন, মকলেছুর রহমান জোয়ার্দ্দার, আলমগীর হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম। তবে প্রার্থী ৬ জন হলেও এদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে চতুর্মুখী। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মকলেছুর রহমান জোয়ার্দ্দার, স্বতন্ত্রপ্রার্থী জামায়াত নেতা দারুস সালাম ও জাকের পার্টির মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের মধ্যে।
দারুস সালাম: বর্তমান চেয়ারম্যান দারুস সালাম। তিনি জামায়াত সংশ্লিষ্ট হলেও এবারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। খেজুরতলা, ভেদামারী ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। কেন এবারও ইউনিয়নবাসী তাকেই নির্বাচিত করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে সফলভাবে সেবা পৌঁছে দিতে পেরেছি। সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করেছি। সাধারণ মানুষের সাথে সুসম্পর্ক ধরে রাখার চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়েছি। সকলকে যথার্থ সম্মান করেছি। তিনি গত টার্মে ভোটারদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পালনে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। এই সকল কারণে মানুষ আবার তাকেই নির্বাচিত করবেন বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে এবার নির্বাচিত হলে অন্যান্য কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি শিক্ষায় আইসিটির ব্যবহার নিশ্চিত ও মাদকমুক্ত ইউনিয়ন বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দেবেন। তিনি মনে করেন – শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। সে কারণে ইউনিয়নে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতেও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে চান।
আবুল কালাম আজাদ: আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। তিনি ইতঃপূর্বে ৩বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। দলের বাইরেও এলাকায় তার একটা ব্যক্তিইমেজ রয়েছে। মানুষ এবার কেন তাকে নির্বাচিত করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন – তিনি বলিষ্ঠ আওয়ামীলীগ নেতা। সে কারণে বিভক্তি ও মান অভিমান ভুলে সকল নেতাকর্মী তাকে নির্বাচিত করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবেন। তিনি ইতঃপূর্বে তিনবার যখন চেয়ারম্যান ছিলেন, সে সময় তার যতেষ্ট সুনাম ছিলো। সেই জনপ্রিয়তা এবারের ভোটে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন তিনি। বর্তমান সরকার সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এমনকি নাগদাহ ইউনিয়নেও যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মানুষ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকেই ভোট দেবেন বলে বিশ্বাস করেন। তাছাড়া ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক ও সততার কারণেও দলের বাইরের মানুষও তাকে ভোট দেবেন বলে বিশ্বাস করেন। তিনি নির্বাচিত হলে সরকারের উন্নয়নের ধারা ত্বরান্বিত করবেন। মাদক ও বাল্যবিয়েমুক্ত ইউনিয়ন গঠনে অধিক গুরুত্ব দেবেন বলে জানিয়েছেন।
মকলেছুর রহমান জোয়ার্দ্দার: মকলেছুর রহমান জোয়ার্দ্দার বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। এবারই প্রথমবারের মতো নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। প্রথমবার প্রার্থী হয়েই তিনি বিজয় ছিনিয়ে নিতে আশাবাদী। কেন তাকে মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন – সব ধরনের ভয়ভীতি ও লোভের ঊর্ধ্বে থেকে সাধারণ মানুষের পাশে থাকা ও সেবা করার ভিত্তি শুধু তার আছে। অন্যায়ের প্রতি আপসহীন ও সৎ হিসেবে এলাকায় তার একটা পরিচিতি আছে। সে কারণে সাধারণ মানুষ তাকে ভোট দেবেন। তাছাড়া তার ইউনিয়ন বিএনপির ঘাঁটি দাবি করে তিনি বলেছেন, বিএনপির সকল গ্রুপ এক হয়ে তাকে বিজয়ী করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়নের সকল বিএনপি নেতাকর্মী তাকে ভোট দেবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি। রাজনৈতিক দাপটে কিংবা আর্থিক সচ্ছলতার কারণে তিনি কখনও মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করেননি। কারো সম্মানহানি হয় এমন আচরণ করেননি। সে কারণে মানুষ তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
তিনি নির্বাচিত হলে- কোন ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনা না করে সরকারি সকল অনুদান ও সাহায্যের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করবেন। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবেন। দুর্নীতিমুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। সকলের প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত করবেন।
জাহাঙ্গীর আলম: জাহাঙ্গীর আলম বিশ্ব জাকের পার্টির মনোনীত প্রার্থী। তিনি এবারই প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কেন তাকেই মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন? এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, তিনি গ্রাম্য ডাক্তার। পেশাগত কারণে তিনি প্রান্তিক মানুষের আপনজন হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি তাদের বিপদে আপদে পাশে থাকেন। সেই কারণে মানুষ তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে প্রত্যাশা করেন। নির্বাচিত হলে তিনি দুর্নীতিমুক্ত ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে আন্তরিকভাবে কাজ করবেন। অসহায় মানুষের পাশে থাকবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আলমগীর হোসেন: তিনি এই প্রথমবারের মতো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কেন মানুষ তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমি তরুণ সমাজের প্রতিনিধি। তরুণ প্রজন্মের কন্ঠস্বর। সে কারণে তরুণ ভোটারদের মূল আকর্ষণ তিনি। তরুণদের স্বপ্ন বাস্তরায়নে তিনিই সবচে’ যোগ্য বলে মনে করেন। তাছাড়া তার কোনো পিছুটান নেই। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার সাথে নিজের স্বপ্ন মিশিয়ে নিজেকে একাকার করে নিয়েছেন। তিনি নির্বাচিত হলে সবচে প্রাধান্য দেবেন তরুণ সমাজকে। তরুণসমাজ যাতে বিপদ্গামী না হয়, তারা যাতে সঠিক গাইডেন্স পায় সে ব্যবস্থা করবেন। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে যুব ও তরুণ সমাজকে রক্ষা করবেন। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন।
আবুল হোসেন: আবুল হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনিও এবারই প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কেন তাকেই মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন? এ প্রশ্ন তাকেও করা হয়। জবাবে আবুল হোসেন বলেন, জনপ্রতিনিধি হওয়ার প্রবল ইচ্ছে থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়েছি। জনগণের আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে কখনও কিছু করিনি। তাদের ইচ্ছের অসম্মান করেননি। সব সময় তাদের চাওয়া-পাওয়ার মূল্যায়ন করেছেন। তাদের চাওয়া-পাওয়ার সাথে সঙ্গতি রক্ষা করে চলেছেন। সে কারণেই জনগণ তাকে মূল্যায়ন করবেন। তাকেই নির্বাচিত করবেন। নির্বাচিত হলে তিনি সবচে’ গুরুত্ব দেবেন মেহেনতি মানুষকে। তাদের কল্যাণের দিক লক্ষ্য রেখেই তিনি সকল কাজ করবেন।
গতকাল নাগদাহ ইউনিয়নের সকল গ্রাম ঘুরে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার হাল হকিকত জানার চেষ্টা করা হয়। সে সময় স্থানীয় অনেক ভোটারের সাথে কথা হয়। কিন্তু বর্তমানে ভোটার সাধারণ খুবই সচেতন। কাকে ভোট দেবেন এমন প্রশ্ন সরল সোজা ভোটারও কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। তবে শিক্ষিত কয়েকজন তরুণের সাথে কথা হয়। তারা কাকে ভোট দেবেন এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও স্পষ্ট করে জানান – রাজনৈতিক দাপট দেখাবেন না, অপেক্ষাকৃত সৎ, সাধারণ মানুষকে সম্মান জানাতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না। এমন প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। তবে সেই প্রার্থীকে রাষ্ট্র প্রদত্ত সকল অধিকার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান করার সক্ষমতা থাকতে হবে। এমন যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকেই ভোট দেবেন তারা।
সত্যিকার অর্থে চেয়ারম্যান হিসেবে কে হবেন বিজয়ী তা নিশ্চিত হতে আমাদেরকে ২৯ মার্চ সন্ধ্যাবধি অপেক্ষা করতেই হবে।
ছবি: দারুস সালাম, আবুল কালাম, মোখলেছুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, আলমগীর হোসেন, আবুল হোসেন।