চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ৪ জন হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ত্রিমুখী

জমে উঠেছে আলমডাঙ্গার আইলহাস ইউপি নির্বাচন প্রচারা-প্রচারানা

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ও আইলহাস ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে ইউনিয়ন দুটির সকল গ্রামে প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে। আইলহাস ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ জন প্রার্থী। বর্তমান চেয়ারম্যান মিনাজ উদ্দীন বিশ্বাস, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক, আব্দুল ওহাব মাস্টার ও রফিকুল হাসান। তবে প্রার্থী ৪ জন হলেও এদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ত্রিমুখী। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মালেক, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আব্দুল ওহাব, স্বতন্ত্রপ্রার্থী রকিবুল হাসান ও বর্তমান চেয়ারম্যান মিনাজ উদ্দীন বিশ্বাসের মধ্যে মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
মিনাজ উদ্দীন বিশ্বাস: বর্তমান চেয়ারম্যান দারুস সালাম। তিনি গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর দলীয় মনোনয়নের ছিকে ছেড়েনি তার ভাগ্যে। এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে। কেন এবারও ইউনিয়নবাসী তাকেই নির্বাচিত করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি সকলকে প্রাপ্য সম্মান দিয়েছেন। কাউকে অসম্মান করেননি। জনগণের দোরগোড়ায় তিনি উন্নয়ন পৌঁছে দিয়েছেন। শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট উন্নয়ন করেছেন। ১৬টি গ্রামেই তার উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। চেয়ারম্যান হিসেবে সফলভাবে সেবা পৌঁছে দিতে পেরেছেন। সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন। সাধারণ মানুষের সাথে সু-সম্পর্ক ধরে রাখার চ্যালেঞ্জে সফলভাবে জয়ী হয়েছেন। এই সকল কারণে মানুষ আবার তাকেই নির্বাচিত করবেন বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে এবার নির্বাচিত হলে অন্যান্য কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি অসমাপ্ত কাজের বাস্তবায়ন করবো। তিনি মনে করেন শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। সে কারণে ইউনিয়নে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতেও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে চান।
আব্দুল মালেক: আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রাথী অ্যাড আব্দুল মালেক। তিনি ইতঃপূর্বে ১ বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। মানুষ এবার কেন তাকে নির্বাচিত করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এলাকায় যে উন্নয়ন করেছে তা বিগত ৩০ বছরেও হয়নি। সে কারণে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মানুষ তাকেই ভোট দেবেন। সারাবিশ্বে এখন শেখ হাসিনার সরকার মডেল। তাই জনগণ তাকে ভোট দেবেন। এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতেই তাকে ভোট দেবেন। অতীতে তিনি ১০ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন। তখন কোনো অবিচার হয়নি, অত্যাচার হয়নি, মাদকমুক্ত করেছি। এলাকার মানুষ পরিপূর্ণভাবে জীবনটাকে উপভোগ করতে পেরেছেন, তাই আবার তারা অ্যাড আব্দুল মালেককেই ভোট দেবেন।
তিনি নির্বাচিত হলে ইউনিয়নভুক্ত এলাকাকে পৌর এলাকার মত স্যানিটেশনের আওতায় আনবো। বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করবো। সড়কবাতির ব্যবস্থা করবো।
আব্দুল ওহাব মাস্টার: আব্দুল ওহাব মাস্টার বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। ইউনিয়ন বিএনপির বলিষ্ঠ নেতা। এবার তিনি বিজয় ছিনিয়ে নিতে আশাবাদী। কেন তাকে মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হিসেবে এলাকায় দলকে সুসংহত করেছেন মূলত বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করতে। রাজনীতির কারণে দীর্ঘ ৩৫ বছর সাধারণ মানুষের সাথে সু-সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এখন সেই সাধারণ মানুষ তাদের নিজেদের প্রয়োজনে আপন মানুষ হিসেবে তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। শিক্ষক হিসেবে এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রেখেছেন। সেই বিবেচনা থেকেও তাকে ভোট দেবেন অভিভাবক শ্রেণি। তরুণ ও যুব সম্প্রদায়ের বৃহৎ অংশই তার ছাত্র-ছাত্রী। তাদের অধিকাংশ তাকে অবমূল্যায়ন করবেন না বলেই বিশ্বাস করেন। বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের নানা ব্যর্থতা, সরকার দলীয় নেতাদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অন্যায় অত্যাচারের কারণেও সাধারণ মানুষ তাকেই ভোট দেবেন।
তিনি নির্বাচিত হলে সর্বাগ্রে ঘোলদাড়ি এলাকায় একটা কলেজ প্রতিষ্ঠান করতে চান। শিক্ষক হিসেবে তিনি বিশ্বাস করেন যে শিক্ষায় জাতির মেরুদ-। সে কারণে এলাকায় শিক্ষারমান ও প্রসার বৃদ্ধির জন্য বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। কোনো ধরণেনর রাজনৈতিক বিবেচনা না করে সরকারি সকল অনুদান ও সাহায্যের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করবেন। বৈষম্যহীন সমাজ গঠণে ভূমিকা রাখবেন। দুর্নীতিমুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। সকলের প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত করবেন।
রকিবুল হাসান: তিনি এই প্রথমবারের মত স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কেন মানুষ তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি জনগণের পাশে থাকেন। তাকে যে কোনো সময় ডাকলে ছুটে যান। সে কারণে সাধারণ মানুষ তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।
তিনি নির্বাচিত হলে সবচেয়ে প্রাধান্য দেবেন সাধারণ জনগণকে। তাদের বাড়ি গিয়ে সেবা দেবেন। তাদের বিপদ-আপদে পাশে থাকবেন। পুরো ইউনিয়ন লাইটিং করে দেবেন। হাটবাজারগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করবেন। শিক্ষাভাতা চালু করবেন।
গত ২০ মার্চ আইলহাস ইউনিয়নের সকল গ্রাম ঘুরে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার হাল হকিকত জানার চেষ্টা করা হয়। সে সময় স্থানীয় অনেক ভোটারের সাথে কথা হয়। কিন্তু বর্তমানে ভোটারা খুবই সচেতন। কাকে ভোট দেবেন এমন প্রশ্ন সরল সোজা ভোটারও সযতেœ এড়িয়ে গেছেন। তবে শিক্ষিত কয়েক জন তরুণের সাথে কথা হয়। তারা কাকে ভোট দেবেন এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও স্পষ্ট করে জানান রাজনৈতিক দাপট দেখাবেন না, অপেক্ষাকৃত সৎ, সাধারণ মানুষকে সম্মান জানাতে কুষ্ঠাবোধ করবেন না এমন প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। তবে সেই প্রার্থীকে রাষ্ট্র প্রদত্ত সকল অধিকার প্রাপ্তীর নিশ্চয়তা বিধান করার সক্ষমতা থাকতে হবে। এমন যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকেই ভোট দেবেন তারা। সত্যিকার অর্থে কে হবেন বিজয়ী তা নিশ্চিত হতে আমাদেরকে ২৯ মার্চ সন্ধ্যাবধি অপেক্ষা করতেই হবে।