চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে কলেজছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ ঘটনায় মানবতা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ : ভিকটিমের বর্ণনা মতে অপরাধী শনাক্ত : আজ আদালতে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগীর সাথে এক কলেজছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় আজ মামলা হচ্ছে। একটি চক্র কলেজছাত্রীকে জিম্মি করে হাসপাতালের দোতলার পরিত্যক্ত গোপন একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে তার কথিত প্রেমিকের সামনেই ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষিত কলেজছাত্রীর পরিবার ঘটনার বিচার চায়। কিন্তু তারা মামলা করতে রাজি হননি। এ কারণে চুয়াডাঙ্গা মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বাদী হয়ে আদালতে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি মাথাভাঙ্গাকে জানিয়েছেন, ওই চক্রের কয়েকজন অপরাধী যুবককে ইতোমধ্যে শনাক্ত করা গেছে। তাদের নামেই মামলা করা হবে।

ধর্ষিত কলেজছাত্রীর কথিত প্রেমিক চুয়াডাঙ্গার পিতম্বরপুর গ্রামের মিঠুন জানান, ঘটনাটি গত ১৭ মে মঙ্গলবার রাতের। আলমডাঙ্গা উপজেলার বড় গাংনী গ্রামের কৃষক পরিবারের মেয়ে কলেজছাত্রী চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আসেন তার অসুস্থ খালাতো ভাইকে দেখতে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে তারা দু’জন কথা বলছিলেন। এ সময় ৪ যুবক তাদেরকে ধরে নিয়ে দ্বিতীয় তলায় একটি পরিত্যক্ত কক্ষে আটকে অনৈতিক কাজের অপবাদ দিয়ে বেদম মারধর করে। তাদের কাছ থেকে যুবকরা মোবাইলফোন, কানের দুল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর মিঠুনের গলায় ছুরি ধরে তার সামনেই কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করে বেলগাছি গ্রামের আসিফ নামের এক যুবক। পরে ওই যুবকরা হুমকি দিয়ে দেয় ঘটনা যেন তারা কাউকে না জানায়।

গত মঙ্গলবার ওই প্রতারকচক্রটি মোবাইলফোনে কলেজছাত্রীকে দৈহিক মিলনের প্রস্তাব দেয়। কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে ধর্ষণের ঘটনা সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয় তারা। এরপরই অসহায় কলেজছাত্রী আত্মহত্যার জন্য বিষপান করেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপরই বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। এদিকে গতকাল বুধবার ওই কলেজছাত্রীর বাড়িতে সরেজমিনে দেখতে যান চুয়াডাঙ্গার মানবতা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার। কলেজছাত্রীর চেহারায় রয়েছে আতঙ্কের ছাপ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি ধর্ষণ ঘটনার বর্ণনা দেন। কলেজছাত্রীর মাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাবা হয়ে পড়েছেন বাকরুদ্ধ। লোকলজ্জার ভয়ে তারা মামলা করতে ভয় পাচ্ছেন। তবে তারা ধর্ষকের বিচার চান। অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার বলেন, তিনি নিজেই বাদী হয়ে কলেজছাত্রীর পক্ষে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে মামলা করবেন। এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি তোজাম্মেল হক বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি আমি জানি না। কেউ অভিযোগও করেনি। তবে কেউ মামলা করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গায় কলেজছাত্রী ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা প্রকাশিত হলে হাসপাতালপাড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অনেকেই নতুন করে হিসাব মেলাতে শুরু করে কারা কারা ওই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। দুপুরে চুয়াডাঙ্গা মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালকসহ একটি টিম ধর্ষিত কলেজছাত্রীর বাড়ি আলমডাঙ্গার বড়গাংনী গ্রামে যায়। সেখানে তারা তার পরিবারের সাথে কথা বলেন। ধর্ষিত কলেজছাত্রী তাদের কাছে সব ঘটনার বর্ণনা দেন। একই সাথে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে প্রেমিক চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পিতম্বরপুর গ্রামের আলীর ছেলে মিঠুন। তাদের দেয়া তথ্য উপাত্ত নিয়েও অভিযুক্তদের নাম ঠিকানা উদ্ধার করেছে মানবতা ফাউন্ডেশন। ধর্ষিতা, তার পিতা-মাতাসহ পরিবারের অন্য সদস্যের সাথে কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মানবতার অভজারভেশন অফিসার অ্যাড. কাইজার হোসেন জোয়ার্দ্দার, তথ্য কর্মকর্তা অ্যাড. নওশের আলী, অপারেশন অফিসার অ্যাড. জিল্লুর রহমান জালাল, সহকারী মোটিভেশন কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার জুথি প্রমুখ।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের দোতলায় এ ধরনের ধর্ষণ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সাধারণ রোগীর লোকজন। তারা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেক নারী জানান, সন্ধ্যার পর হাসপাতালের বাইরে পানি আনতে যেতে হয়। এ কারণে বেশ ভয় পাচ্ছি। অন্যদিকে হাসপাতালের সোয়াইন ফ্লু ওয়ার্ডে এ ধরনের ধর্ষণের ঘটনায় কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছে, ওই কক্ষের চাবি কার কাছে থাকে? ধর্ষক চক্রটি কিভাবে কক্ষের তালা খুললো? তাছাড়া শোনা যায়, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের প্লেন সিঁড়ির মধ্যে মাদকাসক্ত যুবকরা নেশা করে। সেখানে অনৈতিক কাজকাম হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।