চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রতারক চক্র বেপরোয়া : পরিত্যক্ত একটি কক্ষে প্রেমিকের সামনেই প্রেমিকা কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ

স্টাফ রিপোটার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগীর সাথে থাকা এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। একটি চক্র তাকে জিম্মি করে দোতলার পরিত্যক্ত একটি কক্ষে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এখনো তার চোখে-মুখে লেগে আছে আতঙ্কের ছাপ। ধর্ষণের আগে ওই কলেজছাত্রীর কাছ থেকে কানের দুল, টাকা ও মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়। তার প্রেমিককে জিম্মি করে রাখা হয়। ঘটনার পর ওই ধর্ষিত কলেজছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি কুলাঙ্গার ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। কিন্তু সামাজিক বাধা আর লোকলজ্জার ভয় তাকে কাবু করে ফেলেছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকার একটি প্রতারক চক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আগে তো তারা টাকা-পয়সা,গয়না-গাটি নিয়ে বা রোগী বেসরকারী ক্লিনিক-ডায়গনস্টিক সেন্টারে ভাগিয়ে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতো। কিন্তু এবার ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে তারা।

সূত্র জানায়, গত ১৭ মে মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে খালাতো ভাইকে দেখতে আসেন আলমডাঙ্গা বড় গাংনী গ্রামের এক কলেজছাত্রী। এক পর্যায়ে তিনি তার প্রেমিক সদর উপজেলার পীতম্বরপুর গ্রামের আলির ছেলে মিঠুনের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় কতিপয় যুবক তাদের দুজনের অনৈতিক সম্পর্কের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে একটি পরিত্যক্ত কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাদের কাছ থেকে মোবাইলফোন, কানের দুল ও নগদ দেড় হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় যুবকরা। ঘটনার এক সপ্তাহ পর ধষণের ঘটনা জানাজানি হয়ে পড়লে সচেতন মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে মোবাইলফোনে নিজেকে প্রতারিতদের মধ্যে কলেজছাত্র পরিচয় দিয়ে বলেন বড়গাংনী গ্রামের কৃষক পরিবারের মেয়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ছাত্রী আমার পরিচিত। মাস তিনেক ধরে তার সাথে আমার প্রেম সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই মধ্যে গত ১৭ মে কলেজ ছাত্রী তার অসুস্থ খালাতো ভাইকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপতালে দেখার জন্য যায়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা কথা বলছিলাম। এ সময় ৪ যুবক পাশেই গাঁজা টানছিলো। এক পর্যায়ে একটু দূর থেকে তারা আমাদের ডাকে। আমরা দুজন তাদের কাছে গেলে তারা আমাদেরকে হাসপাতালের ২য় তলায় ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেলের পরিত্যক্ত রুমের ভেতর নিয়ে দরজা আটকিয়ে দেয়। আমাদেরকে তারা খারাপ অপবাদ দিয়ে বেদম মারধর করে। এ সময় আমাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য টাকা দাবি করে তারা। ওই কলেজছাত্রী তার অসুস্থ ভাইয়ের পাশে থাকা ভাবীর কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা এনে যুবকদের হাতে তুলে দেন। তারপরেও তার মোবাইল ও কানের দুল ছিনিয়ে নেয় ওই চক্র। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে তারা আমার (মিঠুন) গলায় ছুরি ঠেকিয়ে আমার সামনে প্রেমিকাকে একজন জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে  অবশ্যি মোবাইলফোন ও কানের দুল ফেরত দেয় তারা। মিঠুন আরও জানান, ওই চক্রটি আমাকে হুমকি দিয়ে বলে কাউকে কিছু বলবি না। এরপর চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরে নিয়ে গিয়ে বলে পুলিশ যেন না জানে। পুলিশকে বলবি না। বললে তোর সমস্য হবে। তার আগে আমার প্রেমিকাকে গভীররাতে তার অসুস্থ ভাইয়ের শয্যাপাশে থাকা ভাবীর কাছে পাঠিয়ে দিয়ে বলে তোকে যখন ডাকবো তখন আসবি।

মিঠুন অভিযোগ করে বলেন, এরপর থেকে ওই চক্র আমার প্রেমিকাকে একটুও শান্তিতে থাকতে দেয় না। মোবাইল ফোনে তাকে মাঝে মাঝেই ব্লাকমেইল করতে থাকে। গতকাল মঙ্গলবার তাকে মোবাইল ফোনে দৈহিক মিলনের প্রস্তাব দেয়। কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে ওই দিনের ধর্ষণের কথা লোকজনকে জানিয়ে দেয়ার হুমকি দেয় প্রতারকরা। এরই এক পর্যায়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লজ্জা-ঘৃণায় ওই কলেজ ছাত্রী বিষপান করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আশঙ্কায় কৌশলে হাসপাতল থেকে চলে যান তিনি। স্থানীয়দের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাসপাতাল এলাকার এই প্রতারক চক্রটি প্রায় প্রতিদিনই হাসপাতাল এলাকায় একাকী কোনো ছেলে-মেয়েকে কথা বলতে দেখলেই তাদের আটক করে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিস হাতিয়ে নেয়। যদি টাকা পয়সা না দেয় তাহলে মারধর করে। একই সাথে হাসপাতাল এলাকাতে নেশা করে পরিবেশ নষ্ট করছে চক্রটি।

এদিকে গতকাল ওই কলেজ ছাত্রীর বাড়িতে সরেজমিন গেলে দেখা যায়, তার চেহারায় রয়েছে আতঙ্কের ছাপ। কান্নাজড়িতে কন্ঠে তিনি ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দেন। এই সময় কলেজ ছাত্রীর মাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাবা হয়ে গেছেন বাকরুদ্ধ। এক কথায় তাদের পরিবারে লোকজন দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন। লোকলজ্জার ভয়ে তার বিচার চাইতেও ভয় পাচ্ছেন। এই চক্রের সাথে হাসপাতালের কোনো কর্মচারী জড়িত আছে কি না তাও খতিয়ে দেখার জন্য দাবি জানান তারা। গ্রামের অনেকেই চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমোর্চার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারা বলেন যারাই হাসপাতালে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে, লোকমোর্চার মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।