চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আবারও রোগীদের খাবার চুরি

এবার ধরা পড়লেন রাঁধুনি নুর জাহানের সহকারী রূপা

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগীদের খাবার চুরি বন্ধ হয়নি। খাবার চুরির অপরাধে রাঁধুনি সুফিয়াকে জীবননগরে বদলি করে নিয়ে আসা হয় অন্যজনকে। কিন্তু যে লাউ সেই কদু। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো গা নেই খাবার চুরি রোধে। কোথা থেকে কী হয় তা জানা সত্ত্বে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না এসব চোরের বিরুদ্ধে। কেবল বদলি করেই ক্ষান্ত হয় কর্তৃপক্ষ। শেষমেশ রাঁধুনি নূর জাহানও সেই চোরের তালিকায় নাম লেখালেন। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও ধরা পড়ে না বলেই চুরি হজম হয়ে যায় নির্বিঘ্নে। তবে গতকালের খাবার চুরি নিয়ে বেশ বিব্রত রাঁধুনি নুর জাহান। তিনি বিভিন্নভাবে তদবির অব্যাহত রেখেছেন।

অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রতিদিন ১০০ রোগীর জন্য খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এ খাবারের সিংহভাগই ঝোলাই করে চলে যায় বিভিন্ন হোটেল ও বাড়িতে। বিগত রাঁধুনি সুফিয়ার বিরুদ্ধে খাবার চুরির অভিযোগ ছিলো দীর্ঘদিনের। শেষমেশ হাসপাতালের খাবার চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় তার সহকারী মাহফুজা খাতুন ফাহি হাতেনাতে ধরা পড়েন। খাবার চুরির অপরাধে সুফিয়াকে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে বদলি করা হয়। আর জীবননগরের আয়েশা বেগমকে রাঁধুনি হিসেবে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বদলি করে আনা হয়। কয়েক মাসের মাথায় তিনি মারা গেলে হাসপাতালের আয়া নুর জাহানকে সদর হাসপাতালের রাঁধুনির দায়িত্ব দেয়া হয়। কদিন বেশ ভালোই চলছিলো। সেসময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরদারির কারণে রোগীরা পেট পুরে যেমন খেয়েছে, তেমনি পেয়েছে পরিমাণ মতো মাছ, মাংস, ডিম আর কলা-রুটি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রাঁধুনি নুর জাহানসহ তার রান্নার সহকারীরা।

গতকাল শুক্রবার বেলা ১টার দিকে হাসপাতালের রান্নাঘর থেকে রাঁধুনির সহকারী চুয়াডাঙ্গা হকপাড়ার নাসির উদ্দিনের স্ত্রী রূপা খাতুন ঝোলা বোঝাই খাবার চুরি করে সটকে পড়ছিলেন। এ সময় স্থানীয় যুবকরা তাকে আটক করে। তার ঝোলা তল্লাশি করলে পাওয়া যায় কাঁচা মাছ, রান্না করা মাংস, এক বোতল সয়াবিন তেল ও বিভিন্ন মসলা। যুবকদের কাছে রূপা স্বীকার করে তার চাইতে প্রতিদিন কয়েক গুন খাবার নিয়ে যায় নুর জাহান খালা। তারা পালাক্রমে দুপুরে ও রাতে খাবার চুরি করে নিয়ে যায়।

হাসপাতালের কয়েকজন নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, গত ঈদের দিন গাইনি ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ছিলো মাত্র ১১ জন। কিন্তু সেই দিন ওই দু ওয়ার্ডে খাবার বরাদ্দ ছিলো ৩৫ জনের। কিন্তু দুজন দরিদ্র রোগীর জন্য খাবার চাওয়া হলেও নুর জাহান তা দেননি। বরং ওইদিনের উন্নতমানের অতিরিক্ত অনেক খাবার তিনি গায়েব করে দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, সকালে অনেক রোগীর ছুটি হয়ে যায়। ছুটি পাওয়া রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবার নতুন রোগীদের মধ্যে বিতরণ না করে তা বাড়িতে নিয়ে যান নুর জাহান। ইদানীং রোগীদের মধ্যে খাবার দেয়া হয় খুবই কম। পাউরুটিরও সেই দশা। আস্ত ডিম দেয়ার কথা থাকলেও রোগীদের দেয়া হয় আধখানা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় যুবকরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের খাবার চুরি হয় আমরা জানি। কিন্তু আর সহ্য করতে না পেরেই রূপাকে চোরাই খাবারসহ আটক করি। আমরা মাঝে মাঝে দেখি আস্ত মুরগি, ডিম আর সয়াবিন ভরা বোতল নুর জাহান খালা কার বাড়িতে যেন দিয়ে আসেন। এসবের তদন্ত হওয়া দরকার। ওপরের কেউ তুষ্ট থাকেন বলেই হয়তো খাবার চুরি ধরা হয় না। তবে রূপাকে আটক করার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় চোরাই খাবারসহ রূপাকে ছেড়ে দেয় যুবকরা।

এদিকে খাবারসহ রূপা আটকের পর থেকে রাঁধুনি নুর জাহান বিভিন্ন মহলে তদবির শুরু করেন। যাতে পত্রপত্রিকায় খবরটি না আসে সে জন্য তিনি সাংবাদিকদেরও ম্যানেজের চেষ্টা করেন। তবে সচেতন মহল সরকারি খাবার চুরি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও অভিযুক্ত চোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছে।