চুয়াডাঙ্গা শেখরাতলাপাড়ায় দিবালোকে চুরির ৬ দিনের মাথায় সন্দেহের বসে উগ্রতা ॥ পুলিশের তড়িত পদক্ষেপ

হতদরিদ্র কাঁঠুরিয়াকে গাছে বেধে নির্মম নির্যাতনসহ স্ত্রীকেও মারপিট : মা বাবাসহ কলেজপড়ুয়া পাকড়াও
স্টাফ রিপোর্টার: শুধু মাত্র সন্দেহের বসে সরল সোজা এক হতদরিদ্র কাঁঠুরিয়াকে ধরে গাছের সাথে বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। কাঁঠুরিয়াকে নির্যাতন করেই খ্যান্ত হয়নি ডিগ্রি পড়ুয়া ছেলে ও তার বাপ মাসহ তাদের লোকজন, ওই কাঁঠুরিয়ার স্ত্রীকেও ধরে মেরে আহত করেছে, তছনছ করে তাদের বাড়ির মালামাল। দীর্ঘসময় ধরে এসব তা-বের এক পর্যায়ে খবর পেয়ে পুলিশ ডিগ্রি পড়ুয়া ওই ছেলেসহ তার বাবা-মাকে গ্রেফতার করেছে।
গতরাত ৯টার দিকে এদেরকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি নির্যাতিত কাঁঠুরিয়া ও তার স্ত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। পরে কাঠুরিয়া ও তার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- চুয়াডাঙ্গা শেখরাতলাপাড়ার মারুফ হোসেন (২২), তার পিতা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা জসিম উদ্দীন তার জসিম উদ্দীনের স্ত্রী রিমা খাতুন। এদেরকে সদর থানা কাস্টডিতে রাখা হয়েছে। মামলা হলে আজ আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার মৃত রব্বানীর ছেলে আব্দুল জামাত ওরফে জুমাত আলী হতদরিদ্র। তিনি হালকা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীও। কখনো দিন মজুরি কখনো কাঠ কেটে চলা করার কাজ করেন। গত রোববার চুয়াডাঙ্গা শেখরাতলার অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার জসিম উদ্দীনের বাড়িতে কাঠ কেটে চলা করার কাজ করেন জুমাত। সোমবার জসিম উদ্দীনের বাড়িতে চুরি হয়। অবশ্য চুরির বিষয়ে পুলিশে নালিশ কিংবা জিডি করা হয়নি। গতকাল শনিবার বিকেলে মাথাভাঙ্গা ব্রিজের নিকট থেকে জুমাত আলীকে ধরে নিয়ে যায় ব্যাংকার জসিম উদ্দীনের কলেজপড়–য়া ছেলে মারুফ হোসেনসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা। দরিদ্র দিনমজুরকে ধরে প্রথমে পৌর কলেজের পাশের নির্জন স্থানে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে বেদম প্রহার করতে থাকে। মারের চোটে মারুফদের শেখানো কথা বলতে শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে নেয়া হয় মারুফদের বাড়ি। সেখানে নিয়ে শুরু হয় বেদম প্রহার। দিনমজুর কাঁঠুরিয়া জামাতকে রেখে তার বাড়ি গিয়ে মারুফসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা জুমাতের স্ত্রীকে মারধর শুরু করে। বাড়ির মালামাল তছনছ করে। জুমাতের স্ত্রী আনুরা খাতুন আপত্তি করলে তাকেও মারুফসহ তার লোকজন শেখরাতলায় নিয়ে মারধর শুরু করে। ইসলামপাড়ায় বসবাসকারী জুমাতের মায়ের বাড়িতেও তছনছ করা হয়য়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তোজাম্মেল হক থানার এসআই জসিম উদ্দীনকে দ্রুত বিষয়টি খোঁজ নিয়ে নির্যাতিতদের উদ্ধারের পাশাপাশি নির্যাতনকারীদের গ্রেফতারের নির্দেশন দেন। এসআই জসিম উদ্দীন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে শেখরাতলায় অভিযান চালিয়ে মারুফ হোসেন, তার পিতা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার জসিম উদ্দীন ও জসিম উদ্দীনের স্ত্রী রিমা খাতুনকে গ্রেফতার করে থানায় নেন।
মারুফ ও তার মা রিমা খাতুন বলেছেন, গত সোমবার বাড়ি থেকে নগদ ৩০ হাজার টাকা, সোনার দুটি বালা ও এক জোড়া কানের দুল চুরি হয়। সোমবার বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ঘরের তালা ভেঙে এসব চুরি করেছে। মারুফ বলেছে, রোববার বাড়িতে কাজ করার সময় সব কিছু দেখে সোমবার ওই জুমাতই চুরি করেছে। এ সন্দেহে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় উল্টো-পাল্টা কথা বলেছে বলেও ওর স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবা করা হয়েছে। ওদের বাড়িতে চোরাই মালামাল আছে কি-না তা দেখা হয়েছে। এদিকে হতদরিদ্র জুমাতের স্ত্রী বলেছে, আমার স্বামী অতোটাই সরলসোজা যে, সারাদিন কেউ কাজ করিয়ে হাতে অল্প কিছু টাকা দিলেও কিছু বলে না। তাই নিয়েই চলে আসে। আমি আবার আমার স্বামীকে সাথে নিয়ে সেই বাড়িতে গিয়ে ন্যায্য মজুরি আদায় করি। এরকম বোকা কোনো মানুষ কি তালা ভেঙে চুরি করতে পারে। শুধুমাত্র সন্দেহের বসে লোকটাকে ধরে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে যেভাবে মেরেছে তা মুখে বলা যাবে না। আবার আমাকেও মেরে আহত করেছে ওরা।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তোজাম্মেল হক বলেছেন, চুরির বিষয়ে থানায় কেউ কোনো জিডি করেনি। তারপর একজন হতদরিদ্র কাঁঠুরিয়াকে ধরে নিয়ে গিয়ে যেভাবে মেরে আহত করা হয়েছে তা গুরুতর অপরাধ। আমরা অভিযুক্তদের ধরেছি। মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলছে।