চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে ছিনতাইকারীদের আখড়া ॥ টার্গেট চলন্ত ট্রেনের যাত্রীর ব্যাগ

ওভার ব্রিজের বহিরাংশের রেলিঙের লোহা কেটে করে রাখা হয়েছে পালানোর পথ ॥ আশপাশেই প্রশ্রয়দাতাদের অবস্থান

স্টাফ রিপোর্টার: ওদের বয়স আর কতোই হবে? পনেরো থেকে পঁচিশ। দূর থেকে ট্রেনযোগে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে এসে নামে। এলাকার কিছু যুবকের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ওরা এতোটাই বেপরোয়া যে, ট্রেনের যাত্রীদের মালামালা ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ে পালায়। পালিয়ে দিব্যি পারও পেয়ে যায়। চলতি বছরের গোড়ার দিকে ক’জন ট্রেনযাত্রী পিছু ধাওয়া করে একজনকে ধরে রেল পুলিশে দিলেও পরবর্তীতে ওই ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। ফলে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে রেলভ্রমণকারীদের ছিনতাইয়ের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রেলগাড়ির সময়সূচি মেনে চলার ক্ষেত্রে আন্তরিক হওয়ার সাথে সাথে যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। রেলওয়ে লাভের মুখ না দেখলেও বিশেষ নজরদারির সুফলও মিলছে বহুক্ষেত্রে। যদিও যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা ছিদ্র রয়েই গেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন স্টেশনে লাগেজ ছিনতাইসহ উঠতি বয়সী চোরের উৎপাত যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। রেলওয়ের নিয়মিত যাত্রীদের অনেকেই এ অভিযোগ করে বলেছেন, দর্শনা হল্ট স্টেশনের মতো অতোটা ভয়াবহ পরিস্থিতি চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে সৃষ্টি না হলেও মাঝে মাঝেই ছিনতাইকারীদের ভয়ানক উৎপাতের শিকার হন ট্রেনযাত্রীদের অনেকে। চুয়াডাঙ্গা স্টেশনের ২ নং প্লাটফর্মে প্রধানত খূলনাগামী ট্রেনই বেশি থামে। যাত্রীরা ওঠে-নামে। ঘুর ঘুর করতে থাকে ছিনতাইকারীরা। ট্রেন ছাড়লেও সুযোগ বুঝে ট্রেনে থাকা যাত্রীর মূল্যবান মালামাল নিয়ে দৌড়ে পালায়। এ প্লাটফর্মের ওভার ব্রিজের নিচের অংশের রেলিঙের লোহা কেটে অপরাধীরা পালানোর পথ পর্যন্ত প্রস্তুত করে রেখেছে। প্রকাশ্যে ছিনতাই করে ভোদৌড় দিয়ে ওরা পালিয়ে গেলে ছিনতাইয়ের শিকার যাত্রী চলন্ত ট্রেনে বসে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেন। অন্যদের চোখ চড়কগাছ হলেও প্লাটফর্মে অবস্থানকারীদের অধিকাংশই বিষয়টি তেমন বুঝতে পারেন না। বুঝলেও ওদের পিছু নিয়ে ধরে পুলিশে দেয়ার তেমন উদ্যোগ নেন না। ফলে ছিনতাইকারীদের উৎপাত দিন দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়া রেলওয়ের লোহার যন্ত্রাংশ চুরির জন্য মাদকাসক্ত টোকাইদের উৎপাত তো দীর্ঘদিন ধরেই লেগে রয়েছে।
ট্রেনে ছিনতাইয়ের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, যারা ছিনতাই করে পালায় ওদের অধিকাংশেরই বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এরা বহিরাগত। তবে স্টেশন এলাকারই কিছু চিহ্নিত ব্যক্তি রয়েছে যারা ওদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। ধরা পড়লে ওরাই এগিয়ে গিয়ে মারপিটের ভান করে শাস্তির দায়িত্ব নিয়ে কৌশলে বাঁচিয়ে দেয়। তবে গত ১০ জানুয়ারি খুলনাগামী কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসের এক নারী যাত্রী খাদিজার নিকট থেকে তার ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর সময় কয়েকজন পিছু ধাওয়া করে। হাতেনাতে ধরে তাকে রেল পুলিশের হাতে দেয়। ধরা পড়া সাইদুর চুয়াডাঙ্গা গোরস্তানপাড়ার খোকনের ছেলে। সে নোশাখোর হিসেবে চিহ্নিত হলেও তার মতো অনেকেই রয়েছে যারা চলন্ত ট্রেনের যাত্রীদের মালামাল ছিনিয়ে নেয়ার সুযোগ খোঁজে। বহিরাগতদের অধিকাংশই ট্রেনযোগে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে নেমে ওভার ব্রিজের আশপাশেই ঘুর ঘুর করতে থাকে।
চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে চলন্ত ট্রেনের যাত্রীদের মালামাল চুরি ও ছিনতাইরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন।