চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে এবার ৭৫ হাজার গরু ও লক্ষাধিক ছাগল উৎপাদন

পশুপালন খামারীদের মধ্যে চলছে বিক্রির তোড়জোড় : লাভের আশায় গুণছেন প্রহর

 

মাজেদুল হক মানিক/খাইরুজ্জামান সেতু: চুয়াডাঙ্গায় মেহেরপুরের গরু পালনকারী ও খামারীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোরবানির পশুহাটে পশু নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে চলছে নানা প্রস্তুতি। এবার মেহেরপুর জেলা থেকে প্রায় ২৫ হাজার গরু ও ১৫ হাজার ছাগল বিক্রি করা হবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবার ৩৮ হাজারের বেশি গরু ও প্রায় ৯৫ হাজার ছাগল বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় এ তথ্য দিয়ে বলেছে, জেলায় গরু ছাগলের খামার রয়েছে ২৫ হাজার ১৭৫টি। মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার খামারিরা এবার মোট ৭৫ হাজার গরু ও এক লাখ ১০ হাজার ছাগল উৎপাদন করেছে। যা কোরবানি মরসুমে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

কৃত্রিম উপায়ে পশুপালনে ঝুঁকি থাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে গরু পালন করে এর যথার্থতা প্রমাণ করেছেন গরু পালনকারীরা। তারপরেও কাঙ্ক্ষিত দাম ও ক্ষতিকর ইনজেকশন দেয়ার বদনামের বিরূপ প্রভাবের ফলে মোটা গরু বিক্রি নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন খামারী তথা গরু পালনকারীরা। চুয়াডাঙ্গা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল কুমার পাল মেহেরপুর জেলারও দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেছেন, হৃষ্টপৃষ্ট করা খামারীদের নানাভাবে সহযোগিতা তথা উৎসাহিত করা হলেও ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে মোটাতাজা করা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে বহু আগে থেকেই খামারীদের সতর্ক করা হয়েছে। ফলে কোনো খামারই ওইসব ক্ষতিকর ইনজেকশন বা পিল খাইয়ে গরু মোটাতাজা করেনি বলে আমার বিশ্বাস। তারপরও আমরা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেছি। পশু হাটগুলোর দিকেও বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। প্রামণ মিললে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মেহেরপুর জেলায় গত কয়েক বছর থেকে ব্যাপকভাবে গরু পালন হচ্ছে। গত বছর কোরবানিতে মেহেরপুর জেলার বাইরের পশুহাটে ১২ হাজার গরু বিক্রি হলেও এবার এর লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণ। ছাগলের সংখ্যাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ভারতের গরু দেয়া বন্ধের ঘোষণায় মাংসের দাম বৃদ্ধিতে গরু পালনে ঝুঁকেছেন অনেকেই। এবারের কোরবানির পশুহাটে বিক্রির জন্য তাই প্রস্তুত জেলার প্রায় ৩০ হাজার গরু ও ২০ হাজার ছাগল। এর মধ্যে জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৯০ ভাগ গরু-ছাগল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হবে বলে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। গরু পালনকারীরা জানান, বর্তমান বাজার হিসেবে গরু-ছাগল বিক্রি হলে কাঙ্ক্ষিত লাভের আশা করছেন জেলার গরু পালনকারী ও খামারীরা। তবে শেষ মুহূর্তে গরু আমদানি হলে গত দু বছরের মতো লোকসান হতে পারে এমন সংশয় পিছু ছাড়ছে না। তার ওপরে রয়েছে ইনজেকশন দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণের ঘটনার বিরূপ প্রভাব। মেহেরপুর জেলার গরু পালনকারী ও খামারীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও পরিচর্যায় বেশ নাদুস-নুদুস আকারের গরু বেড়ে ওঠে। বেশির ভাগ গরু ৩ থেকে ১৭ মণ পর্যন্ত মাংস দেয়ার উপযোগী। গত কয়েক বছর ধরে এক প্রকার প্রতিযোগিতার মধ্যদিয়ে গরুর এমন আকার করতে সমর্থ হচ্ছেন চাষিরা। পূর্বমালসাদহ গ্রামের গরুর খামারমালিক ইনামুল হকের খামারে ছয়টি বড় আকারের গরু রয়েছে। অন্তত ১৫-১৮ মণ হবে বলে জানান এনামুল হক। তবে বড় আকারের গরু বিক্রিতে ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। জেলার গরু পালনকারী ও খামারীরা ক্ষতিকর ওষুধ ছাড়াই এসব গরু মোটাতাজাকরণ করে থাকেন বলে জানা গেছে। এনামুল হক জানান, বাছুরের ভালো জাত নির্বাচন ও আধুনিক পদ্ধতিতে গরু পরিচর্যা করলেই ক্ষতিকর ওষুধ ছাড়াই গরু মোটা করা যায়। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও গরু পালনকারীদের ইনজেকশন ব্যবহারের ঘটনায় কোরবানির বাজারে মোটা গরু বিক্রি করা দুরুহ হয়ে পড়ে। মোটা গরু মানেই ইনজেকশন দেয়া গরু ক্রেতাদের এমন ভ্রান্ত ধারণার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গরু পালনকারী ও খামারীরা।

জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে বড় আকারের গরুর পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেশি। স্থানীয় বাজারে কোরবানির গরু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। দু মণ মাংসের গরু ৩০ হাজার টাকা, তিন মণের ৪৫ হাজার টাকা এবং ৪-৫ মণ মাংস দেয়ার গরুর মূল্য ৭০-৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বাজারের বিক্রির ঝক্কি-ঝামেলা মোকাবেলা করতে না চেয়ে বেশির ভাগ গরু পালনকারী গ্রাম থেকেই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। তবে এরকম দামে লোকসান না হলেও লাভ তেমন হচ্ছে না বলে জানান গরু পালনকারীরা। আর কয়েক দিন পরেই কোরবানি। তাইতো বেশ জোরেশোরেই শুরু হয়েছে গরু বেচাকেনা। গরু পালনকারী ও ব্যবসায়ীরা গরু বিক্রি করতে রাজধানীতে যাওয়ার জোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। স্থানীয় বাজার থেকে কিনে অনেক খামারী ঢাকার বাজারে বিক্রির লক্ষ্য নিয়েছেন। তবে এখনো অনেকের মধ্যে ভারতীয় গরু আমদানির ব্যাপারে আশঙ্কা রয়েছে। শেষ মুহূর্তে গরু আমদানি হলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। পূর্বমালসাদহ গ্রামের গরু খামারের মালিক মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, গরুর দাম বৃদ্ধিতে গরু পালনে নতুন করে ঝুঁকে পড়েছেন অনেকেই। সবার লক্ষ্য কোরবানির সময় বিক্রি করা। ভারতীয় গরু আনা বন্ধ হলে মেহেরপুর জেলার প্রতিটি বাড়ি হবে একটি করে খামার। কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের মানুষের মাংসের আমিষ ঘাটতি পূরণে বড় ভূমিকা পালন করবেন জেলার গরু পালনকারী।