চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের কয়েকটি সড়কে গাছ কেটে অবরোধ : জীবননগর আন্দুলবাড়িয়াসহ কয়েকটি স্থানে মিছিল জামায়াতের সকাল সন্ধ্যা হরতা চলাকালে ব্যাপক সহিংসতা : ৫ জেলায় নিহত ১০ য়াসহ কয়েকটি স্থানে মিছিল

স্টাফ রিপোর্টার: ব্যাপক সংঘাত, সহিংসতা ও সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা গতকাল রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। সহিংসতায় লালমনিরহাটে ৪, জয়পুরহাট ৩, লক্ষ্মীপুর ১, সিলেটে ১ ও মাদারীপুরে ১ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী, সাতক্ষীরা, নারায়ণগঞ্জ, ঝালকাঠি, ফেনী ও চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগসমর্থকদের সাথে জামায়াত-শিবিরের ব্যাপক সংঘর্ষ হযেছে। আহত হয়েছে আরও শতাধিক। আওয়ামী লীগ ও জামায়াত অফিস ও প্রতিষ্ঠানে পাল্টাপাল্টি অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রতিবাদে সারাদেশে রোববার হরতাল আহ্বান করে জামায়াতে ইসলামী। এতে হরতালের আগের দিনও সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা হয়। নগর পরিবহনের স্বল্পসংখ্যক যানবাহন চলাচল করলেও হরতালে রাজধানীর টার্মিনালগুলো থেকে দূরপাল্লার কোনো যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায়নি।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সরেয়ার বাজারে রোববার জামায়াতের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে পৃথক ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন। সংঘর্ষের সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে একজন এবং অপর একজনকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। গুলিতে নিহত মনিরুল ইসলাম ও সাজু মিয়া শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। অপরদিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাওয়া আবদুর রহিমও তাদের কর্মী বলে দাবি করেছে শিবির। অপরদিকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টুকে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল ইউনিয়নের হালট্রি এলাকায় রোববার জামায়াত-শিবিরের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে ২ জন নিহত ও অন্তত ১০-১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার হালট্রি গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে ভ্যানচালক ফিরোজ হোসেন, একই গ্রামের মমতাজ উদ্দিনের ছেলে ইনসান আলী ও পাশের জলাটুল গ্রামের ইকবাল হোসেনের ছেলে শাকিব। রোববার বিকেল ৪টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর জামায়াত-শিবিরকর্মীরা শহরে দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিলে সাথে সাথে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জয়পুরহাট পৌর এলাকায় রোববার বিকেল ৫টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জয়পুরহাটের কালাইয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে ককটেল ফাঁটানোকে কেন্দ্র করে ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। রোববার ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেন কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম মিরাজকে কুপিয়ে খুন করেছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় যুবলীগ কর্মী মাসুদ আহত হয়েছে। রোববার জেলার রায়পুর উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের লুধুয়া বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ছাত্রলীগ নেতা মিরাজ রায়পুর পৌরসভার দেনায়েতপুর এলাকার আবুল কালামের ছেলে। লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম আলাউদ্দিনের দাবি রাজনৈতিক কারণে শিবিরকর্মীরা তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করেছে।
মিরাজুল ইসলাম মিরাজকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যার জের ধরে রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রায়পুর শহরের জামায়াত পরিচালিত আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগকর্মীরা।

মংলা থেকে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক টেকেরহাটে আসার পথে ফকিরহাট গোডাউনের মোড় নামক এলাকায় রোববার ভোর ৬টার দিকে এসে পৌঁছুলে হরতালকারীদের কবলে পড়ে প্রাণ দিতে হলো টেকেরহাটের ট্রাক ড্রাইভার জাহাঙ্গীর আলমের। শনিবার বিকেলে ট্রাকড্রাইভার জাহাঙ্গীর আলম টেকেরহাট থেকে সিমেন্ট আনার জন্য ট্রাক নিয়ে মংলা বন্দরে যায়। ওই রাতেই সিমেন্ট বোঝাই করে টেকেরহাটের উদ্দেশে রওনা দেয়। পথিমধ্যে ফকিরহাটের গোডাউনের মোড় নামক এলাকায় এসে পৌঁছুলে হরতালকারীরা সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ট্রাক ড্রাইভার জাহাঙ্গীর আলম ইটের আঘাতে মারাত্মক আহত হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার খাদে পড়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে খুলনা সদর হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক অবস্থা বেগতিক দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এ সময় ঢাকা যাওয়ার পথে কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট পৌঁছুলে ড্রাইভার জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যু হয়। জাহাঙ্গীরের বাড়ি টেকেরহাটের উত্তরপাড় মুকসুদপুর উপজেলাধীন চরপ্রসন্নদী গ্রামে। তার স্ত্রী, দু ছেলে, এক মেয়ে রয়েছে।

সিলেটের কানাইঘাটে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে খুন করেছে এক যুবলীগ নেতাকে। নিহত যুবলীগ নেতার নাম নজরুল ইসলাম। নিহত নজরুল উপজেলার দলইমাটি গ্রামের হাজি মোতাহির আলীর ছেলে এবং পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লুৎফুর রহমানের চাচাতো ভাই।

মোমিনপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার প্রতিবাদে গতকাল সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে জামায়াতে ইসলামী। চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের বোয়ালমারী গ্রামের নিকটবর্তী আলোচিত চন্দ্রাবতী ইন্দারার পাশে সড়কের ওপর বড় বড় ১০টি গাছ ফেলে রাখে হরতাল সমর্থনকারীরা। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, জামায়াতে ইসলামীর পিকেটাররা ভোররাতে কড়ুই, ইপিলইপিলসহ মোট ১০টি বড় বড় গাছ কেটে সড়কের ওপর ফেলে রাখে। হরতালে দূরপাল্লার কোনো পরিবহন চলাচল না করলেও আলমসাধু নসিমন-করিমন, ইজিবাইক, সিএনজির চলাচল ছিলো স্বাভাবিক। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ গতকাল সকাল ৮টার দিকে গাছগুলো সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। বোয়ালমারী গ্রামের মেম্বার ফরজ আলী জানান, পুলিশ গাছগুলো সড়ক থেকে সরিয়ে চলে যাওয়ার পর হাজরাহাটি ও বোয়ালমারী গ্রামের কতিপয় অসাধু কিছু ব্যক্তি গাছগুলো নিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে। অপরদিকে জেলা সদরের নীলমণিগঞ্জ বাজারস্থ মোমিনপুর রেলস্টেশনে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে পুলিশের জোরালো নিরাপত্তার চাঁদর  ছিলো প্রশংসনীয়।

মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল রোববার সকালে মহেশপুর কলেজ বাসস্ট্যান্ড থেকে হরতালের সমর্থনে জামায়াতে ইসলামী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে কলেজ বাসস্ট্যান্ডে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্য রাখেন কাজীরবেড় ইউনিয়নের আমির জহির উদ্দীন, নাসির  উদ্দীন, সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, বর্তমান কাউন্সিলর শহিদুল বিশ্বাস, আব্দুল কাদের, মগবুল হোসেন, জেলা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ ও ফারুক হোসেন।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে ও আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে জামায়াতের ডাকা হরতালের সমর্থনে মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন সড়কের ৬টি স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। গতকাল রোববার মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের পোড়াপাড়া ও ছাতিয়ান, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের রাজনগর, মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়ের বন্দর মোড় ও গৌরিনগর এবং মেহেরপুর-কাথুলী সড়কের কায়েমকাটার মোড়ে বিপুল সংখ্যক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে ও রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ বিক্ষোভ করেন।

এদিন মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে সদর উপজেলার রাজনগরে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা জামায়াত নেতা আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে সড়কে গাছের ডাল ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। অবরোধকালে অন্যান্যের মধ্যে জামায়াত নেতা আব্দুর রহিম, মহাসিন আলী, আলীহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। একই সময় মহিলা জামায়াতের একটি দল লাঠি ও ঝাড়ুমিছিল করেন। ওই সময় মেহেরপুরগামী একটি তেলবাহী ট্রাঙ্কলরিতে হামলা চালায় অবরোধকারীরা। এ সময় ট্রাঙ্কলরিটি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরে হরতাল সমর্থকরা কাদের মোল্লার আত্মার মাগফেরাত কামনায় সড়কের উপরে দোয়া মোনাজাত করে।

জেলা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে বন্দরমোড়ে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। কায়েমকাটার মোড়ে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মো. সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা ট্রায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা শিবিরের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি সোহেল রানা ডলারসহ নেতৃবৃন্দ। অবরোধকালে ৭/৮টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় হরতালকারীরা।

মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের গৌরিনগরে মুজিবনগর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি খান জাহান আলীর নেতৃত্বে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করেন। উপস্থিত ছিলেন জেলা শিবিরের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ফজলুল হক গাজী ও মুজিবনগর উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোকলেছুর রহমান প্রমুখ। এদিকে শনিবার রাত ২টার দিকে গাংনী উপজেলার শুকুরকান্দি নামক স্থানে একটি ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুরগামী কাঠবোঝাই ট্রাকটি পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

এদিকে হরতালের কারণে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ ছিলো। শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিলো। তবে বিকেল হওয়ার সাথে সাথে দোকানপাট খুলতে শুরু করে। অফিস-আদালত খোলা ছিলো তবে লোকজনের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিলো। ব্যাংক-বীমায় লেনদেন হয়েছে সন্তর্পনে। স্কুল-কলেজে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম ছিলো।

জামজামি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল বিকেলে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির জামজামি ইউনিয়ন শাখা জামজামি বাজারে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের জামজামি ইউনিয়ন শাখার আমির সেলিম রেজা। সমাবেশ শেষে মিছিল বের করা হলে নেতৃত্ব দেন ছাত্রশিবির চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। আলমডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন, দফতর সম্পাদক আবু রায়হান, জামজামি ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্বাছ উদ্দিন, সাদ্দাম হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রমুখ।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী। গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে এ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতে ইসলামীর জেলা সহকারী সেক্রেটারি রুহুল আমিন বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন। বিকেলে জীবননগর পাইলট হাইস্কুল মাঠ থেকে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি রুহুল আমিন ও উপজেলা আমির অধ্যাপক খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জামায়াত কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। উপজেলা আমির অধ্যাপক খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি রুহুল আমীন। বক্তব্য রাখেন শিবিরের জেলা সভাপতি হাফেজ বেলাল হুসাইন, উপজেলা নায়েবে আমির মাও. মহিউদ্দীন, সেক্রেটারি মাও. ইসরাইল হোসেন, জামায়াত নেতা আন্দুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন, পৌর আমির মাও. সাজেদুর রহমান, জামায়াত নেতা ইব্রাহিম খলিল, আশাবুল হক মল্লিক, আতিয়ার রহমান, আবুল কালাম, হাফিজুর রহমান, সাইদুর রহমান, জীবননগর উপজেলা শিবিরের সভাপতি ফারুক হোসেন, সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, পৌর সভাপতি ফিরোজ হোসেন প্রমুখ।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জামায়াতের ডাকা হরতালের সমর্থনে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার দুটি স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী-সমর্থকরা। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী উপজেলার পোড়াপাড়া বাজার এলাকায় অবরোধ করা হয়। নেতৃত্বে ছিলেন ধানখোলা ইউনিয়ন পশ্চিম অঞ্চল জামায়াতের আমির শফিকুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি আখেরুজ্জামানসহ জামায়াত-শিবির ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ। টায়ারে আগুন দিয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করেন হরতালকারীরা। এ সময় ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একই সময়ে ছাতিয়ান থেকে বামন্দীবাজার পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। নেতৃত্বে ছিলেন গাংনী উপজেলা জামায়াতের আমির রবিউল ইসলাম। লাঠি হাতে করে হরতালের সমর্থনে স্লোগান দেয়া হয়। বিক্ষোভের শুরুতে ছাতিয়ান মোড়ে নেতাকর্মীরা জাড়ো হয়ে অবরোধ করেন। এ সময় শ্যালোইঞ্জিন চালিত একটি ট্রলিতে ভাঙচুর করা হয়। গাছের গুঁড়ি ফেলাসহ টায়ারে আগুন দেয়া হয়।

এদিকে শনিবার রাত দেড়টার দিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী উপজেলার আকুবপুরে খড়ি বোঝাই ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুরে যাওয়ার সময় ট্রাকটি (যার নং-যশোর ট-১১-২৩১৮) অবরোধে পড়ে। গাছ ফেলে সড়ক বন্ধ ছিলো। এ সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত ট্রাকটিতে আগুন ধরিয়ে দিলে সামনের অংশ পুড়ে যায়। তাৎক্ষণিক পুলিশ গিয়ে আগুন নেভায়।

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামী দলের ডাকে আহুত হরতাল জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া বাজারে আংশিকভাবে পালিত হয়েছে। হরতালের সর্মথনে দলীয় নেতা-কর্মীদের কোথাও পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। বেলা ১০টার দিকে সরকারদলীয় ইউনিয়ন নেতাকর্মীরা পুলিশের সহযোগিতায় ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার আহ্বান জানান। এ সাড়া পেয়ে বেলা ১১টার দিকে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা শুরু করে। এদিকে হরতালের সমর্থনে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের সড়াবাড়িয়া বাজারে কাঠের গুঁড়ি ফেলে ও খাঁড়াগোদা-গহেরপুরের রাস্তার মাঝে গাছ ফেলে রাস্তা অবরোধ করে। ফলে আন্দুলবাড়িয়া-সরোজগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দু ঘণ্টা পর স্থানীয় জনতা ও পথচারীরা রাস্তা থেকে গাছ অপসারণ করার পর বেলা ১১টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। হরতাল অবরোধের মুখে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একটি কাচাঁমাল ভর্তি ট্রাক আটকে পড়ে। গত শনিবার বিকেলে আন্দুলবাড়িয়া বাজার থেকে অরনী এন্টার প্রাইজের কাচাঁমাল ভর্তি ট্রাকটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পথিমধ্যে সড়াবাড়িয়া গ্রামে পৌঁছুলে জিআই লাইনের বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেলে স্থানীয় জনতা ট্রাকটি আটক করে রাখে। রাতে ট্রাকটি জনতা ছেড়ে দিলে হরতাল অবরোধের মুখে ঢাকায় পৌঁছানো চরম অনিশ্চিতা দেখা দেয়। ফলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাঁচামাল ভর্তি ট্রাকটি গতকাল আন্দুলবাড়িয়া বাজারে অবস্থান করার পর সন্ধ্যায় ঢাকার পথে রওনা দেয়। ট্রাক ভর্তি ঝাল, বেগুন, লাউ, কপিসহ বিভিন্ন সবজিতে পচন ধরায় প্রায় ১০ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে সংশ্লিষ্ট কৃষকরা দাবি করেছেন।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর মুজিবনগর সডকের গৌরিনগর নামক স্থানে গতকাল ভোরে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি খান জাহান আলীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সডক অবরোধ করে রাখে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা সরকারবিরোধী ও হরতালের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।