চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্বস্তির বৃষ্টি

 প্রাণিকূল ছন্দে নেচে বৃষ্টিকে জানালো স্বাগত

স্টাফ রিপোর্টার: টানা সাত সপ্তাহ তীব্র তাপপ্রবাহের পর চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুর ১টা ২০ মিনিট থেকে ৩টা ১২ মিনিট পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় ৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। মেহেরপুরে অবশ্য চুয়াডাঙ্গার তুলনায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

তীব্র দাবদাহ আর তীব্র গরমের পর কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরে জন জীবনকে সজিব ও সতেজ করে তুলেছে।গতকাল রোববার সকাল থেকেই চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের আকাশে মেঘের ঘণঘটা ঘটতে থাকে। দুপুরে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি ধরিত্রীতে নেমে শীতলতায় ভরিয়ে তোলে। বৃষ্টি পেয়ে শুধু মানুষ নয় সকল প্রাণিকূল বৃষ্টির ছন্দে নেচে গেয়ে আনন্দ প্রকাশের মাধ্যমে এ বৃষ্টিকে স্বাগত জানিয়েছে। অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজে আনন্দ প্রকাশ করতে রাস্তায়ও নামেন বৃষ্টির সময়। গতকাল ঈশ্বরদীতে দেশের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত ৮০ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকাল টাঙ্গাইলে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৭ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি একই এলাকায় অবস্থান করছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মরসুমি বায়ু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টেকনাফ উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সিলেট বিভাগসহ টাঙ্গাইল,রাজশাহী, ঈশ্বরদী, সৈয়দপুর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা আজ সোমবার থেকে প্রশমিত হতে পারে।সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দু ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে জীবননগরে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির জন্য বিশেষ ইশতেসকার নামাজ ও দোয়া অনুষ্ঠানের একদিন পর গতকাল রোববার দুপুরে জীবননগরে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। একটানা তীব্র দাবদাহের পর গতকালের বৃষ্টি উত্তপ্ত ধরণীকে কিছুটা হলেও শীতল করে। মানুষ ও পশু-পাখির জীবনে স্বস্তি বয়ে আনে। খরতাপে পুড়তে থাকা ফসল ও ক্ষেত-খামার এ বৃষ্টির ফলে সতেজতা ফিলে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে নামাজ আর বৃষ্টির জন্য প্রার্থনার পর অবশেষে গতকাল রোববার দুপুর পৌনে ২টার দিকে মেহেরপুরে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা মিললো। ঘণ্টাব্যাপি এ বৃষ্টিতে স্বস্তি পেলো মেহেরপুরবাসী। বৈশাখের প্রথম থেকে জৈষ্ঠ্যের ১০ তারিখ পর্যন্ত মেহেরপুরে বৃষ্টির দেখা মেলেনি। এতে প্রচণ্ড রৌদ্র আর খর-তাপ সাথে ভ্যাপসা গরমে মেহেরপুরের মানুষ ও পশু-পাখি অতিষ্ঠ এবং ক্ষেতের উঠতি ফসল নিয়ে চাষিরা ছিলো বিপাকে। ঠিক সেই সময় আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি কামনা মেহেরপুরের শহর ও গ্রাম-গঞ্জের মানুষ দু রাকাত ইশতেসকার নামাজ আদায় ও বিশেষ দোয়া কামনার ব্যবস্থা করেন। হিন্দুরা তাদের ধর্মীয় উপাসানালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করে বৃষ্টি ডাকতে থাকে।গত রোববার মেহেরপুর পৌরসভার উদ্যোগে বৃষ্টির জন্য দু রাকাত ইশতেসকার নামাজ আদায় ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১১টার দিকে মেহেরপুর শহীদ ড. শামসুজ্জোহা পার্কে ওই নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইসলামিক টিভির সাবেক উপস্থাপক মাও. মাহমুদুল হাসান। নামাজে পৌর মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু, পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার শ’ শ’ মানুষ বিশেষ নামাজ ও দোয়া অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এদিন বেলা পৌনে ২টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে নারী পুরুষ ও শিশুরা রাস্তায় নেমে আসেন। বৃষ্টির পানিতে তারা শরীর জুড়ায়। কিশোররা ফুটবল নিয়ে মাঠে খেলা শুরু করে। অনেকে মোটরসাইকেল বের করে ভিজে ভিজে আনন্দ প্রকাশ করে।