চুয়াডাঙ্গা বিএনপি হঠাৎ চাঙ্গা হলেও যায়নি বিভক্তি : নেতৃত্বের পট পরিবর্তন আসন্ন?

শহীদ জিয়ার শাহাদত বার্ষিকী : আলমডাঙ্গা দর্শনা মুন্সিগঞ্জ ও মেহেরপুরের গাংনী বিএনপির নানা কর্মসূচি পালন

 

স্টাফ রিপোর্টার: খানেকটা হঠাত করেই চুয়াডাঙ্গা বিএনপির নেতৃবৃন্দ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে, তবে সকল নেতা এক মঞ্চে নেই। নেতাদের একাধিক বিভক্তির নতুন দৃশ্যপট দেখে সাধারণকর্মী সমর্থকদের মধ্যে তেমন সাড়া পড়েনি বলে মন্তব্য অনেকের। গতকাল আলমডাঙ্গা, দর্শনা, মুন্সিগঞ্জ ও মেহেরপুরে গাংনীসহ বিভিন্ন স্থানে শহীদ জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনাসভা, দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়।

গত পরশু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনের মধ্যদিয়ে চুয়াডাঙ্গা বিএনপির বিভক্তি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। পরশুর পৃথক আয়োজনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস একটিতে ছিলেন প্রধান অতিথি, অপরটিতে প্রধান অতিথি ছিলেন যুগ্মআহ্বায়ক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা। এ পক্ষের আয়োজনে যেমন ছিলেন যুগ্মআহ্বায়ক খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা, তেমনই লে.কনেল কামরুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার মখলেছুর রহমান টিপু তরফদার সদলবলে উপিস্থিত হয়ে জেলা বিএনপির নতূন মেরুকরণেরই জানান দিয়েছেন। কেউ কেউ নেতৃত্বে পট পরিবর্তন আসন্ন বলেও মন্তব্য করেছেন। শ্রীমন্ত টাউন হলের এ আয়োজনে উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি হলেও স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল অবশ্য এখনই এখনই নেতৃত্বের পট পরিবর্তনের অঙ্ক কষতে চাচ্ছেন না। তাদের অনেকেরই অভিমত, দীর্ঘদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি দ্বিধাবিভক্ত। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্যদিয়ে ঐক্যের যে সম্ভাবনা দেখা দেয়, তা ক্রমশ ম্লান হতে থাকে। আন্দোলন সংগ্রামে ঝিমিয়ে পড়ার পর হঠাৎ চাঙ্গাভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কতোটা এগিয়ে আসবে তাই এখন দেখার বিষয়।

গতকাল রোববার আলমডাঙ্গায় আয়োজিত বিএনপির অনুষ্ঠানমালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে যুগ্মআহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলাসহ তার পাশে পাওয়া নেতৃবৃন্দ বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্যদিয়ে কর্মী সমর্থকদের জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস গতকাল দলীয় কোনো আয়োজনে ছিলেন কি-না তা অবশ্য নিশ্চিত করে জানা যায়নি। গতপরশুর আয়োজনে তার সাথে ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক মজিবুর হক মজু, সদস্য শ্রমিকদল নেতা এম জেনারেল ইসলাম, অ্যাড. এমএম শাহজাহান মুকল প্রমুখ। দীর্ঘদিন ধরে অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের সাথে থাকা সাবেক জেলা ছাত্রদল সভাপতি জেলা বিএনপির সদস্য মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু সে পক্ষ ত্যাগ করে বর্তমান ও সাবেক ছাত্রদল নেতাদের সাথে নিয়ে পৃথকভাবে দলীয় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করেছেন পরশু। এ বিষয়টিও খাটো করে দেখছেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা উপজেলা ও পৌর বিএনপি একাংশের উদ্যোগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনাসভা, দোয়া ও দরিদ্র ভোজের আয়োজন করা হয়। গতকাল রোববার বিকেলে আলমডাঙ্গা হাজি মোড়স্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের পাশে মাঠে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনা দোয়া মাহফিল ও দরিদ্র ভোজে জেলা বিএনপির সদস্য ও একাংশের উপজেলা সভাপতি শহিদুল কাউনাইন টিলুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক ও জেলা যুবদলের আহ্বায়ক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা। প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য ও বিশিষ্ট শিল্পপতি (অব.) লে. কর্নেল কামরুজ্জামান, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলাম, পৌর সভাপতি ইসরাফ হোসেন, শহিদুল ইসলাম রতন, কৃষকদলের সম্পাদক বোরহান উদ্দিন, শামীম রেজা ডালিম, মাহমুদুল ইসলাম পল্টু, যুবদল নেতা মনা। জেলা বিএনপির সদস্য আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন মহিনুল ইসলাম, আলী হোসেন, আমজাদ হোসেন, আব্দুল লতিফ, মহাসিন মেম্বর, আক্তারুজ্জামান হাবলু, আকরাম হোসেন, মঈন উদ্দিন, মহাবুল মেম্বর, লিয়াকত আলী, কামাল হোসেন, মাসুদ পারভেজ, আব্দুল হান্নান, রেজাউল করীম, মহির উদ্দিন, লুডু খান, ওয়াহেদ, আলাউদ্দিন, বোরহান উদ্দিন, প্রফেসর মাহফুজ, মিজা, যুবদলের ওয়াহেদুল ইসলাম বাবু, মুকুল, রোকনুজ্জামান সোহাগ, রাজা, উজ্জল, মামুন, তাইজেল, চান্দু, সোহাগ, মাসুম, চিনির উদ্দিন, শরিফুল ইসলাম, ছাত্রদল নেতা তৌপিক খান, শওকত ওসমান, আবজাল, শাহাবুল, রুবেল, সাগর, লিটন, রবিউল, সিহাব, আজমির, রকিবুলম, জনি, জাহিদ, শাকিল, সজীব প্রমুখ। আলোচনাসভায় বক্তরা বলেন শহীদ জিয়া মরেও বেঁচে আছেন দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে। আগামীদিনগুলোতে খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করতে ওশামসুজ্জামান দুদুসহ সকল নেতাকর্মীকে অচিরেই মুক্ত করে সরকার পতনের আন্দোলতে বেগমান হওয়ার আহব্বান করেন।আলোচনা সভা শেষে শহীদ জিয়ার আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল ও দরিদ্রদের খাদ্য সরবরাহ করেন।

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার বাড়াদী ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৪তম শাহাদতবার্ষিকী পালিত হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে নতিডাঙ্গা দাখিল মাদরাসায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৪তম শাহাদতবার্ষিকী পালিত হয়। অনুষ্ঠানে জেলা ছাত্রদলের সদস্য শরিফুজ্জামান শরিফের আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি নেতা আব্দুল হামিদ। উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক তানজির আহম্মেদ ছোটন, বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাক সন্টু, টিপু মেম্বার, রসুল খা, ইসলাম খা, সেলিম, হাবে, খেদের আলী, রহিম, আমিরুল, মাসুদ, ইকলাচ প্রমুখ। দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন নতিডাঙ্গা আল আকসা জামে মসজিদের ইমাম শরিফুল ইসলাম।

            দর্শনা অফিস জানিয়েছে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৪তম শাহদাতবার্ষিকী পালিত হয়েছে। দর্শনায় বিএনপির দুটি পক্ষ পৃথকভাবে শাহাদতবার্ষিকী পালন করেছে। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা ও দর্শনা পৌর বিএনপির যৌথ আয়োজনে পুরাতন বাজারস্থ বিএনপির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে দোয়া মাহফিল, আলোচনাসভা ও দরিদ্রভোজ। আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা বিএনপি নেতা অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল কামরুজ্জামান বলেছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মতো সৎ, নির্ভীক ও যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক আর জন্মাবে বলে মনে হয় না। তিনি ছিলেন, ক্ষণ জন্মমা পুরুষ, স্বাধীনতার ঘোষক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। প্রধান বক্তা ছিলেন, জেলা বিএনপি নেতা ইঞ্জি. মোখলেসুর রহমান তরফদার টিপু, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী শাহ, দর্শনা পৌর বিএনপির সভাপতি হাজি খন্দকার শওকত আলী, বিএনপি নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, ফজলুর রহমান। দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খাজা আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য দেন, বিএনপি নেতা রহম আলী, আশরাফুল হক, আবুল কালাম, সানাউল্লাহ, মাসুদ রানা, আব্দুর রব, হায়দার আলী, আ. আলীম, আ. গণি, নাফিজ আক্তার, মনির উদ্দিন, নুরুল ইসলাম, জিন্নাত আলী, আব্দুল মান্নান, চান্দু মাস্টার, লুতফর রহমান, নাসির উদ্দিন খেদু, সোহেল তরফদার প্রমুখ। এ ছাড়া গত শনিবার বিকালে দর্শনা পৌর বিএনপির আয়োজনে বিএনপির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল। পৌর বিএনপির সহসভাপতি হাবিবুর রহমানের বুলেটের সভাপতিত্বে সভায় আলোচনা করেন, সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম, জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক সাবু তরফদার, বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেন, মোমিনুল ইসলাম, তোতা, রবি, জালাল, নুরু, রেজাউল, লুতফর, সেলিম, হারুন, পিয়ার, ফরজ, রুহিন, মিতুল, মালেক, আমজাদ, বাবলু, ব্রাইট, মান্নান, আজাদ প্রমুখ।

মেহেরপুরের গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রোববার বিকেলে মেহেরপুরের গাংনীতে আলোচনাসভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের নেতৃত্বে পরিচালিত বিএনপি নেতাকর্মীবৃন্দ গাংনীস্থ কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশের দিশেহারা মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে শহীদ জিয়া বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বিশেষ করে খাল খনন করে তিনি সাধারণ মানুষের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছিলেন। এ কারণে ঘাতকরা তার প্রাণ কেড়ে নেয়। তিনি চলে গেলেও রেখে গেছেন তার নীতি ও আদর্শ। বর্তমান সময়ে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নেই অভিযোগ করে বক্তারা আরো বলেন, শহীদ জিয়ার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সংগ্রামের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। স্থানীয় বিএনপির ব্যর্থ নেতৃত্ব পরিবর্তন করে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনেরও দাবি জানান তারা। গাংনী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বামন্দী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়ালের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান গাড্ডু, রাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আলফাজ উদ্দীন কালু, পৌর জিয়া পরিষদের সভাপতি আহসান হাবীব বাবু, সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহিদুল ইসলাম, ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিয়ার রহমান, উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন, কৃষকদল নেতা শহিদুল ইসলাম নাছির, আব্দুস সাত্তার, সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল মোতাবেল, বিকলুছ আহম্মেদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ছাত্রদল নেতা চপল বিশ্বাস।