চুয়াডাঙ্গা বিএনপির ঐক্য দুরস্ত : মাঠ পর্যায়ে সমর্থকরা ক্ষুব্ধ

 

আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শিপলুর দাবি- স্বঘোষিত নেতা সেজে বিবৃতিদান গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা বিএনপির দ্বিধাবিভক্তি দুর হয়নি। ঐক্য দুরস্ত পূর্বের মতো পাল্টা কমিটি গঠনের পাশাপাশি দু পক্ষই শক্তি সঞ্চয় করতে ব্যস্ত। এ অভিমত স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি আলমডাঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গা উপজেলা এবং পৌর সম্মেলন সম্পন্ন করলেও অপরাংশ আলমডাঙ্গা ও দর্শনায় পাল্টা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে। ইউনিয়ন পর্যায়েও পাল্টা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা বিএনপির আহ্বায়কসহ তিনজন যুগ্মআহ্বায়কের নেতৃত্বে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার মাঝে একজন যুগ্মআহ্বায়কসহ প্রবীণ কিছু নেতার নেতৃত্বে চলছে পাল্টা কমিটি গঠনের জোর তৎপরতা। এরই মাঝে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা বিএনপি যখন নিয়মতান্ত্রিকভাবে কমিটি গঠন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে তখন মীর মহিউদ্দীন ও শহিদুল কাউনাইন টিলুসহ কিছু ব্যক্তি স্বঘোষিত নেতা হয়ে পত্রিকায় বিবৃতি দিচ্ছেন, যা গঠনতন্ত্রের ৫ (গ) ধারা লঙ্ঘন। তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও অনুরোধ জানিয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই একাধিকভাবে বিভক্ত। নেতৃবৃন্দের বিভক্তিতে দলটির সাধারণ সমর্থকরাও ক্ষুব্ধ। তাদের অধিকাংশই বিএনপির দিক থেকে ক্ষোভে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এর এক পর্যায়ে গত ২৭ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে কেন্দ্র। অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে যুগ্মআহ্বায়ক করা হয় যথাক্রমে মাহমুদ হাসান খান বাবু, ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা ও মজিবুল হক মালিক মজুকে। ৫১ সদস্যের এ আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ দলের চেয়ারপার্সনের সাথেও দেখা করেন। তিনি দলকে সুসংগঠিত করার নির্দেশনা দেন। ৩ মে আহ্বায়ক কমিটির প্রথম ও পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৭মে সভায় কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। এসব সভা আহ্বায়কের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সকল যুগ্মআহ্বায়কসহ অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। কমিটি গঠন শুরু হতেই দ্বিধাবিভক্তের বিষয়টি প্রকাশ পায়। অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস সকলকে না নিয়ে নিজের মতো করে নিজের পছন্দের নিয়েই কমিটি গঠন করছেন বলে অভিযোগ উত্থাপন করে অনেকেই পাশ থেকে সরে দাঁড়ান। এক পর্যায়ে কিছু অনিয়মের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রে লিখিতভাবে নালিশ করেন যুগ্মআহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলাসহ অনেকে। এ পক্ষে আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র মীর মহিউদ্দীন যেমন সামিল হন, তেমনই তার দূর থাকা আলমডাঙ্গা উপজেলার সাবেক সভাপতি শহিদুল কাউনাইন টিলুও বিরোধ মিটিয়ে মীরমহির কাঁধে কাধ মেলান। অপরদিকে জীবননগর পৌর মেয়র হাজি নওয়াব আলী ও সাইদুর রহমান ধুন্দুর মতো নেতাদেরও অভিযোগ উত্থাপনকারীদের কাতারে পরিলক্ষিত হয়। এ পক্ষ কেন্দ্রে নালিশ করে প্রত্যাশিত প্রতিকার না পেয়ে পাল্টা কমিটি গঠনের পথে হাটতে শুরু করেন। যা বিগত দিনে অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসও হেঁটেছিলেন। অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের দেখানো পথেই হাঁটছে বিএনপির একাংশ। এরই মাঝে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু এক প্রেসনোটে জেলা বিএনপির কার্যক্রম সংগঠনের গঠনতন্ত্র এবং চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনা মোতাবেক হচ্ছে বলে দাবি তুলে বলেছেন, যারা যারা স্বঘোষিত নেতা হিসেবে পত্রিকায় বিবৃতি দিচ্ছেন তাদের বিবৃতিতেই স্পষ্ট তারা কতোটা রাজনৈতিক দেওলিয়া হয়েছেন। ওসব পরিহার করে জেলা বিএনপির নেতৃত্বে দলকে সুসংগঠিত করার কাজে সামিল হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু তার বিবৃতিতে বলেছেন, গত ৩মে জেলা বিএনপির প্রথম সভাতেই (পরিচিতি সভা)এ বিষয়ে আলোচনা করা হয় এবং পরবর্তী ১৭মে সভায় মূলএজেন্ডা ইউনিট কমিটি পুনর্গঠনের দিন নির্দ্ধারন করা হয়। সেইসাথে সকল উপজেলা এবং পৌর কমিটি সমূহকে তাদের অধিন্যাস্ত সকল ইউনিয়নও ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশপ্রদান করা হয়।ওই সভাসমূহে জেলা বিএনপির নব গঠিত আহ্বায়ক কমিটির ৫১ জন সদস্যের মধ্যে যথাক্রমে ৪৭ ও ৪৮ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।এই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলা ও উপজেলাধীন ১৫টি ইউনিয়ন এবং ১৪১টি ওয়ার্ড,আলমডাঙ্গা পৌর ও পৌরসভাধীন ৯টি ওয়ার্ড, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ও উপজেলাধীন ৭টি ইউনিয়ন এবং ৬৩টি ওয়ার্ড,চুয়াডাঙ্গা পৌর ও পৌরসভাধীন ৯টি ওয়ার্ড, দামুড়হুদা উপজেলাধীন ৮টি ইউনিয়ন এবং ৭২টি ওয়ার্ড, দর্শনা পৌর ও পৌরসভাধীন ৯টি ওয়ার্ড, জীবননগর উপজেলাধীন ৬টি ইউনিয়ন এবং ৫৪টি ওয়ার্ড,জীবননগর পৌরসভাধীন ৯টিওয়ার্ড সমূহের কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া অসম্পন্ন দামুড়হুদা উপজেলা,জীবননগর উপজেলা এবং পৌর সম্মেলনের তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে,চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি যখন যথাযথ প্রক্রিয়ারমাধ্যমে জেলা সম্মেলনের প্রস্তুতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সেই সময়, গুটিকয়সদস্য যারা ইতঃপূর্বেও স্বেচ্ছাচারী, পদ-পদবি কেনা বেচাকারী এবং আওয়ামীদোসর হিসেবে সমাজে বহুল পরিচিত,সেই সমস্ত ব্যক্তি নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থেদলের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ জুলাই দৈনিকমাথাভাঙ্গা পত্রিকায় জেলা বিএনপির নামে বিবৃতি প্রদান করেনিজেদেরকে স্বঘোষিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছেন।বিবৃতি প্রদানকারী মীর মহিউদ্দীন এবং শহিদুল কাউনাইন টিলু রাজনৈতিকভাবেকতোটা দেউলিয়া হয়েছেন তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ নিজেদেরকে স্বঘোষিত উপজেলা ও পৌরনেতা হিসেবে পত্রিকায় বিবৃতি প্রদান। যা দলীয় গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারারস্পষ্টত লঙ্ঘন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার আপামর জনসাধারণ ও সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিরনেতা, কর্মী, সমর্থক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ এ সমস্ত ভুইফোরদালাল নেতাদের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সতর্কথাকুন। সেইসাথে মহি-টিলু গংদের প্রতি জেলা বিএনপির অনুরোধ, জাতীয়ক্রান্তিকালে দলবিধ্বংসী এ সকল কর্মকাণ্ড পরিহার করে দল পুনর্গঠনে অংশগ্রহণকরুন। পাশাপাশি দলীয় গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারা স্পষ্টত লঙ্ঘনের দরুন বিএনপিচেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এ ধরনের কার্যকালাপে লিপ্তব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবিনয় অনুরোধজানাচ্ছি।