চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির আজীবন সম্মাননা পেয়ে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বললেন

 

জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সততার সাথে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই

স্টাফ রিপোর্টার: ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য সব সময়ই দৌড়ে গিয়ে সামনের বাস ধরেছি, হেটেছি দীর্ঘ পথ। আশে পাশের মানুষগুলো প্রেরণা যুগিয়েছে। পেয়েছি সফলতা। এখন মা, মাটি ও মানুষের কল্যাণে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সততার সাথে কাজ করতে চাই। চুয়াডাঙ্গার সকল প্রসূতির জরুরি প্রয়োজনে নিখরচায় নিকটস্থ হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করেছি। জেলা পর্যায়ে একটি নয়, ইচ্ছে আছে জেলার সকল উপজেলায় একটি করে এ ধরণের অ্যাম্বুলেন্স দেয়া। প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে অ্যাম্বুলেন্স দিতে পারলে ভালো হতো। সে চেষ্টাটাও থাকবে। কেনো না, প্রসূতি মাকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দিতে পারলে তিনি দ্রুত চিকিৎসা সেবা পাবেন। কিছুটা হলেও লাঘব হবে তার কষ্ট।’

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে আয়োজিত আজীবন সম্মাননা অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্ত অতিথির বক্তব্যে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা এ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার প্রতি আমাদের বহু দায়বদ্ধতা রয়েছে। চুয়াডাঙ্গার জন্য কিছু করতে পারলে ভালো লাগে।’ শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা ও সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিট যৌথভাবে এই সম্মাননা প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস দিলীপকুমার আগরওয়ালার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। এর আগে উত্তরীয় পরিয়ে দেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি এনটিভির প্রতিনিধি মোহা. রফিকুল ইসলাম।

চুয়াডাঙ্গার কৃতি সন্তান চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের দাতা সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা একাধারে দেশের শীর্ষ জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি তার সাফল্যের পেছনে কঠোর অধ্যাবসায়ের গল্প শোনান। তিনি বলেন, ‘সততা ও নিরলস পরিশ্রম আজ আমাকে এই সাফল্যের শিখরে নিয়ে গিয়েছে। এখনও আমি দৈনিক ১৬ ঘন্টা পরিশ্রম করি। আমার অধীনস্থ কর্মীদেরকেও মানসিকভাবে পরিশ্রমী হিসেবে গড়ে তুলেছি। কাজ দেখে আমি কখনই ভয় করেনি। ঢাকায় ব্যবসার শুরুতে অনেকের কাছে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে আটঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার রেকর্ড রয়েছে। অর্থাভাবে লোকাল বাসে চড়েছি। কোনো কোনো দিন ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটে কাজ সেরেছি। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি সম্মাননা দিয়ে আমার দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে আমার কর্মস্পৃহা আরও বাড়বে।’

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বক্তব্যদান শেষে নিজ খরচে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ভবনের তৃতীয়তলা নির্মাণের ঘোষণা দেন। একই সাথে চুয়াডাঙ্গার গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিনা খরচে জেলার অভ্যন্তরে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধার ঘোষণা দেন। গতকালই একটি নতুন অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স যাত্রা শুরু করে। চুয়াডাঙ্গার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল প্রতিষ্ঠা ও সমাজের অসহায় বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম করারও ঘোষণা দেন।

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি আজাদ মালিতার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস বলেন, দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে সম্মাননা জানিয়ে চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকরা সঠিক সময়ে সঠিক কাজটিই করেছেন। একজন গুণী মানুষের সন্মননা কাজে যুক্ত হতে পেরে ধন্য হয়েছি। বক্তব্যের এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক চুয়াডাঙ্গায় যোগদানের পর তার উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন। তিনি ডিসি ইকো পার্কে শিশুদের জন্য রাইড প্রদান, কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালুর জন্য অতিথিদের সহযোগিতা চান। এ সময় দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ও সিঙ্গাপুর প্রবাসী সাহেদুজ্জামান টরিক পর্যায়ক্রমে মিড ডে মিল বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান বলেন, যে দেশে গুণীদের কদর নেই, সে দেশে গুণীদের জন্ম হতে পারে না। আজকের আয়োজন বলে দিচ্ছে এই মাটি গুণীদের। কোনো মানুষ যদি তার কাজটি সুষ্ঠুভাবে করতে পারে তাহলে তার মধ্যে সফলতা আনা সম্ভব। কিন্তু সেটা করা বর্তমানে কঠিন কাজ। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সে কাজটি করেছেন তা অনেকেই পারে না। সন্মননা কাজে অনেক বাধা এসেছে কিন্তু আপনারা সফল হয়েছেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সিঙ্গাপুর প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের দাতা সদস্য সাহেদুজ্জামান টরিক বলেন, বিদেশে থেকেও চুয়াডাঙ্গার কল্যাণে সব সময় ভূমিকা রেখে চলেছি। কখনও সরাসরি, কখনও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কখনও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এই জেলার উন্নয়নে কাজ করে আসছি। এই জেলার মানুষের সাহচর্য্যে আমি বড় হয়েছি। এই জেলার কাছে আমার জন্ম জন্মান্তরের ঋণ। আমি চুয়াডাঙ্গা জেলা ও এখানকার মানুষের কল্যাণে আজীবন কাজ করতে চাই।’

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন। মাহতাব উদ্দীন বলেন, ‘ভালো কাজের মূল্যায়ন সব সময় থাকবে। নানান প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও চুয়াডাঙ্গার যোগ্য সন্তান দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জাতীয়ভাবে তার যোগ্যতার প্রসার ঘটাচ্ছে। আমরা তার উত্তর উত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শেখ সেলিম ও প্রথম আলোর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি শাহ আলম সনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করেন চুয়াডাঙ্গা থানা মসজিদের ইমাম মাওলানা আমীর হোসেন এবং গীতা পাঠ করেন অকুল চৈতন্য দাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন  সম্মাননা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক  চ্যানেল আই ও  দৈনিক জনকন্ঠের জেলা প্রতিনিধি রাজীব হাসান কচি। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাছরাঙা টিভির জেলা প্রতিনিধি ফাইজার চৌধুরী, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক এশিয়ান টিভির জেলা প্রতিনিধি আব্দুস সালাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা তথ্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক, চুয়াডাঙ্গা শিল্প ও বনিক সমিতির সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক ও চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের দাতা সদস্য মো. তৌহিদ হোসেন। এছাড়াও স্থানীয় সংবাদপত্রের সম্পাদকদের মধ্যে দৈনিক মাথাভাঙ্গার সম্পাদক ও প্রকাশক সরদার আল আমিনসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, ব্যবসায়ী কিশোর কুমার কুণ্ডু, পবিত্র কুমার আগরওয়ালা, রিপনুল হাসান রিপন, আশরাফ উদ্দিন জোয়ার্দ্দার টিমল ও দৈনিক আমার সংবাদের সম্পাদক হাশেম রেজা চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের দাতা সদস্য হওয়ার ঘোষণা দেন।