চুয়াডাঙ্গা দৌলাতদিয়াড়ে এটিএম বুথের নিরাপত্তা প্রহরীর রহস্যজনক মৃত্যু

 

হত্যা না আত্মহত্যা? লাশ নিয়ে কৌতহল

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বকুল হোসেন নামের এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার মামার ভাড়া বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত বকুল (২০) হোসেন সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার এটিএম বুথের একজন নিরাপত্তা প্রহরী ছিলেন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে বকুল আহমেদ ছেলে বেলা থেকেই নানা বাড়ি চাঁদপুরে থাকতেন। তিনি মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর মাদরাসায় লেখাপড়া করতেন। পারিবারিক সমস্যার কারণে তিনি অষ্টম শ্রেণির বেশি লেখাপড়া করতে পারেন নি। গত দু বছর পূর্বে তার বাবার সাথে মায়ের সম্পর্ক বিচ্ছেদ হলে মামা লাল্টুর সাথে দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার জামাত আলীর বাড়ি ভাড়ায় থাকতেন। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার ফাইভ স্টার সেভ সার্ভিসেস লিমিটেড তাকে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করলে চুয়াডাঙ্গা সোনালী ব্যাংকের এটিএম বুথে যোগদান করেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার তার ঝুলন্ত লাশ দেখে স্থানীয় এলাকাবাসীর মনে নানা প্রশ্নের উদয় হয়। তিনি কি আত্মহত্যা করেছেন না তাকে হত্যা করা হয়েছে?  কেউই এ প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারে নি।

এলাকাবাসী জানায়, কোনো কারণ ছাড়া কেউ আত্মহত্যা করতে পারে না। তার লাশ দেখে অনেক প্রশ্ন মনে জেগে ওঠে। কেউ আত্মহত্যা করলে তার লাশের সাথে মেঝের দূরত্ব কমপক্ষে ২ ইঞ্চিও হবে। কিন্তু তার লাশ মেঝেতে লুটিয়ে ছিলো। লাশের চেহারা দেখে আত্মহত্যার আলামত বোঝা যায় নি। কাউকে মেরে যদি ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয় তবে গলায় দাগ থাকাটা স্বাভাবিক। তাছাড়া লাশের পায়ের সামনে শোকেচের কাঁচ অক্ষত এবং পায়ের নিচে রাখা বালিশ ও কাঁথাগুলো এলোমেলো ছিলো না। যদি সে প্রকৃত পক্ষে আত্মহত্যা করতো তাহলে কোনো জিনিসই কি এলোমেলো হতো না? তবে লাশের ময়নাতদন্ত করলে প্রকৃত বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।

এদিকে বকুলের সহজ সরল মা আঙ্গুরা খাতুন ভিন্ন কথা জানান। তিনি বলেন, তার ছেলের সাথে কারও বিবাদ ছিলো না। তাকে কেনো কেউ হত্যা করলো বা কেন সে আত্মহত্যা করলো? তা ঠিক বুঝতে পারছি না। তাছাড়া লাল্টুর পাশের বাড়ির এক প্রতিবেশী আমাদের মোবাইলফোনে বিষয়টি জানায়।

বকুলের মামা লাল্টু মিয়া জানান, ভাড়ার বাড়িতে তিনি ও তার স্ত্রীসহ ভাগনে বকুল থাকতেন। সকালে তিনি তার কাজের জন্য ভালাইপুর যান। ঘটনার পর সকাল ১০টার দিকে একজন মোটরশ্রমিক তাকে খবরটি জানান। পরে দুপুরে সদর থানায় খবর দিলে এসআই অনুপ কুমার দাস সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোজাম্মেল হক জানান, বকুল আত্মহত্যা করেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে নিহতের নানা ফজলুল হক বাদি হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দয়ের করেছেন। তবে নিহতের অভিভাবকরা লাশ ময়নাতদন্ত না করার জন্য আবেদন করেন। তাই লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই শঙ্করচন্দ্র স্থানীয় কবরস্থানে নামাজের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে এলাকাবাসীর মনে কৌতুহল থেকেই গেলো।