চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার দলকা বিলের জমি দখল : উত্তেজনা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার লক্ষ্মীপুরে ইজারাকৃত দলকা বিলের ১শ বিঘা জমি  দখল ও সাড়ে ১১ বিঘা জমির তামাকক্ষেত কেটে বিনষ্ট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে বিল দলকার পাড় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষেতের  মালিকদের অভিযোগ নতিপোতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী ও তার অনুসারীরা গত মঙ্গলবার বিকেলে খুঁটি পুতে জমি দখল করে ও তামাকক্ষেত কেটে দেয়। এ ঘটনায় বিলের ইজারাদার মিজানুর রহমান লিটন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এদিকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কামরুজ্জামান গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য হামিদুল ইসলামসহ গ্রামবাসীরা পুলিশ কর্মকর্তাকে জানান, অতীতে এ বিল দখলকে কেন্দ্র করে অনেক প্রাণহানি ও রক্তারক্তির ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনিক কঠোর উদ্যোগ না নিলে আবারো খুনোখুনি হতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, চলতি বছর অনাবৃষ্টির কারণে জলমহালটি দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে দুই তৃতীয়াংশ এলাকা শুকিয়ে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। এ কারণে প্রায় ১শ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে লাল পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছে দখলদাররা। এরা হলেন, ভগিরতপুর গ্রামের মৃত বরকত আলীর ছেলে জাফর আলী, মৃত ফকির চাঁদের ছেলে আসাবুল হক, নিজাম উদ্দিনের ছেলে নজরুল ইসলাম ও আনারুল হক, রুহুল আমীনের ছেলে নাসেম আলী, মৃত তাছের আলীর ছেলে মোজাম ও সাজাহান, মৃত ইছাহাকের ছেলে রবিউল হক, মৃত আজিল হকের ছেলে ইলিয়াস ও মন্টু, মৃত জলো মণ্ডলের ছেলে আশাদুল এবং আব্দুল ফকিরের ছেলে ইউপি সদস্য আবু তালেব। লিখিত আবেদনে এ সকল ব্যক্তিবর্গ যাতে সরকারি ইজারাকৃত জলমহালে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে ।

গত ২৪ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন দলকা লক্ষ্মীপুরের ভাই ভাই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান লিটন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর বার্ষিক ৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা দরে ৬ বছরের ২৭৬ দশমিক ৪৮ একর জলমহাল ইজারার জন্য ভাই ভাই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান লিটনের অনুকূলে বরাদ্দ দেন।

লিটন জানান, ইজারা নেয়া বিলের বেশিরভাগ এলাকা আবাদি জমিতে পরিণত হওয়ায় তা সমিতির সদস্যদের মধ্যে নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে বন্দোবস্ত দেয়া হয়। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া সমিতির সদস্যরা এ জমিতে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন সদস্য শহিদুল ইসলাম আড়াই বিঘা, মুকুল হোসেন সাড়ে তিন বিঘা, সলিম হোসেন সাড়ে তিনবিঘা, আছের আলী ২৫ কাঠা ও নাজমুল ১৫ কাঠা জমিতে তামাক আবাদ করেছেন। যাদের তামাকক্ষেত কেটে সাফ করে দেয়া হয়েছে। এতে ওই কৃষকরা ছয়লাখ টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাছাড়া, সমিতির অন্যান্যরা ধান আবাদের জন্য জমি প্রস্তুতসহ বীজতলা তৈরি করছেন। জাফর আলীর নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ চক্রটি ইজারা নেয়া বিলের জমি দখলসহ ফসল কেটে নিয়ে যে দুঃসাহস দেখিয়েছে, তা প্রশাসনিকভাবে হস্তক্ষেপ না করলে এ সমিতির সকল সদস্য আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হবে।

এ ব্যাপারে নতিপোতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলীর সাথে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।