চুয়াডাঙ্গা টাউন দারোগার ঘাড়ে কোপ : মুমূর্ষু অবস্থায় পাকড়াও চিহ্নিত ত্রাস মিন্টু

শহর পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই ওহিদুলকে ঢাকায় রেফার্ড : পুলিশ প্রহরায় মৃতপ্রায় অবস্থায় মিন্টুকে নেয়া হয়েছে রাজশাহী
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ওহিদুল ইসলামের ঘাড়ে কোপ মেরে হাতে নাতে ধরা পড়েছে ফার্মপাড়ার মিন্টু। গতরাত পৌনে ৯টার দিকে জেলা শহরের ফার্মপাড়ার কদমতলা অরক্ষিত রেলগেটের অদূরেই এ ঘটনা ঘটে। এসআই ওহিদুলকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে। অপরদিকে গ্রেফতারের সময় গুরুতর আহত একাধিক মামলার আসামি মিন্টুকে পুলিশ প্রহরায় রাজশাহী মেডিকেলের উদ্দেশে নেয়া হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মাদক কেনাবেচা ও মাদককারবারিদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করে বেপরোয়া হয়ে ওঠা দু’দল যুবকের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে হামলা পাল্টা হামলার এক পর্যায়ে গতরাত পৌনে ৯টার দিকে ৮জনের একদল পুলিশ হকপাড়া-ফার্মপাড়া রেললেবেল ক্রসিং পার হতেই হামলার শিকার হয়। ১০-১২ জনের একদল যুবক ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেখানে অবস্থান করছিলো। পুলিশ ওই যুবকদের দিকে ছুটে গেলে তাদের কয়েকজন রুখে দাঁড়ায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে সজোরে মারে কোপ। ধারালো অস্ত্রের কোপে মোটরসাইকেলের লুকিংগ্লাসের অংশ কেটে যায়। একটি কোপ লাগে মোটরসাইকেলযোগে টহলরত এসআই ওহিদুল ইসলামের ঘাড়ে। দারোগার পেছেনে থাকা কনস্টেবল রিপন লাঠি দিয়ে অপর কোপ ঠেকিয়ে মোটরসাইকেল থেকে নেমে হামলাকারীকে ধরার চেষ্টা করেন। পেছনে থাকা অপর মোটরসাইকেলের কনস্টেবলরা ধাওয়া করে হাতেনাতে ধরে মিন্টুকে। সে ফার্মপাড়ার বুদোর ছেলে। তাকে গ্রেফতারের সময় গুরুতর আহত হয়। মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। তাকেসহ এসআই ওহিদুল ইসলামকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপর মাহবুবুর রহমান পিপিএম, সহকারী পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) আহসান হাবিব, সদর থানার ওসি ইন্সপেক্টর তোজাম্মেল হকসহ জেলায় কর্মরত পুলিশ অফিসারদের অনেকে হাসপাতালে আসেন। চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুও হাসপাতালে ছুটে আসেন।
হাসপাতালসূত্র বলেছে, এসআই ওহিদুল ইসলামের ঘাড়ে লাগা কোপটি বেশ গভীর এবং গুরুতর। ফলে তাকে গতরাতেই ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। আসামি মিন্টুর মুখ দিয়ে অনবরত রক্তক্ষরণের কারণে তার অবস্থাও আশঙ্কাজন হয়ে ওঠে। মুখ দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত মদের গন্ধ বের হওয়ায় তাকে অনেকেই মাতাল বলে মন্তব্য করেন। পুলিশ বলেছে, মিন্টু দীর্ঘদিনের চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় ৬টি মামলা রয়েছে। মামলাগুলোর সবগুলোতেই তার নাম রয়েছে এজাহারে।
স্থানীয়রা ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ফার্মপাড়া-হকপাড়া বস্তির অদূরবর্তী আলম বিহারির চা দোকান মাদক বিক্রেতাদের আখড়া হিসেবে চিহ্নিত। ওই মাদককারবারিদের নিকট থেকে মাসোহারা নিয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠা দুটি গ্রুপের মধ্যে মেয়েলি বিষয় নিয়ে বিরোধ দানা বাঁধে। তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই চলছে হামলা, পাল্টা হামলার ঘটনা। হকপাড়ার শামীম নামের একজনকে মারে একই মহল্লার ওসমান। শামীমের ভাই শরীফ প্রতিবাদ করতে গেলে তাকেও কুপিয়ে জখম করে ওসমানের লোকজন। এরপর শামীমের বন্ধু আরামপাড়ার কালামকে কুপিয়ে আহত করে ওই একই দলের সদস্যরা। পরপর হামলার শিকার হলে এদের লোকজন রুখে দাঁড়ায়। গতপরশু দুপুরের পর আলম বিহারির চা দোকান ও হকপাড়াস্থ ওসমানের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ নিয়ে এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। গতকাল সন্ধ্যার পর আবারও বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা দানা বাঁধলে খবর পৌঁছায় পুলিশের কাছে। শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে হকপাড়া-ফার্মপাড়ার কদমতলা রেললেবেল ক্রসিং পার হতেই দেখেন ওসমানের লোকজন অবস্থান করছে। তাদের ধাওয়া করতেই রুখে দাঁড়ায় কয়েকজন। তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ বসিয়ে দেয় দারোগার ঘাড়ে। দৃশ্য দেখে স্থানীয়দের অনেকেই প্রশ্ন তুলে বলেন, কতোবড় কলজে না হলে পুলিশ অফিসারের ঘাড়ে কোপ মারতে পারে?