চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের ভাণ্ডারদহে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে স্কুলছাত্র রাব্বী নিহত : বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুরসহ আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বাস

স্টাফ রিপোর্টার/ডিঙ্গেদহ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পাঁচমাইল-ভান্ডারদহে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় সাইকেল আরোহী স্কুলছাত্র রাব্বি (১১) নিহত হয়েছে। বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে আহত হয়েছে বাসে থাকা দু পরিবারের ছয়জনসহ ১০ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ জনতা দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।

সংস্কারাধীন সড়কে বেপরোয়াগতিতে বাস চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। তারা বলেছে, বাসটি চুয়াডাঙ্গা থেকে ঝিনাইদহের দিকে ছুটছিলো, আর বাইসাইকেল নিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসছিলো স্কুলছাত্র রাব্বি। বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টো দিকে গিয়ে স্কুলছাত্র রাব্বীকে ধাক্কা দিয়ে খাদে পড়ে।

নিহত রাব্বী সদর উপজেলার সুবদিয়া গ্রামের সাইদুর রহমান রানার ছেলে এবং স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র । নিহত রাব্বী দৈনিক মাথাভাঙ্গার সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি ও সরোজগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়ার ভাগ্নে। রাব্বির মৃতদেহ গতকালই হাসপাতাল থেকে নিজ বাড়ি সুবদিয়ায় নেয়া হয়। আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় নামাজে জানাজা শেষে গ্রামেরই কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হবে। দুর্ঘটনায় আহতদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আহত বাসযাত্রীরা হলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার শেখপাড়ার একরামুল হক (৫৫) এবং তার স্ত্রী শানু বেগম (৫০) ও ছেলে আল আমিন (১২), মেহেরপুরের গাংনীর সানোয়ার হোসেন (৩৭) এবং তার স্ত্রী হিরা খাতুন (৩০) ও ছেলে রওশন আলী (১০), যশোরের বাঘারপাড়ার হাদিউজ্জামান (৩০) ও খামারপাড়ার আসাদুজ্জামান (৪৫), মাগুরার রথতলা এলাকার কৃষ্ণপদ ও খুলনার বয়রা এলাকার করিম উদ্দিন (৪৫)। আহতদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ জানায়, শাহ ফরিদ পরিবহনের         (ফরিদপুর-জ-১১-০০২৩) একটি বাস চুয়াডাঙ্গা থেকে ফরিদপুর যাচ্ছিলো। বিকেল ৩টার দিকে বাসটি পাঁচমাইল-ভাণ্ডারদহ নামক স্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ২০ ফুট গভীর খাদে উল্টে যায়। এ সময় সাইকেল আরোহী শিশু রাব্বি এবং বাসের ১০ জন যাত্রী গুরুতর আহত হন। আশপাশের লোকজন আহতদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়।

এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা থেকে দমকলের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই বাসটি ভষ্মীভূত হয়ে যায়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। নিহত শিশু রাব্বির ৫ দিন আগে ভাই হয়েছে। ছোট ভাইকে রেখেই চলে যেতে হলো তাকে। মৃত্যুপুরি সড়কে বাইসাইকেল চালাতে গিয়ে হারাতে হলো প্রাণ। কিছুদিন আগে তার মামা জিয়াউর রহমান জিয়া বাইসাইকেলটি কিনে দেন। ভাগ্নের মৃত্যুর খবরে মামাসহ পরিচিতদের কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।

রাব্বি সরোজগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকার সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জিয়াউর রহমান জিয়ার ভাগ্নে সরোজগঞ্জ আঙ্গুর ইসলামী একাডেমির ৫ম শ্রেণির ছাত্র এবং ভাণ্ডারদহ গ্রামের সাইদুর রহমান রানার ছেলে। রাব্বিকে বাস চাপা দিয়ে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে ঘাতক বাস ড্রাইভাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সরোজগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিটের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, সহসভাপতি হাবিবুর রহমান, যুগ্মসম্পাদক আলম আশরাফ, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম লিন্টু, জহুরুল ইসলাম, মোস্তফা মানিক, রাজু আহাম্মেদ, হেলাল উদ্দিন, সুজন মাহামুদ, শওকত মাহামুদ, মনোয়ার হোসেন, কবির দুখু মিয়া শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।