চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কে আলমসাধু উল্টে চালকের পিতা নিহত : আহত ৬

আত্মীয়ের লাশ দেখতে গিয়ে নিজেই লাশ হয়ে ফিরলেন পাঁচলিয়ার বৃদ্ধ দিনমজুর

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আত্মীয়ের লাশ দেখতে গিয়ে আলমসাধু উল্টে নিজেই লাশ হয়ে ফিরলেন আলমডাঙ্গার নওদা পাঁচলিয়া গ্রামের হতদরিদ্র বৃদ্ধ ইজাল উদ্দীন (৬৪)। এ সময় একই পরিবারের আরও ৬ জন রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। এদের মধ্যে আসমা নামের এক মহিলাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। গতকাল সকালে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের নবীননগর এলাকায় কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে আলমসাধুচালক ব্রেক করলে ওই বিপত্তি ঘটে।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার পল্লি নওদা পাঁচলিয়ার মৃত মানিক সর্দারের বড় ছেলে হতদরিদ্র ইজাল উদ্দীনের বিয়াই চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মর্তুজাপুরের আসগর আলী গত শুক্রবার রাতে মারা যান। এ মৃত্যু সংবাদ শুনে গতকাল শনিবার ভোরে ইজাল উদ্দীন তার ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, ছেলে, ছেলের স্ত্রী, নাতি-নাতনি নিয়ে আলমসাধুযোগে মৃত বিয়াইকে দেখতে যাচ্ছিলেন। ওই আলমসাধুরচালক ছিলেন ইজাল উদ্দীনের ছেলে সোহেল (২৫)। সকাল ৭টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের নবীননগর এলাকায় পৌঁছুলে সড়কের ওপর দু কুকুর জড়াজড়ি করছিলো। ওই সময় চালক সোহেল কুকুর বাঁচাতে গিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে চলা আলমসাধু গাড়িতে ব্রেক করেন। এতে উল্টেপাল্টে ছিটকে পড়ে যাত্রীসহ আলমসাধুটি। আলমসাধুর ৭ যাত্রীর সকলেই কম বেশি রক্তাক্ত জখম হন। সবচে’ বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হন বৃদ্ধ ইজাল উদ্দীন। তার হাত-পা ভেঙে যায়। এক চোখে আঘাত লেগে রক্তাক্ত জখম হন। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। এছাড়া মৃত ইজালের মেজ ভাই আলাল উদ্দীন সর্দার আলা (৫৫), তার স্ত্রী আসমা খাতুন (৪৩), ইজাল উদ্দীনের ছেলে আলমসাধুচালক সোহেল (২৫), সোহেলের স্ত্রী সালমা খাতুন (২০), শিশুপুত্র সোহরাব ও শিশুকন্যা উর্মি রক্তাক্ত জখম হয়। এদের সকলের হাত, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে যায়। তাদেরকেও উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে আলা সর্দ্দারের স্ত্রী আসমা খাতুনের অবস্থা গুরুতর। তিনি মাথায় ও মুখের এক পাশে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে তার অবস্থার উন্নতি না হলে ঢাকাস্থ পঙ্গু হাসপাতালে তাকে রেফার করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে মাইক্রোবাসযোগে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ সংবাদ লেখা অবধি তার জ্ঞান ফেরেনি। এদিকে গতকাল বিকেলে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। জানাজা শেষে বাদ আছর পারিবারিক গোরস্তানে তার লাশ দাফন করা হয়েছে।

নিহত ইজাল উদ্দীনের পরিচয়: মৃত মানিক সর্দারের ৩ ছেলের মধ্যে ইজাল উদ্দীন ছিলেন সকলের বড়। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী। তার স্ত্রী পূর্বেই মারা গেছেন। তিনি ১ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক। ছেলে সোহেল ঘাতক আলমসাধু চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।