চুয়াডাঙ্গা জেলা মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসকের হুঁশিয়ারি

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন বলেছেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি অনেক কর্মকর্তা সপ্তাহে মাত্র তিনদিন অফিস করেন, নানা অজুহাতে বৃহস্পতিবার ও রোববার ফাঁকি দেন। তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন,ফাঁকিবাজ কর্মকর্তাদেরকে এসব প্রবণতা ভুলে যেতে হবে। যারা প্রায়ই অফিস ফাঁকি দেন,তাদের তালিকা আমার কাছে আছে। ধরা পড়লেই বুঝবেন ফাঁকি দেয়ার আসল মজা কতোটুকু।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১০টায় জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় জেলা প্রশাসক উপরোক্ত মন্তব্য করেন। সভা চলাকালে কোন কোন দপ্তরের প্রধানের পরিবর্তে অধঃস্তন এবং কোন কোন কর্মকর্তা একেবারেই আসেননি তাদের বিষয়ে খোঁজ নেন। জেলা প্রশাসক এসময় বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নানান কাজের অজুহাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তার কাছে বৃহস্পতিবার ও রোববার অফিস ফাঁকি দেয়া একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। অফিসে খোঁজ নিলে অধঃস্তনরা জানান,স্যার ফিল্ডে রয়েছেন। অথচখোঁজ নিয়ে জানা যায় ফিল্ডে যাওয়ার বিষয়টি অজুহাত মাত্র। এখন থেকে আর কোনো অজুহাত দেখানো চলবে না।

‌                জেলা প্রশাসক ক্ষোভের সাথে বলেন,বিগত দুমাসের প্রচেষ্টায় মাত্র দুদিন কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতি পেয়েছি। অথচন্যূনতম অনুমতি ছাড়াইকাউকে না জানিয়েই বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা সার্ভিস রুল না মেনে খেয়ালখুশিমতো জেলার বাইরে অবস্থান করছেন। সে সুযোগ আর দেয়া হবেনা। সিভিল সার্জনের দায়িত্ব যদি প্রায়ই একজন মেডিকেল অফিসারকে দেয়া হয় তাহলে স্বাস্থ্যবিভাগে শৃঙ্খলা কীভাবে থাকবে?জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন উপস্থিত এসময় সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, সার্ভিস রুল অনুযায়ী প্রত্যেক কর্মকর্তাকে কর্মস্থল ত্যাগের স্পষ্ট নিয়ম রয়েছে। সকলকেই এটা মানতে হবে।

সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন,জেলা প্রশাসক মো.দেলোয়ার হোসাইন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনজুমান আরার সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ হামীম হাসান, সিভিল সার্জন মো. আজিজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দীন, জীবননগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ অমল, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন, শিক্ষকঅভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোত্তালিবসহ জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ কমিটির সদস্যরা।

সভায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডাক্তারদের সঠিক সময়ে উপস্থিতি ও প্রস্থানের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানকে দালালমুক্ত করা এবং সরকারি ওষুধের সঠিক ব্যবহারের কথাও বলা হয়। মাধ্যমিক যেসব বিদ্যালয়ে সরকারিভাবে দেয়া ইংরেজি গ্রামার ও বাংলা ব্যাকরণ পড়ানো হয়না এবং বিভিন্ন প্রকাশনীর বই কিনতে বাধ্য করে, ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা নকল বীজ ও সার বাজারে বিপণন করছে তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসক এসময় জানান, তিনি বাজার থেকে লাউয়ের বীজ কিনেছিলেন,সুন্দর গাছ হলেও কোনো লাউ ধরেনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে তাদেরকে মোবাইল কোর্টে তাৎক্ষণিক বিচার করা হবে।

সভায় আসন্ন রমজান মাসে ভেজালমুক্ত খাবার বিক্রির গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়, কোনোভাবেই যাতে কেউ ফরমালিন মেশানো খাবার বিক্রি করতে না পারে সেদিকে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। চাহিদার সুযোগে মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সেহরি,ইফতার ও তারাবি নামাজের সময় বিদ্যুত নিশ্চিত করতে হবে। জেলা মার্কেটিং অফিসার এসময় সভাকে জানান, খেজুরের ব্যবসায়ীরা তাকে জানিয়েছেন, আমদানিকৃত বেশিরভাগ খেজুরে ফরমালিন দেয়া।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, চিত্রা ও কুমার নদসহ যেসব জলমহালে এক শ্রেণির ভুমিদস্যুরা জোর করে অথবা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে পুকুর খনন করছে তাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান চালাতে হবে। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ইউএনওরা এব্যাপারে সজাগ থাকবেন। জেলার সবকটি পৌরসভায় আধুনিক পশুজবেহখানা তৈরির ওপরও সভায় জোর দেয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে বিভিন্ন খাতে যেসব অর্থ খরচ হচ্ছে তা নীতিমালা অনুযায়ী হচ্ছেনা বলে জেলা প্রশাসক মন্তব্য করেন। ঈদের আগেই যাতে তালিকাভুক্ত সকল সুবিধাভোগী তাদের ভাতা হাতে পায় সেজন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাকে পরামর্শ দেয়া হয়। সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প ঢিলেঢালাভাবে চলছে বলেও মন্তব্য করা হয়। এছাড়া অন্যান্য সরকারি দপ্তরের কাজ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা হয়।

সভার শেষ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক উপস্থিত সকল কর্মকর্তাকে সতর্ক করে দেন আগামীতে নির্ধারিত সভায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের যথাযথ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেই আসতে হবে। যারা আসবেন না, তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে।