চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি একীভূত হওয়ার সম্ভাবনায় ভাটা : সমর্থকদের আশার গুড়ে বালি

 

 

বিএনপির কমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রে নালিশের প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা বিএনপির উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে, মানা হচ্ছে না গঠনতান্ত্রিক নিয়ম-কানুনসহ কেন্দ্রীয় নিদের্শনা। এ মর্মে অভিযোগ তুলে জেলা বিএনপির এক যুগ্মআহ্বায়কসহ আহ্বায়ক কমিটির প্রবীণ ও প্রথম সারির সদস্যদের অনেকেই লিখিভাবে কেন্দ্রে নালিশের প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সাথে মৌখিকভাবে আলোচনাও করেছেন অভিযোগ উত্থাপনে উদ্যোগী বেশ কয়েকজন নেতা।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি ছিলো বহুভাগে বিভক্ত। বিএনপি নেতৃবৃন্দকে একীভূত করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করার লক্ষ্যে পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন জেলা আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দিয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। গত ২৭ এপ্রিল অনুমোদিত আহ্বায়ক কমিটিকে ৪৫ দিনের মধ্যে থানা, পৌর ও ইউনিয়ন কমিটি গঠনপূর্ব জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্মেলনের নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে জেলা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্মেলন আয়োজন হচ্ছে না তা ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে। একাধিক যুগ্মআহ্বায়কের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা অভিন্ন ভাষায় বলেছেন, জেলা সম্মেলনের জন্য আমরা সময় বৃদ্ধির আবেদন জানাবো। কেন্দ্রের বেশ কয়েকজন নেতার সাথে মৌখিকভাবে এ বিষয়ে কথাও হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। ১ম যুগ্মআহ্বায়ক কেন্দ্রীয় যুবদলের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদ হাসান বাবু। বাকি ৩ যুগ্মআহ্বায়ক হলেন- যথাক্রমে ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা ও মজিবুল হক মজু। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু ও সভাপতি হাজি মোজাম্মেল হককে আহ্বায়ক কমিটিতে প্রথম ও দ্বিতীয় সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। শামসুজ্জামান দুদু সদস্য হলেও তার ভাই জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক হিসেবে থাকলেও উপজেলা ও তার অধীনস্থ ইউনিটের কমিটিতে অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের পছন্দের এবং তার অনুসারী হিসেবে পূর্বে পরীক্ষিতরাই গুরুত্বপূর্ণ পাদে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন নির্বাচনী এলাকার সকল ইউনিটে অহিদুল ইসলামের অনুসারীদের আধিক্য বিএনপির সকল অংশকে একীভূত নিয়ে প্রশ্ন দানা বেধেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল এ মন্তব্য করে বলেছে, যেভাবে কমিটি গঠন হচ্ছে তা দেখে মনে হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা বিএনপির ঘরের আগুন নিভছে না।

এদিকে দলীয় একাধিক প্রবীণ নেতা বলেছেন, গঠনতন্ত্রের নিয়ম আনুযায়ী, জেলা আহ্বায়ক কমিটি থানা, পৌর ও ইউনিয়ন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করবে। ওয়ার্ড কমিটি গঠনের মাধ্যমে ইউনিয়ন সম্মেলনে ইউনিয়ন কমিটি গঠিত হবে। এরপর ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দই নির্বাচিত করবে উপজেলা তথা থানা কমিটি। থানা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের ভোট বা মতামতের মাধ্যমে গঠন করা হবে জেলা কমিটি। অথচ তা না করে জেলা আহ্বায়ক কমিটি ইতোমধ্যেই থানা কমিটি গঠন করে বসেছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ না করে শীর্ষ পাঁচজনের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে। তাও আবার আহ্বায়ক ও ১ম যুগ্মআহ্বায়কের স্বাক্ষরে। এছাড়া দুটি সাংগঠনিক থানা গঠন করে তার অনুমোদন ছাড়াই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতাকে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা-২ নির্বাচনী এলাকায় কিছুটা একীভূত হওয়ার মতো সমন্বয়ে কমিটি গঠন হয়েছে বলে ধরে নেয়া গেলেও চুয়াডাঙ্গা-১ নির্বাচনী এলাকায় চলছে চরম স্বেচ্ছাচারিতা। পোড়খাওয়া জনপ্রিয় নেতাদের কমিটিতে রাখা দূরের কথা, তাদের মতামতও নেয়া হচ্ছে না। ফলে চুয়াডাঙ্গা বিএনপির একীভূত হওয়ার সম্ভবনা ক্রমশ ফ্যাকাসে হয়ে উঠছে। মাঠ পর্যায়ে সমর্থকদের মাঝে বাড়ছে হতাশা। এসব তথ্য লিখিতভাবে আগামীকাল শনি অথব পরশু রোববার কেন্দ্রে পেশ করা হতে পারে। লিখিত অভিযোগে একাধিক যুগ্মআহ্বায়কসহ প্রবীণ ও প্রথম সারির সদস্যদের স্বাক্ষর থাকতে পারে।