চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে বাবু খানের প্রস্থান? পাল্টে গেছে চিত্র

মে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সভা আহ্বানের প্রস্তুতিতেই গেছে ভেস্তে 

স্টাফ রিপোর্টার: না, আগামী ৬ মে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সভা হচ্ছে না। বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এ সভা আহ্বানের জন্য বললেও তিনিই তা বাতিল করেছেবন। কেনো? সূত্র বলেছে, জেলা বিএনপির আহ্বায়কের সাথে যুগ্ম আহ্বায়কসহ অধিকাংশেরই ঐক্যমত না থাকার কারণেই হচ্ছে না এ সভা। সভা না হলেও পক্ষকালের মধ্যেই চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি নতুন কমিটি পাচ্ছে বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। ৬ মে সভা হচ্ছে না, তা হলে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির কমিটি গঠনকল্পে বৈঠক কবে নাগাদ বসবে? নাকি কেন্দ্রীয়ভাবেই আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে দেয়া হবে? এসব প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব মিলছে না। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার প্রত্যাশায় জোর লবিঙে রয়েছেন বেশ ক’জন। যদিও তৃণমূল পর্যায়ে কর্মী-সমর্থকদের দীর্ঘ প্রত্যাশিত মাহমুদ হাসান খান বাবু জেলার নেতৃত্বেও থাকছেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় পদ ছাড়ার পর অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, বাবু খান জেলার নেতৃত্বে আসছেন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে তরুণ শিল্পপতি কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা জেলা বিএনপির ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। অথচ তিনি জেলা বা কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে থাকবেন না? চুয়াডাঙ্গা বিএনপির কিছু নেতাকর্মীসহ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে এ প্রশ্ন নিয়ে সরব আলোচনা শুরু হয়েছে। তাদের অনেকেই বলেছেন, বাবু খান সভাপতি ও বুলা সাধারণ সম্পাদক হচ্ছে বলে শোনা গেলেও এক দেড় দু মাসে বদলে গেছে সে চিত্র। বর্তমান দৃশ্যপট ভিন্ন। সভাপতি পদে সম্ভাবনার শীর্ষে যাদের নাম রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি এম জেনারেল ইসলাম ও ডিউক হুদা। আর সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুল হক মজু, যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা, সদস্য রেজাউল হক মুকুট ও শরিফুজ্জামান শরিফ।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল কেন্দ্রীয়ভাবে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয়। অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে গঠিত ৫১ সদস্যের কমিটিকে জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্মেলন সম্পন্ন করার যাবতীয় দায়িত্ব দেয়া হলেও তা মূলত কিছুদিনের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়ে। আহ্বায়কের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছারিতাসহ নানা অভিযোগই শুধু উত্থাপন হয়নি, আন্দোনে নিস্ক্রীয়তাসহ নানা অভিযোগ-অনুযোগ উঠে আসে। কর্মী সমর্থকদের মধ্যে নেমে আসে হতাশা। অবশ্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ নিয়ে বাবু খানসহ কয়েকজন নেতার অগ্রণী ভূমিকায় কেউ কেউ আশান্বিত হলেও কমিটি গঠনে দীর্ঘ গড়িমশি চুয়াডাঙ্গা বিএনপির সাংগঠিনক ভিতকেই নড়বড়ে করে দিয়েছে। বহুভাগে বিভক্ত হওয়ার কারণে চুয়াডাঙ্গা বিএনপির করুন দশা ফুটে উঠেছে। এক সময় যে চুয়াডাঙ্গা ছিলো বিএনপির দুর্গ, সেই চুয়াডাঙ্গায় বিএনপির করুণদশা দেখে অনেক সমর্থকদের মধ্যেই বিরাজ করছে ক্ষোভ। এই ক্ষোভ, কর্মীদের হতাশা কাটিয়ে চুয়াডাঙ্গা বিএনপির করুণদশা দূর হবে কবে? এ প্রশ্নের জবাব মুলত ভবিষ্যতেরই গর্ভে। কেননা, স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দের মধ্যে তেমন কেউই কিছু বলতে পারছেন না। বাবু খান কেন চুয়াডাঙ্গার নেতৃত্বে আসছেন না? এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির একাধিক ব্যক্তিই বলেছেন, তিনি সরাসারি নেতৃত্বে না এলেও কর্তৃত্ব রাখার মতোই তিনি কমিটি গঠনের পক্ষে। সে হিসেবে তরুণদেরই পাশে রয়েছেন তিনি। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি শামসুজ্জামান দুদু পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্ত অবস্থানে। এরপরও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বিলম্ব কেন? অনেকেরই অভিমত, সারা দেশেই দলীয় কোন্দল বিভেদ কাটিয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে কিছু নেতার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে সাবেক মন্ত্রী রুহল কুদ্দুস তালুকদার দুলু চুয়াডাঙ্গা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাথে বৈঠকে মিলিত হওয়ার ইচ্ছে ব্যক্ত করে আগামী ৬ মে সভা আহ্বানের কথা বলেন। সভা আহ্বানের প্রস্তুতিও শুরু হয়। কিন্তু না, চুয়াডাঙ্গা বিএনপির বর্তমানে বহুমুখি বিরোধ ও আহ্বায়কের ওপর যুগ্ম আহ্বায়কসহ কমিটির অধিকাংশের আস্থাহীনতার বিষয়টি জানার পর রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুই সে সভা আহ্বান করতে বারণ করেন। ফলে কেন্দ্রীয়ভাবেই চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে দেয়ারই সম্ভাবনা বেশি বলে মন্তব্য অনেকের।