চুয়াডাঙ্গা জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

 

স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র রমজান ও ঈদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার মধ্যদিয়ে গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বেলা ১১টা থেকে টানা দুঘণ্টাব্যাপি এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মল্লিক সাঈদ মাহবুবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছালেহ উদ্দিন, সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম, দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ অমল, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম মামুনউজ্জামান, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ও জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাফিজসহসহ জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, রমজানে ও ঈদে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে। মানব সম্পদ উন্নয়নমূলককাজ যাতে স্থিতিশীল থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। টেন্ডারবাজি বন্ধ করতে হবে। জনগণকে সেবা নিশ্চিত করতে হবে। জেলার নদীগুলোকে খনন করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মারা গেলে সন্তানরা ওয়ারিশ হিসেবে ভাতার টাকা পাবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে লেখাপড়া করাতে হবে। কোনো কিছুর ঘাটতি থাকলে নিজস্ব তহবিল থেকে কিনে নিতে হবে। হাইস্কুল ও প্রাইমারি স্কুলগুলোতে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ঈদের পর শহরসহসারা জেলায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। শিশু একাডেমীর বই বিক্রির বিষয়ে জেলা ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদেরকে সহায়তা করতে হবে। ভূমি উন্নয়ন কর নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে। তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। পাটজাত বস্তা ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। চালের বস্তা প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাটের বস্তা ব্যবহার করতে হবে। যেসব চালকল মালিক এসব ব্যবহার করবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সঞ্চয়পত্রে আগের তুলনায় লাভ বেশি দিচ্ছে। সঞ্চয়ী মনোভাব নিয়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো আছে। টেন্ডার নিয়ে কোনো অসুবিধা হলে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে।সড়ক বিভাগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ঈদের আগে সকল সড়ককে চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। ঈদের যাত্রী আনা নেয়ায় বড় ধরনের নিরাপত্তা দেয়া হবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সদর হাসপাতালের আউটডোরে ডিউটি আওয়ারে ডাক্তারেরা খেয়ালখুশি মতো আসা যাওয়া করায় রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ডাক্তারেরা যাতে সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত আউটডোরে রোগী দেখেন,সে ব্যাপারে সিভিল সার্জনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।একই প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডাক্তারদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। যার যেখানে পোস্টিং তাকে সেখানে থাকতে হবে। সদর হাসপাতালে ডাক্তারদের উপস্থিতি ও প্রস্থানের জন্য বসানো আঙুলের ছাপ সংবলিত আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। উপজেলা পরিষদ সমূহে দ্রুত প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন করা। প্যানেল নির্বাচন নিয়ে জটিলতা মোকাবেলায় দুজনকে পালাক্রমে দায়িত্ব দেয়ার জন্য আলোচনা করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচে ১৪২ প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় ও অনিয়ম করায় সভায় বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, আগামী মাসিক সভায় কাজের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীকে অনুরোধ করেন।

জীবননগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ অমল বলেন,জীবননগর উপজেলা মৎস্য উৎপাদন খামারটি সচল করতে হবে। খামারের পুকুরগুলো তদারকি না হওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে সবগুলো পুকুর একটি পুকুরে পরিণত হবে। পুকুরে পোনা উৎপাদন করে এলাকার চাহিদা মেটাতে হবে।এ প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বজলুর রশীদ বলেন,আয়রন সমস্যা থাকায় পোনা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পানিতে আয়রনমুক্ত করাসহ খামারটিকে ব্রুডব্যাংকে উন্নীত করণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিদ্যুত প্রসঙ্গে ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান আলী জানান, রাতের বেলা ইজিবাইকের চার্জার পয়েন্টগুলোতে বিদ্যুত ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এবং অবৈধ এসি ব্যবহারের কারণে গত ছয়মাসে ১০টি ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে গেছে। আমরা এসির অনুমতি না দিলেও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ এসি দোকানগুলো থেকে বিক্রি হচ্ছে। এটার প্রতিরোধ প্রয়োজন। সভায় পল্লী বিদ্যুত সমিতিকে এক এলাকায় ঘনঘন লোডশেডিং না দিয়ে পর্যায়ক্রমে এলাকাভাগ করে লোডশেডিং দেয়ার জন্য বলা হয়।