চুয়াডাঙ্গা জেলায় সিনেমা হল বন্ধ হয়ে তৈরি হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনকে দায়ী করছেন কর্তৃপক্ষ

 

চুয়াডাঙ্গা জেলায় সিনেমা হল বন্ধ হয়ে তৈরি হয়েছে মাদ্রাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জেলায় ১৩ টি সিনেমা হলের মধ্যে চালু আছে মাত্র ২টি তাও চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। হল বন্ধের কারনে প্রশাসনকে দুষলেন কর্তৃপক্ষ।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সাধারণ বিভাগ থেকে জানা যায়, এ জেলায় ১৩টি সিনেমা হল ছিলো। এর মধ্যে ২টি হল চলছে খুবই নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শহরের রূপছায়া (বর্তমানে পান্না) ও নান্টুরাজ, সরোজগঞ্জের মিতালী, আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরে আলমডাঙ্গা টকিজ, শিলা ও জনি, জামজামি ইউনিয়নের আঁখি সিনেমা হল, দামুড়হুদা উপজেলা শহরে ছবি ঘর, দর্শনায় হিরা ও দর্শন সিনেমা হল এবং কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নে মিন্টুরাজ, জীবননগর উপজেলা শহরে আধুনিক এবং মহানগর সিনেমা হল মোট ১৩টি সিনেমা হল ছিলো। এর মধ্যে রোজার ঈদে চুয়াডাঙ্গার পান্না ও আলমডাঙ্গা টকিজ সিনেমা হল চলবে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা শহরের চলচিত্র অভিনেতা মরহুম সিদ্দিক জামাল নান্টুর মালিকনাধীন নান্টুরাজ সিনেমা হল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ মিতালী সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক যুগিরহুদা গ্রামের রইস দারোগা ভূট্টা  রাখার গোডাউন করে দিয়ে ভাড়া দিয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের শিলা সিনেমা হল পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানকার জনি সিনেমা হলটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। একই উপজেলার জামজামি ইউনিয়নের আঁখি সিনেমা হলটি এখন গোডাউন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দামুড়হুদা উপজেলা শহরের ছবি ঘর সিনেমা হলটি হয়ে গেছে “ দারুস সুন্নাহ ইসলামীয়া মাদ্রাসা”। দর্শনার হিরা সিনেমা হল ভেঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে বিপনি বিতান, সেখানকার আরেকটি সিনেমা দর্শন ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। একই উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের মিন্টুরাজ সিনেমা হল ভেঙ্গে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে সেখানে চলছে চাষাবাদ। জীবননগর উপজেলা শহরের আধুনিক সিনেমা হল ভেঙ্গে তৈরি করা হয়েছে ক্লিনিক আর মহানগর সিনেমা হল ভেঙ্গে হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গোডাউন।

চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাকরি করেন সাঈফ কাদির হাসান পিট্টু। তিনি বলেন, আগে সিনেমা হল গুলোতে প্রতি শুক্রবার নতুন সিনেমা আসতো। ওই সিনেমা দেখার জন্য আমরা ব্যাকুল হয়ে থাকতাম। বন্ধুদের নিয়ে সিনেমা দেখার মজাই ছিলো আলাদা। সিনেমা দেখা নিয়ে একই মন্তব্য করেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইউনুস আলী। তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গায় সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে দেখতে এক ঘেয়ে হয়ে যাওয়ায় আমরা আগে দল বেঁধে পাশের জেলা কুষ্টিয়া ও যশোরে যেতাম। অনেক সময় খুলনায় গিয়েও আমরা সিনেমা দেখে এসেছি। তখনকার সিনেমার মানও ভাল ছিলো। সে কারনে অনেক সিনেমা একবার দেখে বারবার দেখার ই”ছা জন্মাতো। এখন সেটা আর নেই।

চুয়াডাঙ্গার পান্না সিনেমা হল ও আলমডাঙ্গা টকিজের ব্যবস্থাপক আব্দুর রশিদ হিরা বলেন, তারা এবার রোজার ঈদে দুটো সিনেমা হল চালাবে। সে ধরনের প্রস্তুতিও তারা নিয়েছে। সিনেমা হল গুলো না চলা এবং সেখানে দর্শক না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক মান সম্মত সিনেমা তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া আমরা হল গুলো আধুনিকায়ন করেছি। সে কারনে দর্শক, হলে এসে সিনেমা দেখতে চাচ্ছে। কিন্তু এখানে বাঁধ সাজছে স্যাটেলাইট চ্যানেলের ব্যবসায়ীরা। তারা রাজনৈতিক ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ আস্কারায় নিজেরাই অবৈধ চ্যানেল খুলে বসেছে। সেখানে তারা অবৈধভাবে নিত্য নতুন সিনেমা দেখায় ও বিজ্ঞাপন প্রচার করে। এতে দর্শক হলে আসেনা। সরকার  ও হল মালিকরা যথেষ্ট ক্ষতির মুখোমুখিতে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমার সিনেমা হলে একটা বিজ্ঞাপন প্রচার করলে সরকার আমাদের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট পেতো। কিন্তু স্যাটেলাইট চ্যানেলের স্থানীয় পরিশেকরা তাদের অবৈধ চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করলেও তারা সরকারকে কোন ভ্যাট দেয়না। তিনি বলেন, ইচ্ছা করলে জেলা প্রশাসক ও তথ্য কার্যালয় স্যাটেলাইট চ্যানেলের অবৈধ ব্যবসা এক মুহুর্তেই বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু তারা অদৃশ্য কারনে তা করেন না। ব্যবস্থাপক আব্দুর রশিদ হিরা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত প্রযোজিত “আমি শুধু চেয়েছি তোমার ও রোমিও জুলেট” সিনেমা দুটি বাংলাদেশ ও ভারতে একই দিন ছাড় পাওয়ায় ভাল চলেছিলো এবং সিনেমা হল মালিকরা কিছু টাকা উপার্জন করতে পেরেছিলো। এ ভাবে নিয়ম মেনে সিনেমা চালালে অবশ্যই সিনেমা হলে দর্শক আসবে আর মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ’ হবে না।

চুয়াডাঙ্গা জেলা তথ্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, স্যাটেলাইট চ্যানেলের স্থানীয় পরিবেশকরা যে চ্যানেল তৈরি করে সিনেমা ও বিজ্ঞাপন প্রচার করছে তা অবশ্যই অবৈধ। সিনেমা হল গুলো আধুনিকায়নের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় হল মালিকদের সুযোগ দিয়েছে। তারা এই সুযোগ নিতে পারে। তাছাড়া সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া স্যাটেলাইট চ্যানেলের আগ্রাসন ঠেকানো সম্ভব নয়।