চুয়াডাঙ্গা চেম্বার নির্বাচন স্থগিত রাখার আদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত

১৫ জনের প্রার্থী কেনো অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা ৪ সপ্তাহের মধ্যে জানানোর আদেশ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (২০১৮-২০২০) নির্বাচন ৬ মাসের জন্য স্থাগিতাদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। মফিজুর রহমান মনার আনিত রিটের শুনানী শেষে উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি নায়মাই হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদ এ আদেশ দিয়ে ১৫ জনকে তাদের প্রার্থীতা কেনো বাতিল করা হবে না তা ৪ সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর আদেশ দিয়েছেন। এছাড়াও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ তিনজনকেও নির্বাচনী তফশিল কেনো বাতিল করা হবে না মর্মে কারণ দর্শাতে বলেছেন উচ্চ আদালতের ওই ডিভিশন বেঞ্চ।
চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা করা হয় গত ১২ নভেম্বর। নির্বাচন পরিচালনা পরিষদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান হাজি অ্যাড. আশরাফ আলী। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী আগামী ২ ফেব্রুয়ারি চেম্বার ভবনে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের কথা। এরই মাঝে গত শুক্রবার ১২ জানুয়ারি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের দুটি পক্ষ পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলনে মিলিত হয়। আলাউদ্দীন হেলা- দেলোয়ার উদ্দীন দুলু পরিষদের পক্ষে চেম্বারের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান লাভলু সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বর্তমান সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিকসহ তার প্যানেলের ১৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য। কারণ, বিধি মোতাবেক পর পর দু’বার অথবা একটানা ৪ বছর পরিচালক পদে দায়িত্বে থাকার পর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানিয়েও প্রতিকার মেলেনি। একইদিন সংবাদ সম্মেলনে ইয়াকুব হোসেন-শাহারিন মালিক পরিষদের পক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীতার বৈধতার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেকই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, এবং গঠিত নির্বাচন কমিশন বিধি মোতাবেক নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে যাবতীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। অথচ নির্বাচন বানচাল করার জন্য একটি পক্ষ উঠে পড়ে লেগেছে।
পাল্টা পাল্টি সংবাদ সম্মেলনের কয়েকদিনের মাথায় পাওয়া গেলো উচ্চ আদালতে রিট দাখিলের খবর। প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, মফিজুর রহমান মনার আনিত রিট শুনানী শেষে উচ্চ আদালত চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে ১৫ জন প্রার্থীর প্রার্থীতা কেনো অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের কেনো নির্বাচনী তফশিল বাতিল করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর আদেশ দিয়েছেন। এ খবরের প্রেক্ষিতে চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডস্ট্রির অফিসসহকারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, উচ্চ আদালতের এ ধরনের একটি আদেশপত্র একজন দফতরে রেখে গেছেন। পরদিকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কর্তব্যরত হাজি অ্যাড. আশরাফ আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, অফিসিয়ালি কাগজপত্র পাইনি। তবে একটি কাগজ একজন রেখে গেছেন। অফিসিয়ালি না হলেও নির্বাচন স্থাগিত করার খবর লোকমুখে শুনেছি। তবে নির্বাচন হবে কিনা তা এখনই বলার সময় হয়নি। আমরা আদালতের আদেশ প্রতিপালনে বদ্ধপরিকর। কোর্ট যেদিকে যাবে, আমরাও সেদিকেই যাবো। চেম্বারের বর্তমান সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক বলেছেন, নির্বাচন স্থগিতাদেশের খবর লোকমুখে শুনছি। আমরা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। অপরদিকে হেলা-দুলু পরিষদভুক্ত প্রার্থী মো. সালাউদ্দীন মিয়া বলেছেন, নির্বাচন না হলে আমরা প্রাশাসক নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে হেলা-দুলু সালাউদ্দীন পরিষদের পক্ষে আলাউদ্দিন হেলা স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৫ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত গেজেট বিধি ২১ বিলুপ্তি ঘোষণা করে বিধি ক’ এর খ তে কোনো ব্যক্তি পর পর ২ মেয়াদের অধিক নির্বাচিত হতে পারবেন না। বিধি ‘ক’ এর ‘খ’ তে উল্লেখ আছে যে কার্যনির্বাহী কমিটির কোনো সদস্য একাধিক্রমে ৪ বছর বা তদুর্ধ্ব সময় পর্যন্ত সদস্য পদে অসীন থাকলে তিনি উক্ত সংগঠনের পরবর্তি নির্বাচনে অংশ গ্রহণকরতে পারবেন না। এই আইনের আওতায় ইয়াকুব হোসেন মালিক, শাহরীন হক মালিক, মঞ্জুরুল আল লার্জ, সালাউদ্দিন মো. মর্তুজা, আরিফ হোসেন জোয়ার্দ্দার, একেএম সালাউদ্দিন মিঠু, হারুন অর রশিদ, নীল রতন সাহা, কিশোর কুমার কু-ু, এসএম তসলিম আরিফ, তাজুল ইসলাম, এএনএম আরিফ, সুরেশ কুমার আগরওয়ালা, কামরুল ইসলাম, নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দারের প্রার্থীতা অবৈধ ঘোষণা করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানানোর পরও তা আমলে নেয়া হয়নি। উপায়ান্তর না পেয়ে ভোটার মফিজুর রহমান মনা বাদী হয়ে হাইকোর্টে রিটপিটিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেন।