চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে পৃথক চারটি দুর্ঘটনা : মৃত্যু মিছিলে দু মহিলাসহ চারজন

ঈদের ছুটির তিন দিন : করিমন নসিমন আর মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতিতে ঝরছে একের পর এক প্রাণ 

 

স্টাফ রিপোর্টার: দর্শনা আকন্দবাড়িয়ায় করিমন থেকে ছিটকে পড়ে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শ্রীকোল গ্রামের আবেদা খাতুন। ঈদের পরদিন বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঈদের পূর্বরাত একটার দিকে সরোজগঞ্জ খাসকররা সড়কের নবীননগর মোড়ে আলমসাধু থেকে পড়ে আহত হন আলমডাঙ্গার নিশ্চিন্দিপুরের হাবিল মল্লিক। ঈদের দিন ভোরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে তিনি মারা যান। গরু বিক্রি করে ঢাকা থেকে ফেরার পথে ঘুমের ঘোরে আছড়ে পড়ে তার অকাল মৃত্যু হয়েছে বলে নিকটজনেরা জানিয়েছেন। মেহেরপুর গাংনীর তেরাইলে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী নেছারন খাতুন নিহত হন। তিনি বাদিয়াপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। ঈদের দিন সকালে ভিটেরমাঠ গ্রামের জালাল উদ্দীনের ছেলে বাবু মিয়াকে কুলবাড়িয়া বাজারের রাস্তায় মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। পরদিন তিনি মারা যান।

দর্শনা অফিস/বেগমপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, একমাত্র মেয়ের বাড়ি থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেও আর বাড়ি ফেরা হলো না চুয়াডাঙ্গার শ্রীকোলের আবেদার। করিমন থেকে ছিটকে পড়ে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে মধ্যবয়সী আবেদার।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের শ্রীকোল বিলপাড়ার আজ্জেল আলীর একমাত্র মেয়ে রিনা খাতুনের বিয়ে হয় জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের কাশিপুর বাজারপাড়ার ফারুকের সাথে। ঈদ উপলক্ষে ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে একমাত্র মেয়ে রিনাকে মা আবেদা দেখতে যান। মেয়ে-জামাইয়ের জন্য টিফিন কেরিয়ায় করে রান্না করা মাংস নিয়ে যান। বিকেলে মেয়ের বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি ফেরার জন্য করিমনে ওঠেন। করিমনটি জীবননগর-দর্শনা সড়কের আকন্দবাড়িয়া বটতলার অদূরে পৌঁছুলে মুখোমুখি দু করিমনের ধাক্কায় রাস্তার ওপর ছিটকে পড়েন আবেদা। এ সময় দর্শনা থেকে জীবননগরের উদ্দেশে যাচ্ছিলো দ্রুতগামী একটি যাত্রীবাহী বাস। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে আবেদা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সটকে পড়ে দুটি করিমন ও ঘাতক বাসটি। আবেদার লাশ প্রধান সড়কের ওপর পড়ে ছিলো দীর্ঘসময়। লাশ শনাক্ত করতে পথচারীরা ভিড় জমায়। ঘটনার দেড় ঘণ্টার মাথায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই রবিউল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছান। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সদর থানায় নেয়। সেখান থেকে রাত ১২টার দিকে আবেদার পরিবারের লোকজন লাশ গ্রহণ করে গ্রামে নেয়। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে জানাজার নামাজ শেষে স্থানীয় গোরস্তানে আবেদার দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।

খাসকররা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার নিশ্চিন্দিপুরের হাবিল মল্লিক (৫৫) দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। গত সোমবার ঢাকা থেকে গরু বিক্রি করে রাত ১২টার দিকে সরোজগঞ্জ বাজারে নামেন। সেখান থেকে আলমসাধুযোগে বাড়ি আলমডাঙ্গার নিশ্চিন্দিপুর ফেরার পথে সরোজগঞ্জ-খাসকররা সড়কের নবীননগর মোড়ে পৌঁছুলে ঘুমের ঘোরে আলমসাধু থেকে পড়ে যান। এতে তিনি আহত হন। হাবিলকে উদ্ধার করে ওই রাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। পরদিন ভোর ৬টার দিকে মারা যান। হাবিল মল্লিক খাসকররা ইউনিয়নের নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের মৃত ফটিক মল্লিকের ছেলে। দামুড়হুদা উপজেলার চরহোগলডাঙ্গার ইস্রাফিলের ছেলে রিফাত (২০) মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। সে মোক্তারপুর থেকে বাড়ি ফেরার পথে চিৎলামোড়ে যাচ্ছিলো। এ সময় একটি বাইসাইকেলের সাথে ধাক্কা লাগে। এতে ইমরান ও রাজু নামের আরও দুজন আহত হয়। ট্রেন থেকে পড়ে শামিম (১৭) আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে নামতে গিয়ে আহত হয়। শামিম চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গিরীশনগর গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে। দামুড়হুদার দলকালক্ষ্মীপুরের রফিকুল ইসলাম (৪০) আলমসাধু দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে আলমসাধুযোগে বাড়ি থেকে ভালাইপুর বাজারে যাওয়ার পথে আলমসাধু উল্টে তিনি আহত হন। রফিকুল দলকালক্ষ্মীপুর গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় দুজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার  বিকেলে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী উপজেলার তেরাইল নামক স্থানে নেছারন খাতুন (৬৫) ও ঈদের দিন সকালে সদর উপজেলার উজলপুরে বাবু মিয়া (৩০) নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, বাদিয়াপাড়া গ্রামের নেছারন খাতুন তেরাইল বাজারের মধ্যে প্রধান সড়ক পার হওয়ার সময় বামন্দীগামী একটি মোটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। পুলিশ জানিয়েছে তিনি ভিক্ষুক। অপরদিকে ঈদের দিন সকালে ভিটেরমাঠ গ্রামের জালাল উদ্দীনের ছেলে বাবু মিয়াকে কুলবাড়িয়া বাজারের সড়কের ওপরে একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে মেহেরপুর এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবু মিয়া মারা যান।