চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে পৃথক ৪টি দুর্ঘটনা : দুজন নিহতসহ আহত কমপক্ষে ১৫

দামুড়হুদার প্রতাবপুর মাঠে ট্রাক্টর উল্টে চালক ও গাংনীর আকুবপুরে ট্রাকের ধাক্কায় নসিমন আরোহী নিহত

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ও মেহেরপুরসহ মেহেরপুরের গাংনীতে পৃথক ৪টি দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে নারী ও শিশুসহ ১৫জন। মেহেরপুরের আমঝুপি-গাড়াডোব সড়কে আলগামন উল্টে আহত হয়েছে ১৩জন। মেহেরপুর গাংনী-কুষ্টিয়া সড়কের আকুবপুর নামকস্থানে ট্রাকের ধাক্কায় উল্টে পড়ে নিহত হয়েছেন নসিমন আরোহী শরিফ উদ্দীন (২৫)। আহত হয়েছেন তিনজন। নিহত শরিফ গাংনীর মোহাম্মদপুর গ্রামের মাহতাব আলীর ছেলে। এদিকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার লোকনাথপুর মাঝপাড়ার কিবরিয়া (২৮) ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রতাবপুর খালপাড় মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া জিপের সাথে ধাক্কা মেরে আহত হয়েছে মোটরসাইকেলের দু আরোহী হাসিব (৩০) ও মাহবুব (২২)।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার লোকনাথপুর মাঝপাড়ার আব্দুল বারিকের ছেলে কিবরিয়া ট্রাক্টর চালক। তিনি চণ্ডিপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ট্রাক্টরের চুক্তিভিত্তিক চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল রোববার তিনি চাষের কাজে প্রতাবপুর খালপাড় মাঠে যান। চাষ শেষে সন্ধ্যায় তিনি ট্রাক্টর খাদপার হয়ে রাস্তায় উঠার সময় উল্টে যায়। উল্টে ট্রাক্টর চালক কিবরিয়া নিচে চাপা পড়েন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে নেয়া হলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবীন কিবরিয়াকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর পরপরই মৃতদেহ তার সাথে থাকা লোকজন হাসপাতাল থেকে দ্রুত সরিয়ে নেয়। গতরাতেই নিজ গ্রামে দাফনের প্রক্রিয়া করা হয়। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনের অদূরে সড়কে পুলিশের একটি জিপের সাথে ধাক্কা মেরে আহত হয়েছে মোটরসাইকেল আরোহী দুজন। আহত হাসিব ভিমরুল্লা গ্রামের জামাই, আর মাহবুব ভিমরুল্লা গ্রামের বাবুর আলীর ছেলে। দুজনকেই হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে দুজনই বাড়ি ফেরে।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, গতকাল রোববার সকাল ৯টার দিকে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি-গাড়াডোব সড়কে আলগামন উল্টে নারী ও শিশুসহ ১০জন আহত হয়েছে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।স্থানীয়রা জানিয়েছে, গাংনী উপজেলার সাহারবাটি থেকে ছেড়ে আসা রাস্তার শ্রমিক ভর্তি একটি আলগামন সদর উপজেলার আমঝুপি-গাড়াডোব সড়কের আমঝুপি উত্তরপাড়া নামক স্থানে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি নসিমনকে সাইড দিতে গেলে আলগামন চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এ সময় আলগামনটি সড়কের পাশের একটি পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। এতে আলগামনের যাত্রী রাস্তার শ্রমিকেরা আহত হয়। স্থানীয় লোকজন ও মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। আহতরা হলো- গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের রেজাউল (৫৬), বকুল (৫৫), ইনতাজ (৬০), মুসা (৬৫), হোসেন (৫৪), সানোয়ারা (৪০), মুর্শিদা (৩৮), মতিউর (৪), আফতাব (২৮) ও গাংনী উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের রেহেনা (৩৫)। আহতদের মধ্যে মুসা, হোসেন ও আফতাবের অবস্থা মারাত্মক বলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।

            গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে গাংনী উপজেলার আকুবপুরে ট্রাক-নসিমন মুখোমুখি সংঘর্ষে নসিমন যাত্রী শারিফ উদ্দীন (২৫) নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো তিনজন। এদের সকলের বাড়ি গাংনী উপজেলার মহাম্মদপুর গ্রামে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শারিফ উদ্দীন মহাম্মদপুর গ্রামের মাহতাব আলীর ছেলে।   স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, মহাম্মদপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী খলিশাকুণ্ডি বাজার থেকে নসিমনযোগে ফিরছিলেন নিহত শারিফ উদ্দীনসহ কয়েকজন। আকুবপুর বাজারের পার্শ্ববর্তী জোয়ার্দ্দার ইটভাটার কাছে পৌঁছুলে কুষ্টিয়াগামী সবজি বোঝাই একটি ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। ট্রাক ও নসিমন রাস্তার পার্শ্বে উল্টে পড়ে। নসিমনযাত্রী মহাম্মদপুর গ্রামের আহত ফুল ফকির (৬৫), বিদ্যুত হোসেন (২৫) ও নিয়াত আলীকে (৬০) স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাকচালক পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে নিহতের স্বজনরা ঘটনাস্থলে আসেন। তাদের আর্তনাদে আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। পরিবারের ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে নিহত শারিফ উদ্দীন তৃতীয়। তার ৬ মাস বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে। একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারের সদস্যরা। গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাছুদুল আলম জানিয়েছেন, পরিবারের পক্ষ থেকে লাশের ময়নাতদন্ত এবং মামলা করবে না বলে জানানো হয়। জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে তারা লাশ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ট্রাকটি পুলিশ হেফাজতে নেয়া হচ্ছে।