চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে কালবোশেখির তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতি

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে কালবোশেখির তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত বুধবার রাতে জেলাজুড়ে তাণ্ডব চালায় কালবোশেখি ঝড়। সেই সাথে বৃষ্টিপাত হয় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী। বিশেষ করে বোরো ধান, কলা বাগান, গাছগাছালি ও পান বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেত ও কলাবাগান ধরাশায়ী হয়ে পড়েছে।

এলাকাসূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমে যায়। এর আধাঘণ্টা পর শুরু হয় কাল বোশেখি ঝড়। ঘণ্টাব্যাপী ঝড়ে আলমডাঙ্গা, জীবননগর, দামুড়হুদা ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কৃষকদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আলমডাঙ্গার কৃষ্ণুপর গ্রামের রাজিবুল মণ্ডল, পান্নু মণ্ডল ও খলিলুর রহমান বলেন তাদের কলাবাগান মাটির সাথে মিশে গেছে। এতে ৭০ ভাগ কলাগাছ বিনষ্ট হয়েছে।

সদর উপজেলার বোয়ালমারী ও হাজরাহাটি গ্রামের কৃষকরা জানান, তাদের মাঠের বোরো ধান মাটিতে মিশে গেছে। আর কিছুদিন হলেই তাদের ধান কাটার সময় হয়ে যেত। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবায়ের মাশরূর বলেন, ‘চাষিদের ধান, কলাগাছ ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা যায়নি। আমরা মাঠ পরিদর্শন করছি। পরে সঠিক পরিমাণ জানা যাবে।’

পদ্মাবিলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কালবোশেখের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে পদ্মবিলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে। চাষিদের মাঠের পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই সাথে কলা বাগান মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে ঝড়ে। চুয়াডাঙ্গার কুশোডাঙ্গা গ্রামের শাহজাহানের ঘরের ওপর বড় শিশু গাছ উপড়ে পড়ে ঘরের চালসহ ঘর ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়। এতে অল্পের জন্য রক্ষা পায় শাহজাহানের পরিবার। গ্রামের আকালী সর্দ্দারের প্রায় ৩শ’ চাপা শব্রী কলাগাছ ভেঙে গেছে।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বোশেখের ৫ দিনের মাথায় মেহেরপুর জেলার ওপর দিয়ে বুধবার রাতে বয়ে গেছে কালবোশেখি ঝড়। একই সাথে দুই ঘন্টাব্যাপী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে বোরো ধান ও নিচু জমির পাট ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে হালকা ঝড় ও মাঝারি বর্ষণের পর বুধবার সারাদিন আকাশ ছিলো মেঘাচ্ছন্ন। রাত সোয়া ৮ টার দিকে আকস্মিক ঝড় শুরু হয়। ঝড়ের তীব্রগতিবেগ সেই সাথে তুমূল বর্ষণ চলছিলো। একাধারে তা চলে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে।

এদিকে ঝড়-বৃষ্টিতে ধান চাষিদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে। বিশেষ করে আগাম ধানক্ষেতের বেশিরভাগ ধানগাছ মাটির সাথে নুইয়ে পড়েছে। অতি বর্ষণ ও ঝড়ের কবলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

অপরদিকে নিচু এলাকার পাট ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সৃষ্ঠি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এদিকে গাংনী উপজেলার কষবা, ধানখোলা, মহিষাখোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় কলাক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ কলাগাছ ভেঙে পড়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানান, সপ্তাহখানেক পর থেকেই বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু আকস্মিক এই বৃষ্টিতে ক্ষেতে ধানগাছ নুইয়ে পড়েছে। নিচু এলাকার ধান ক্ষেতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে ধান পাকতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগবে। অন্যদিকে জলাবদ্ধা স্থায়ী হলে ধান গাছ পচে যাবে। এতে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় বোরো ধান চাষিদের চিন্তার শেষ নেই।

জেলার ঢেপা ও পাকুড়িয়া এলাকায় ২০টির ওপরে কাঁচা বাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে গেছে বলে স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়ক, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক, গাংনী-হাটবোয়ালিয়া সড়কসহ স্থানীয় সড়কের দুপাশের ছোট বড় অনেক গাছগাছালি ভেঙে পড়েছে। বসতবাড়ির অনেক গাছও ভেঙে গেছে বলে জানা গেছে। তবে এই বৃষ্টিতে উপকার হচ্ছে উচু জমির পাট ক্ষেত, কচুসহ বিভিন্ন ফসলের।

অপরদিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টি পেয়ে আজ সকাল থেকেই মরিচ চারা রোপণ শুরু হয়েছে। স্বস্তি প্রকাশ করেছেন মরিচ চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক এসএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিসাররা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণে কাজ করছেন। চলতি মরসুমে জেলায় ২২ হাজার ১৪৫ হেক্টর বোরো ধান এবং ১৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে।