চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গাসহ দেশের ৭৩ উপজেলায় ভোট আজ

এ নির্বাচনের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত উপজেলা নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার: ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, ব্যালট বাক্স ও পেপার ছিনতাই আর সহিংসতার আশঙ্কার মধ্যে আজ সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পঞ্চম ধাপের ৭৩ উপজেলার ভোট। পঞ্চম ধাপের এ নির্বাচনের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত পাঁচ ধাপের নির্বাচন। স্থগিতকৃত বাকি উপজেলাগুলোতে পরবর্তী ধাপে নির্বাচন হবে। নির্দলীয় এ নির্বাচনে দলীয় শক্তি প্রদর্শন ও দখল অনিয়মের উৎসব হয়েছে গত ধাপগুলোতে। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে ভোটগ্রহণ। তবে ভোটের আগেই স্থানীয় প্রশাসন ও সরকার সমর্থক প্রার্থীদের হুমকি-ধামকিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কড়া হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও সহিংসতা কমার লক্ষণ নেই। বরং নির্বাচনী ব্যবস্থাপনাই যেন ক্রমেই নষ্ট হচ্ছে। এই অবস্থায় চতুর্থ ধাপের নির্বাচনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক ই-মেইল বার্তায় ইসি সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবকে বলেছেন, ‘থ্যাংক ইউ ফর বেটার ইলেকশন’। যদিও ওই ধাপের নির্বাচনের দিনেই চার জনের প্রাণহানি ঘটে। পরবর্তীতে আরো দুজন মারা যান। এদিকে আজকের নির্বাচনের প্রাক্কালে কেন্দ্র দখল বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছেন অর্ধশত প্রার্থী।

এ দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের জন্য প্রশাসনিকভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার  সকাল থেকেই আটজন  ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্ট্রাইকিং ফোর্স ও সেনাবাহিনী টহলে রয়েছে। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার ৮৫টি ও আলমডাঙ্গা উপজেলার ১০৩টি কেন্দ্রে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ পাঠানো হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৮৫টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা ৬৮০টি। মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজার ৯১৯ জন । এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪ হাজার ৬১০ জন ও মহিলা ১ লাখ ৬ হাজার ৩০৯ জন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় তিনটি পদে ভোটযুদ্ধে রয়েছেন ৯ জন প্রার্থী। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আসাদুল হক বিশ্বাস (আনারস) , বিএনপি সমর্থিত মজিবুল হক মালিক ( চিংড়ি) ও আবু বকর সিদ্দিক বকুল (মোটর সাইকেল)। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আজিজুল হক হযরত (মাইক), বিএনপি সমর্থিত সাইফুর রশিদ ঝন্টু (চশমা) ও জামায়াত সমর্থিত আব্দুর রউফ (টিউবওয়েল)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কোহিনুর বেগম (ফুটবল), বিএনপি সমর্থিত জাহানারা পারভীন ( হাঁস) ও মমতাজ বেগম (কলস)।

আলমডাঙ্গা  উপজেলা ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত । ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১০৩ টি । ভোটকক্ষের সংখ্যা ৮১৩ টি । মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪০ হাজার ২৬৩ জন । এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ১৯ হাজার ২২৬ জন ও মহিলা ১ লাখ ২১ হাজার ২৬৩ জন ।

আলমডাঙ্গা উপজেলায় তিনটি পদে ভোটযুদ্ধে রয়েছেন ১৬ জন প্রার্থী। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত হেলাল উদ্দীন (আনারস), বিএনপি সমর্থিত শহিদুল কাওনাইন টিলু (দোয়াত কলম) ও সানোয়ার হোসেন লাড্ডু (মোটর সাইকেল) এবং জামায়াত সমর্থিত নূর মোহাম্মদ (কাপ পিরিচ)। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাজী খালেদুর রহমান অরুণ (মাইক), বিএনপি সমর্থিত এমদাদুল হক ডাবু (বৈদ্যুতিক বাল্প) ও মিজানুর রহমান মধু (চশমা), জামায়াত সমর্থিত আহাম্মদ জালাল (তালা), জাহাঙ্গীর আলম (টিয়া পাখি), মাহবুব হোসাইন (টিউবওয়েল) ও গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস (উড়োজাহাজ)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শামীম আরা খাতুন (পদ্মফুল), বিএনপি সমর্থিত পারুলা খাতুন রাবেয়া (হাঁস), সামসাদ বানু (সিলিং ফ্যান), হাফিজা খাতুন (ফুটবল) ও পাপিয়া ইসলাম (কলস)। সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন জানান, সুষ্ঠুভাবে নির্বিঘেœ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ।

অপরদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক সহিংসতার দুটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর বেপরোয়া আচরণের কারণে সহিংসতা বাড়ছে। তবে তিনি বলেন, নির্বাচনী অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। নির্বাচনের পরেও সহিংসতাকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। বিএনপি যদি নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগ চায় তাহলে তারা নির্দলীয় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে কেনো বলে মন্তব্য করেন তিনি। সহিংসতায় অসহায়ত্ব প্রকাশ করে ইসির একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলেছেন, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকার সমর্থকরা মিলে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করছে। পঞ্চম ধাপে ৭৪টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করলেও আজ সোমবার ভোট হবে ৩৪ জেলার ৭৩ উপজেলায়। নির্বাচনী মালামালও পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলায়। নির্বাচনের আগে গত শনিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে মিছিল-মিটিংসহ সবধরনের প্রচার-প্রচারণা। একই সাথে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে সব ধরনের যান্ত্রিক যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে ইতোমধ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কমিশন। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এবং দল দুটির বিদ্রোহী প্রার্থীদের অংশগ্রহণ এবার স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনের মূল আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে অনুষ্ঠিত চারটি ধাপের নির্বাচনে বিএনপি ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ আনলেও এ ধাপের সবগুলোতেই তাদের সমর্থিত প্রার্থী রয়েছে। এর আগে গত ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটের দিন বেশকিছু উপজেলা থেকে বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। তবে আজকের নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে ৩৪ উপজেলায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে ৩১ উপজেলায়। চার ধাপে এ পর্যন্ত ৩৮৫ উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ৩৮২টির ফল ঘোষিত হয়েছে। এতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ১৭৮, বিএনপি সমর্থিত ১৪৯ এবং জামায়াতে ইসলামী ৩২ জন এবং অন্যান্য ২৩ জন বিজয়ী হয়েছেন। প্রথম ধাপে ৬৫ কেন্দ্র, দ্বিতীয় ধাপে ১০০ কেন্দ্র, তৃতীয় ধাপে ২০০ কেন্দ্র এবং চতুর্থ ধাপে চার শতাধিক কেন্দ্র দখল ও অনিয়মের ঘটনা ঘটে। এ পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় ১২ জন মারা গেছে।