চুয়াডাঙ্গায় স্কুল ও মাদরাসায় স্কাউটিং কার্যক্রমে ঢিলেঢালাভাব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করলেও কার্যক্রম নিয়ে জনমনে প্রশ্ন!

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলার ১২টি স্কুল গাজীপুরের মৌচাকে অনুষ্ঠিত স্কাউটদের মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করলেও নেই নামকরা দুটি সরকারি একটি বিদ্যালয়। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় দুটি বিদ্যালয়সহ জেলার ১৪২টি স্কুল ও ৪০টি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময়ে ১০ টাকা করে অর্থগ্রহণ করলেও সেই টাকার ব্যবহার ও শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে গড়ে ওঠা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে চলবে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে সুখের খবর দর্শনা কেরু উচ্চ বিদ্যালয় হাইকিং (দূরপথ হাঁটা) প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।

জানা গেছে, প্রতিবছর স্কুল ও মাদরাসায় ভর্তির সময় ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে স্কাউট খাতে মাথাপিছু ১০ টাকা হারে ফি আদায় করা হয়ে থাকে। অথচ, চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ জেলার বেশির ভাগ স্কুল ও মাদরাসায় স্কাউটিংয়ে কোনো তৎপরতা নেই। নেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারী। ফলে, শিক্ষার্থীদের মণ থেকে আর্তমানবতার সেবায় লর্ড ব্যাডেন পাওয়েলের মহতী সেই উদ্যোগ হারিয়ে যেতে বসেছে। আর সেই সাথে ব্যর্থ হতে চলেছে জাতি গঠনে যুবসমাজের অংশগ্রহণ। এবারে যে সকল বিদ্যালয় মৌচাকে অংশগ্রহণ করেছে তার হলো- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নীলমণিগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সোহরাওয়ার্দ্দী স্মরণী বিদ্যাপীঠ ও হিজলগাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। আলমডাঙ্গা উপজেলার আলমডাঙ্গা বহুমুখি বিদ্যালয় ও গোকুলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। দামুড়হুদা উপজেলার কেরু উচ্চ বিদ্যালয়, কুড়ুলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হোগলডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দামুড়হুদা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বড়বলদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কুতুবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। জীবননগর উপজেলার উথলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তবে সদর উপজেলার আলিয়ারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্বাচিত হলেও তারা মৌচাকে যেতে পারেনি। চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা জানান, ভি.জে স্কুলের নাম নির্বাচিত না করায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি।

তিনি আরো জানান, যারা ট্রেনিং করায় তারা না আসায় ছাত্ররা প্রস্তুত হতে পারেনি।ফলে, মৌচাকে অংশগ্রহণ সম্ভব হয়নি। চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শফিকুন নাহার জানান, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে গার্লস গাইড দল থাকলেও নেই গার্লস স্কাউটিং দল। ফলে, গার্লস গাইড দল মৌচাকে অংশগ্রহণ করে। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানান, সরকারি দুটি বিদ্যালয় শুধু স্কাউটিংয়ে নয়, গ্রীষ্ম ও শীতকালিন ক্রীড়া প্রতিযোগীতায়ও কোনো শিক্ষার্থী পাওয়া যায়না। তবে, এসব বিষয়গুলোতে যাতে তারা এগিয়ে আসে সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

আলমডাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীনেশ চন্দ্র পাল জানান, প্রতিষ্ঠানগুলো ১০টাকা হারে ফি আদায় করলেও উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ২ টাকা করে ৪ টাকা চলে যায়। প্রতিষ্ঠানে থাকে ৬ টাকা। বাছাই করে জেলার প্রতিটি উপজেলা থেকে তিনটি বিদ্যালয়কে নির্বাচিত করা হয়েছে। তবে, মাদরাসার কেউ মৌচাকে যায়নি। চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোত্তালিব জানান, দল নির্বাচন যথাযথভাবে হয়নি। প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বাছাই সঠিকভাবে হলে ভি.জে স্কুল বাদ পড়ার কথা নয়। তিনি আরো বলেন, জেলা স্কাউটিং কমিটির ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকার কারণে জেলা কমিটি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। কমিটিতে উপজেলা পর্যায়ের নামকরা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা থাকার কথা থাকলেও তারা কমিটিতে কেউ নেই। ফলে, দল গঠন ও ট্রেনিং যথাযথভাবে হয়না। এব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা স্কাউটের সাধারণ সম্পাদক ওলিউল্লাহ সিদ্দিক জানান, উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ১৩টি দল বাছাই করে না পাঠানো হয়েছিলো। তবে একটি বিদ্যালয় অনুপস্থিত রয়েছে।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনজুমান আরা জানান, ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ যে সকল প্রতিষ্ঠানে স্কাউটিং কর্মসূচি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে না সে সকল প্রতিষ্ঠান যাতে উজ্জীবিত হয় সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।