চুয়াডাঙ্গায় সার্কাসের উন্মত্ত হাতির তাণ্ডব : প্রশাসন সতর্ক : ঢাকার বিশেষ টিম তলব

অবস্থা বেগতিক দেখে হাতি রেখেই সটকে পড়েছেন মাহুত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাজু : দাঁতালকে কব্জায় আনার চেষ্টা : না হলে গুলি

 

গোষ্টবিহার থেকে ফিরে নজরুল ইসলাম: সার্কাসের এক হাতি হঠাত উন্মত্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গার গোষ্টবিহার ও খেজুরতলা গ্রামে তাণ্ডব চালিয়েছে। প্রশাসন আধাবেলা ধরে চেষ্টা চালিয়েও হাতিটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি করেছে দাঁতালটি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাতিটিকে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। আজ রোববার ঢাকা থেকে বন বিভাগের বিশেষজ্ঞ টিম এসে হাতিটিকে কব্জা করবে।

Nazrul pic (2)

পুলিশ ও এলাকাসূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে প্যান্ডেল করে সার্কাস করছে দি ইয়াং স্টার সার্কাস। তাদের একটি হাতি নিয়ে মাহুত বাহ্মণবাড়িয়ার সাজ্জাদুর রহমান সাজু খাদ্য সংগ্রহের জন্য আসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গোষ্টবিহার গ্রামে। সেখানে গতকাল শনিবার হাতি দিয়ে টাকা-পয়সাসহ বিভিন্ন খাবার সংগ্রহ করেন তিনি। দুপুরে হাতিটিকে একটি গাছের সাথে বেঁধে মাহুত সাজু দুপুরের খাবার খান। ঘণ্টাখানেক পরে হাতিটিকে খোলার পর তার আচরণ অস্বাভাবিক মনে হয়। দাঁতাল ক্ষেঁপে ওঠে। অবস্থা বেগতিক দেখে হাতিটি ফেলেই মাহুত সাজু সটকে পড়েন। এরপর উন্মত্ত দাঁতাল আক্রমণ চালাতে শুরু করে। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। নারী-পুরুষ ও শিশুরা এদিক ওদিক ছুটতে শুরু করে। তবে এলাকাবাসী আগুন জ্বালিয়ে এবং থালা-বাসন বাজিয়ে নিজেদেরকে রক্ষার চেষ্টা করে। এ সময় গোষ্ঠবিহার গ্রামের চান মিয়ার একটি পানের বরজ পয়মাল করে মাটিতে মিশিয়ে দেয়। এতে তার প্রায় ৩ লাখ টাকার পানের ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এছাড়া অনেক মানুষের ভুট্টাক্ষেত, ধান, গাছগাছালিসহ বিভিন্ন ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি করে উন্মত্ত দাঁতালটি। পার্শ্ববর্তী খেজুরতলা গ্রামের কাওছার ও ইসলামের ৩টি টিউবওয়েল শুঁড় লাগিয়ে উপড়ে ফেলে। তার ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিতুদহ ইউপি চেয়ারম্যান আখতার হোসেন প্রশাসনকে জানান। খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তাসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশানের কর্মকর্তারা জরুরিভাবে সেখানে উপস্থিত হন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনজুমান আরা, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম মামুন উজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেনজীর আহম্মেদ, সদর থানার ওসি আসাদুজ্জামান মুনসিসহসহ প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা এলাকাবাসীর সাথে বৈঠক করেন এবং হাতির কবল থেকে রক্ষা পাওয়া ও সতর্ক থাকার বিভিন্ন পরামর্শ দেন। জেলা প্রশাসন বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথেও বিষয়টি নিয়ে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন।

এলাকাবাসী জানায়, হাতির কাছে প্রশাসন নিরুপায় হয়ে পড়ে। হাতি তার ইচ্ছেমতো ক্ষতি করতে করতে এগিয়ে যায়। এতে আশপাশ গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আসাদুজ্জামান মুনসি জানান, হাতিটিকে কব্জা করা খুবই কঠিন। আগামীকাল (আজ) রোববার ঢাকা থেকে বন বিভাগের বিশেষ একটি টিম আসবে। দূর থেকে ইনজেকশন পুশ করে হাতিটিকে অজ্ঞান করে বশে আনার চেষ্টা করা হবে। এতে যদি না হয় কিংবা আরো বেপরোয়া হয়ে প্রাণহানির মতো কোনো ঘটনা ঘটায়, সেক্ষেত্রে হাতিটিকে গুলি করে মেরে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। তিনি আরো জানান, এলাকার চৌকিদার ও পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়েছে হাতিটি। তবে হাতিটি সন্ধ্যার পর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নবীননগর মাঠের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। গতরাত ১০টার দিকে শেষ খবর পাওয়া যায় তিতুদহ ইউপি চেয়ারম্যান আখতার হোসেনের কাছে। তিনি দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানান, এখন হাতিটি খেজুরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে অবস্থান করছে। তাকে ঘিরে নজরদারি করা হচ্ছে।

একটি সূত্র জানায়, গতরাত ১১টার দিকে কালুপোল মাঠ থেকে হাতির মাহুত সুমন হাতিটি কব্জায় নেন। এলাকায় স্বত্বি ফিরে আসে।