চুয়াডাঙ্গায় সাগরদাঁড়ি আন্তঃনগর ট্রেনে পিকনিক পার্টি ও সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে সংঘর্ষ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় সাগরদাঁড়ি আন্তঃনগর ট্রেনে যাত্রীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার রাতে দু পক্ষের সংঘর্ষের সময় ট্রেনের হোসপাইপ খুলে ফেলা হয়। ভাঙচুর চালানো হয় ট্রেনে। শেষমেশ থানা পুলিশের সহযোগিতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। আধা ঘণ্টা বিলম্বে ট্রেনটি ছাড়ে। এ ঘটনায় এক যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। রাজশাহীর দু যাত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে একজন ডাক্তার। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বলে জানিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার আনোয়ার সাদাত জানান, ৭৬১ নং আপ সাগরদাঁড়ি আন্তঃনগর ট্রেনটি খুলনা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে শনিবার দুপুরে ছাড়ে। ট্রেনের চ-৪২১১ নম্বর বগিতে খুলনা থেকে ৫০-৬০ জন পিকনিকের লোক ওঠেন। তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। খুলনা সুন্দরবন থেকে পিকনিক শেষে তারা রাজশাহী ফিরছিলেন। তারা বগিতে হইচই করেন এবং খারাপ আচরণ করে সাধারণ যাত্রীদের অতিষ্ঠ করে তোলেন। সাধারণ যাত্রীরা এর প্রতিবাদ করলে পিকনিক পার্টি ও সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে হইচই শুরু হয়। সাধারণ যাত্রী কম থাকায় পিকনিকের লোকজন তাদের মারধর করেন এবং কয়েকজনকে বাথরুমের মধ্যে আটকে রাখেন।
আরেকটি সূত্র জানায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দর্শনা হল্ট স্টেশন থেকে কয়েকজন সাধারণ যাত্রী ওই বগিতে উঠলে বাংকারে ব্যাগ রাখা নিয়ে দু পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে পিকনিকের লোকজন দর্শনা থেকে ওঠা কয়েকজন যাত্রীকে বেপরোয়া মারধর করেন এবং বাথরুমে আটকে রাখেন। দর্শনার লোকজন তাদের আত্মীয়-স্বজনকে বিষয়টি জানালে সংঘবদ্ধ হয়ে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে ব্যারিকেড দেন তারা। ট্রেনটি রাত পৌনে ৭টায় চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছুলে দর্শনার যাত্রীদের পক্ষ নিয়ে ২০-৩০ জন ট্রেনের হোসপাইপ খুলে ফেলে। ভাঙচুর করে বগির ৭টি জানালার কাঁচ। পিকনিকের লোকজনের সাথে এ সময় তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও জিআরপি পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। এরপর স্টেশন মাস্টার চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পুলিশ এ সময় পিকনিকের লোকজনের মধ্যে রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়ার সেলিম উদ্দিনের ছেলে মামুন উর রশীদ ও রাজশাহী উপ-শহর এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে ডা. রাজিউল ইসলামকে আটক করে থানায় নেয়। ট্রেনটি আধাঘণ্টা বিলম্বে রাত সোয়া ৭টায় চুয়াডাঙ্গা স্টেশন ত্যাগ করে রাজশাহীর উদ্দেশে ছাড়ে বলে স্টেশন মাস্টার জানান।
এ রিপোর্ট লেখার সময় সদর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, দুজনকে আটক করা হয়েছে। কেউ মামলা দিলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আটক ডা. রাজিউল ইসলাম জানান, ‘মোবাইল কোম্পানি রবির রাজশাহী জোনের ডিস্ট্রিবিউটর হাউসের পক্ষ থেকে ৮১ জনের একটি দল বুধবার সুন্দরবনে পিকনিকে গিয়েছিলো। তিনি ওই দলের মেহমান হিসেবে গিয়েছিলেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক তিনি। মারধরের সাথে তিনি জড়িত নন।’ তিনি আরও জানান, তারা ট্রেনের একটি বগি রিজার্ভ করে খুলনা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। দর্শনা থেকে কয়েকজন যাত্রী ওই বগিতে উঠে পড়লে গণ্ডগোল শুরু হয়। এ থেকেই ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা।
এদিকে এ ঘটনায় মারপিটের শিকার দর্শনা হল্ট চাঁদপুরের আজিজুল হকের ছেলে লাল্টুকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জানান, তার সাথে থাকা একই গ্রামের এজাজ হোসেন ও হিরণকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের মোবাইলফোনও বন্ধ।