চুয়াডাঙ্গায় সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়

 

জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়েছে ভুক্তভোগীরা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলার চারটি উপজেলার সরকারি-বেসরকারি সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০১৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে  ফরম পূরণের জন্য অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্কুলে বিশেষ কোচিং, বাড়তি পাঠদান, ২০১৪ সালের নির্ধারিত সেশনচার্জ, বিদ্যালয়ের উন্নয়ন, মার্চ মাস পর্যন্ত নিয়মিত বেতন এবং স্কাউটসহ বিবিধ খাতের নামে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ টাকা আদায় করা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে অবস্থিত ভি.জে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রতি অতিরিক্ত ১০০ টাকা করে আদায় করা হলেও বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো ৪০০ থেকে এক হাজার ৮৬০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ বাড়তি টাকা আদায়ের কথা অকপটে স্বীকার করছেন। এতে অভিভাবকগণ বিপাকে পড়েছেন। ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের অভিযোগ শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের তদারকি ও নজরদারি না থাকায় বেপরোয়াভাবে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এতে অর্থাভাবে অনেক শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলার দুটি সরকারি ও ১২৮ টি বেসরকারি বিদ্যালয় থেকে এ বছর প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। ৪ নভেম্বর থেকে তাদের ফরম পূরণ শুরু হয়েছে এবং চলবে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত। এছাড়া ১০০ টাকা জরিমানা দিয়ে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত ফরম পূরণ করা যাবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ফরম পূরণের জন্য বোর্ড ও কেন্দ্রের খরচ বাবদ নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এক হাজার ১৫০ টাকা এবং বিজ্ঞান বিভাগে এক হাজার ২৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আরো ১০০ টাকা যোগ করা হয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, এবারের এসএসসি ফরম পূরণে জেলার কোনো বিদ্যালয়ই বোর্ডের নির্দেশনা মানছেনা। প্রতিটি বিদ্যালয়েই অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।

আলমডাঙ্গা উপজেলার বিদ্যালয়গুলো নির্ধারিত ফি ছাড়াও সেশনচার্জ ৪৩০, কোচিং ৪৫০ ও স্কাউটফিস ৩০ টাকাসহ ৯১০ টাকা বাড়তি আদায় করছে। এ উপজেলার কোনো কোনো স্কুলে সবমিলিয়ে তিনহাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলার স্কুলগুলোতে নির্ধারিত টাকা ছাড়াও পরীক্ষার্থীদের কাছে ৬৫০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা শহরের বেসরকারি বিদ্যলয়গুলোতেও বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে দু হাজার ৪৩০ এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের দু হাজার ৩৫৫ টাকা পর্যন্ত আদায় চলছে।

চুয়াডাঙ্গা এমএবারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম আলী আকতার জানান, পৌর এলাকার বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকদের যৌথসভায় দু হাজার টাকা হিসেবে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এমএবারী বিদ্যালয়ে দু হাজার টাকা করেই নেয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে ওই প্রধান শিক্ষক আরো জানান, সরকারি বেতনের অংশে শিক্ষকদের চলাচল দুরূহ। তাই, এই বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে। যার একটি অংশ বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে লাগানো হবে। চুয়াডাঙ্গা একাডেমীর প্রধান শিক্ষক সুকেশ কুমার বিশ্বাস জানান, সেশনচার্জ, বেতনসহ বিভিন্ন খাতে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে। তবে কতো টাকা আদায় হচ্ছে তা তিনি জানাতে পারেননি। সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ ছাদেমান নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সালেহ জানান, পরিচালনা কমিটির সভাপতির সম্মতিক্রমে সবমিলিয়ে এক হাজার ৪০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। আলমডাঙ্গা উপজেলার সিএইচআর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান জানান, ওই বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দু হাজার ২০০ এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জন্য দু হাজার ১০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। ওই শিক্ষক জানান, ২০১৪ সালের সেশনচার্জ ও মার্চ মাস পর্যন্ত বেতন এবং বিদ্যালয়ের উন্নয়ন খাতে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে।

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায়ের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষক-অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোত্তালিব। তিনি জানান, বিদ্যালয়গুলোতে এরকম জোর জবরদস্তি চলতে থাকলে হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের পড়াশোনা মাঝপথে থেমে যাবে। ঝরে যাবে অনেক সম্ভাবনাময় মেধা। এজন্য তিনি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণসহ তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে আলমডাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীনেশ কুমার পাল জানান, তার উপজেলার বিদ্যালয়গুলোতে পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফরম পূরণের টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে শিক্ষা অফিস থেকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, প্রতিবছরই এসএসসি ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের একটা প্রবণতা থাকে। সে আশঙ্কায় ফরম পূরণ শুরু হওয়ার আগেই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদেরকে ডেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাতে কেউ বোর্ড নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত কোনো টাকা আদায় করতে না পারে। এরপরও যদি কোনো বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে তাহলে ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।