চুয়াডাঙ্গায় ম্যাক্সিম মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটির গ্রাহকরাএক বছরেও ফেরত পাননি আমানতকৃত ৪৭ লাখ টাকা

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় ম্যাক্সিম মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের গ্রাহকরা এক বছর পেরিয়ে গেলেও ফেরত পাননি তাদের আমানতকৃত ৪৭ লাখ টাকা। টাকা না পেয়ে গ্রাহকরা বিপাকে পড়েছেন। এদিকেবাড়িমালিক ১৪ মাসের ভাড়া না পাওয়ায় জেলা সমবায় কর্মকর্তাদের সাহায্য চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন। একবছর ধরে জেলা সমবায় অফিসে ধরনা দিলেও কার্যত কোনো আশার আলো দেখতে পাননি শতাধিক গ্রাহক।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২ মে চুয়াডাঙ্গা শহরের মুক্তিপাড়ায় পেপার গার্ডেন হাউসে অবস্থিত ম্যাক্সিম মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি গ্রাহকদের আমানত নিয়ে উধাও হয়ে যায়।

আমানতকারীরা জানান, উচ্চ লাভের আশায় ম্যাক্সিম মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের নামের প্রতিষ্ঠানটিতে আমানত জমা রাখতে শুরু করি। কোনো ঘোষণা ছাড়ায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় বন্ধ থাকায় গ্রাহকদের মধ্যে সন্দেহ দানা বেধে ওঠে। বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা ম্যাক্সিম কার্যালয় ভাঙচুর চালায়। হামলাকারীরা ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে ওইসময় সদর থানার এসআই খলিলের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে তাতে বাধা দেয়। একই স্থানে ম্যাক্সিম নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে সাইনবোর্ড থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি গুরুত্ব না নেয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েন আমানতকারীরা।

এদিকেএলকাবাসী জানায়, মুক্তিপাড়ায় পেপার গার্ডেন হাউসের পাশেই রয়েছে হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী শামসুল আলম ওরফে চিনু মিয়ার একটি দোতলা ভবন। ওই ভবনের দোতলায় ম্যাক্সিম মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড তিনটি অফিসের কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে ৬ লাখ টাকা অগ্রিম দেয়া হয়। ওই এলাকার আমানতকারী টুপুল নামে এক ব্যবসায়ী চিনু মিয়ার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা বুঝে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৪ অক্টোবর ১৫০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে বাড়িমালিক পক্ষ ও ভাড়াটিয়া ম্যাক্সিম পক্ষে একটি লিখিত চুক্তিনামার মাধ্যমে ৬টি শর্তে ভবনের তৃতীয়তলা ১২০০ ফুট জায়গা ভাড়া দেয়া হয়। চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন বাড়িমালিকের পক্ষে প্রথম পক্ষ মুক্তিপাড়ার মৃত আবুল হাসনাতের ছেলে শাহরিয়ার মাহমুদের পক্ষে মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে মোশারফ হোসেন এবং দ্বিতীয় পক্ষে ম্যাক্সিম মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক যশোর নওয়াপাড়ার ঘোপের মোস্তাফিজুর রহমান। শর্তে বলা হয়েছে, ৫ বছর মেয়াদী এ চুক্তি ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চুক্তি বলবত থাকবে। মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৯ হাজার টাকা। অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা জামানত হিসেবে বাড়িমালিককের নিকট রাখা হয়।

চুয়াডাঙ্গা শহরের মুক্তিপাড়ায় পেপার গার্ডেন হাউসে অবস্থিত ম্যাক্সিম মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের নামে সাইনবোর্ডে রেজিস্ট্রেশন নম্বর রয়েছে ০৪ যশোর। আবার তার নিচে পৃথক সাইনবোর্ডে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা ম্যাক্সিম সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ০১৭ চুয়াডাঙ্গা। আবার একই সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ম্যাক্সিম সেন্ট্রাল কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ০৫ ঢাকা।

এদিকে বাড়িভাড়া বকেয়া থাকায় মোশারফ হোসেন ভাড়া আদায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা সমবায় কর্মকর্তার সাহায্য চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করেছেন।সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান, ম্যাক্সিম মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের আমানতকারীরা ৪৭ লাখ টাকা পাবে এ মর্মে তদন্ত রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দেয়া হয়েছে।

জেলা সমবায় কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মনজুর কাদের জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ম্যাক্সিম মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের ম্যানেজার ও এরিয়া ম্যানেজারকে দুদফা তদন্তের জন্য লিখিতভাবে জানানো হলেও তাদেরকে না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, অন্য জেলার সকল শাখাকে চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নিতে বলা হয়েছে।