চুয়াডাঙ্গায় ভ্যাপসা গরমে অসহনীয় অস্বস্তি

 

গুমটবাধা পরিবেশে দেদারছে ঘামছে শরীর : হাসপাতালে রোগীর উপচেপড়া ভিড়

 

মাহামুদ কামরান: চুয়াডাঙ্গায় তাপমাপা যন্ত্রের পারদ যেদিন ৪৩ ডিগ্রি ছুঁয়েছে সেদিনও এতোটা গরম লাগেনি, যতোটা গরম অনুভূত হচ্ছে গত দুদিন। ভ্যাপসা গরমে দেদারছে ঘামছে শরীর। ভিজে যাচ্ছে পরনের পোশাকআশাক। বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও হৃদরোগসহ নানা রোগ। শিশু ও বৃদ্ধরা ব্যাপক হারে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর অস্বাভাবিক চাপ। গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পুরুষ ও নারী ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলো ১০৮ জন রোগী। যা ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুন বেশি। আর শিশু ওয়ার্ডে তো রোগীর চাপ লেগেই রয়েছে।

জানা গেছে, ভ্যাপসা গরমে হৃদরোগ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তির পর দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন- মেহেরপুর বর্ষিবাড়িয়ার আবু বক্কর (৬৫)। তিনি উম্বাত আলীর ছেলে। হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তিনি মারা যান। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হোগলডাঙ্গার জিনারুল ইসলাম জিনু (৪৫) মারা গেছেন। তার পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। বিকেল ৪টার দিকে তিনি মারা যান। হাসপাতালে অবশ্য জিনারুলের মৃত্যুর জন্য ভ্যাপসা গরমে নিউমোনিয়াকেই দায়ী করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক শূন্য ও সর্বনিম্ন ২৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকাল সাতক্ষীরায় ৩৬ দশমিক ৫ ও সর্বনিম্ন রাঙ্গামাটিতে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহওয়া অধিদফতর। তাপ মাপা যন্ত্রের পারদ খুব একটা না উঠলেও এতো গরম অনুভূত হচ্ছে কেনো? এ প্রশ্নের জবাবে আবওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে উঁচুতে উঠেছে। কয়েকদিন আগের বৃষ্টির ফলে বাতাসে বেড়েছে জলীয়বাষ্প। আপেক্ষিক আর্দ্রতা হ্রাস পেয়ে নেমেছে ৬০ শতাংশের নিচে। ফলে গুমট বাধা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। ঘামছে শরীর। চিকিৎসকদের অনেকেই বলেছেন, ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ-পানি বেরিয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তা ছাড়া গরমের কারণে অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে অতিরিক্ত গরমের কারণে তাদের তা বেড়ে অসহনীয় হয়ে উঠছে। ফলে হাসপাতালে রোগীর চাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

জানা গেছে, গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৩০ জন রোগী। মহিলা ওয়ার্ডে গতকাল ভর্তি হয়েছেন ২৬ জন। ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন বেশ কয়েকজন। এরপরও নতুন পুরাতন দিয়ে মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডে গতকাল রাত পর্যন্ত ভর্তি ছিলেন ১০৮ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত ১২ জন। বাকিদের সিংহভাগেরই বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টজনিত। এসব মাত্রারিক্ত গরমের কারণেই দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিসিন কনসালটেন্ট ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পরিতোষ কুমার ঘোষ। তিনি মাত্রারিক্ত গরমে বেশি বেশি করে পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনে সেলাইন খাওয়া দরকার। তা ছাড়া খাবার গ্রহণেও বাড়তি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি বাসিপচা খবার ত্যাগের পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ঘাম শরীরে বসার সুযোগ না দিয়ে ঘন ঘন মুছে ফেলা ভালো। ঘামগায়ে ঠাণ্ডা পানি পরিহার করতে হবে। মাত্রারিক্ত ঘামের কারণে শরীরে যাতে পানিশূন্যতা না হয়ে পড়ে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। ঘামতে ঘামতে হঠাৎ ঘামা বন্ধ হওয়া ভালো লক্ষণ নয়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আমাদের পদ্মবিলা প্রতিনিধি সুজন মাহমুদ জানিয়েছেন, ভ্যাপসা গরমে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন জেলা সদরের হোগলডাঙ্গার হানার মণ্ডলের ছেলে জিনারুল হক জিনু। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। বিকেলে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্থানীয়রা বলেছেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। গতকালই নিজ গ্রামে দাফন কাজ সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া করা হয়।