চুয়াডাঙ্গায় বিআরটি’র টাকা কোনো ব্যাংক নিচ্ছে না : মোটরমালিকরা দিশেহারা

 

জব্দকৃত মোটরসাইকেলের সংখ্যা কত কেউ জানেনা!

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অর্থরিটির (বিআরটিএ) আওতায় মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনে বিদ্যমান কর ও ফিসমূহ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২৮ মার্চ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে। অতি সম্প্রতি পত্রটি চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ কার্যালয়ে এসে পৌঁছিয়েছে।

জব্দকৃত মোটরসাইকেলের প্রকৃত সংখ্যা পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগ জানাতে না পারায় প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আবার চুয়াডাঙ্গা ভারত সীমান্তবর্তী জেলায় হওয়ায় চোরাইকৃত মোটরসাইকেলের ব্যবহারকারীরা মোটরসাইকেল ফিরে না পেলে ওই মোটরসাইকেলের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সুযোগ সন্ধানীরা বের করে নিতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশ সুপার রশীদুল হাসানের সতর্ক দৃষ্টি কামনা করেছে সচেতন মহল।

এদিকে দেশের মধ্যে মোটরসাইকেলের সবচেয়ে বড় মার্কেট চুয়াডাঙ্গায় বিআরটিএর টাকা জমা নেয়ার কোনো ব্যাংকের শাখা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন মোটরসাইকেল মালিকরা। পাশাপাশি পুলিশি ভোগান্তিতে মালিকরা হয়ে পড়েছেন দিশেহারা। মালিকরা দীর্ঘদিন যাবত ব্যাংকের শাখা খোলার দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ রয়েছে উদাসীন। ফলে মোটরসাইকেল মালিকরা প্রতিকার না পেয়ে নিকটবর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে রেজিস্ট্রেশনের জন্য টাকা জমা দেয়ার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে।

প্রতিটি ১০০ সিসি ও জ্বালানি ব্যতীত মোটরসাইকেলের ওজন ৯০ কেজি পর্যন্ত বিদ্যমান পদ্ধতি রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্য ৮ হাজার ১৬৩ টাকা এবং সড়ক কর ৫ হাজার ৭৫০ টাকা সর্বমোট ১৩ হাজার ৯১৩ টাকা জমা দিতে হয়। বর্তমানে পরিবর্তিত পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্য (এককালীন) ৮ হাজার ১৬৩ টাকা এবং সড়ক কর (প্রথম কিস্তি) ১ হাজার ১৫০ টাকা সর্বমোট ৯ হাজার ৩১৩ টাকা জমা দিতে হবে। এরপর প্রতি ২ বছর অন্তর অন্তর পরবর্তী ৮ বছরে কিস্তি প্রতি ১ হাজার ১৫০ টাকা হারে ৪টি সমান কিস্তিতে ৪ হাজার ৬০০ টাকা জমা দিতে হবে।

প্রতিটি ১০০ সিসি’র ঊর্ধ্বে ও জ্বালানি ব্যতীত মোটরসাইকেলের ওজন ৯০ কেজির ঊর্ধ্বে বিদ্যমান পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্য ৯৭৭৩ টাকা এবং সড়ক কর ১১ হাজার ৫০০ টাকা অর্থাৎ ২১ হাজার ২৭৩ টাকা জমা দিতে হতো। বর্তমানে পরিবর্তিত পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্য (এককালীন) ৯ হাজার ৭৭৩ টাকা এবং সড়ক কর (প্রথম কিস্তি) ২ হাজার ৩০০ টাকা সর্বমোট ১২ হাজার ৭৩ টাকা জমা দিতে হবে। এরপর প্রতি ২ বছর অন্তর অন্তর পরবর্তী ৮ বছরে কিস্তি প্রতি ২ হাজার ৩০০ টাকা ৪টি সমান কিস্তিতে জমা দিতে হবে।

মোটরসাইকেল মালিকরা অভিযোগ করে বলেন, গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে চুয়াডাঙ্গায় ইউসিবিএল শাখা হঠাৎ করে বিআরটি-এর টাকা জমা নেয়া বন্ধ করে দেয়। সেই থেকে মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়। এরপর পাশ্ববর্তী মেহেরপুর জেলায় টাকা জমা দেয়া  শুরু হলে তা আজ মঙ্গলবার থেকে টাকা জমা নেয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এভাবে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে টাকা জমা দিতে থাকেন মালিকরা। গত ২৮ মে থেকে কুষ্টিয়ার ব্র্যাক ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক টাকা জমা নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে কুষ্টিয়ার স্যোশাল ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) নামে একটি শাখা টাকা জমা নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এনআরবি নামে একটি শাখা চালু হতে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআরটিএ’র চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের পরিদর্শক এসএম সবুজ জানান, গত ২৯ মে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে নেপাল রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের (এনআরবি) প্রতিনিধিরা দেখা করে কথা বলেছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দোতলায় পোস্ট অফিসের সামনের ঘরটিতে ব্যাংকের শাখা খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থানটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পছন্দ করেছে। জেলা প্রশাসককে তারা জানিয়েছেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে শাখাটি তারা চালু করতে চেষ্টা করবে। তিনি আরো জানান, মোটরসাইকেলের টাকা ব্যাংকে জমা দেয়ার পর একটি স্লিপ দেয়া হয় ওই স্লিপ দেখালে পুলিশ মোটরসাইকেল ছেড়ে দেবে। তবে টাকা জমা দেয়ার ১ মাস পর রেজিস্ট্রেশনের কাগজ মালিক হাতে পারে বলেও জানান তিনি।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি তোজাম্মেল হোসেন জানান, সদর থানা এলাকায় কতোটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে তা সঠিক বলতে পারবো না। তবে তিনি দাবি করেছেন প্রতিদিন জব্দকৃত মোটরসাইকেলের তালিকা ডিআইও (১) ডিএসবি অফিসে জানানো হয়।

এ ব্যাপারে জানাতে চাইলে ডিএসবি কার্যালয়ের ডিআইও (১) পরিদর্শক নাজমুল হুদা জানান, জেলায় জব্দকৃত মোটরসাইকেলের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।

চুয়াডাঙ্গা সদর ট্রাফিকের পরিদর্শক (টিআই) মাহবুবুল আলম শরীফ জানান, জেলার চার থানা ও বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়িতে মোটরসাইকেল জব্দ করা হলেও এর প্রকৃত সংখ্যা কতো তা জানি না। ওপরের নির্দেশে এ অভিযান চলছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ মে থেকে চুয়াডাঙ্গার চার থানা পুলিশ, ৩৫ পুলিশ ক্যাম্প ও ট্রাফিক বিভাগ একযোগে মোটরসাইকেলের মালিকদের ওপর সাঁড়াশি অভিযান চালায়। এ সময় জেলার বিভিন্ন সড়ক থেকে নম্বরবিহীন শ শ মোটরসাইকেল জব্দ করে চার থানা চত্বর, ৩৫ পুলিশ ক্যাম্প ও জেলা পুলিশ লাইনে খোলা আকাশের নিচে জমা করে রাখা হয়েছে। খোলা আকাশের নিচে থাকায় মোটরসাইকেলগুলো নষ্ট হতে চলেছে। শুধু মোটরসাইকেল মালিক নয় সমস্যায় পড়েছেন বাস, ট্রাক, মাইক্রো, প্রাইভেটকার ও সরকারি দপ্তরের যানবাহনসহ কয়েক হাজার গাড়ির মালিকরা।