চুয়াডাঙ্গায় ফের গভীর রাতে বাউল আখড়ায় সাধুভক্তদের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা

damurhuda pic. 30.07 (4)

গোবিন্দপুরে জুলমত শাহর আখড়ায় অগ্নিসংযোগ : বেঁধে রেখে দু সাধুর চুল কর্তন

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গায় বাউল আখড়ায় আবারও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এবার দামুড়হুদার গোবিন্দপুরের বাউল আখড়ায় হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা। তারা অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে। একই সাথে বাউল গুরুসহ দুই সাধুর মাথার চুল কেটে দিয়েছে তারা। দুর্বৃত্তরা এ সময় বাউল গুরুসহ চারজনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে গ্রামের মোল্লারচর মাঠপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে শনিবার বিকেলে দামুড়হুদা থানায় একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পর গ্রামজুড়ে বাউল অনুসারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ জানান, আশ্রমের মালিক জুলমত শাহ কুমিল্লার কথিত ল্যাংটা বাবার অনুসারী এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কুলচারার হোসেন শাহ’র ভক্ত। সাধু জুলমত শাহ ২ সিজদায় দিনে দু বার নামাজ পড়েন বলে জানা গেছে।

হামলায় আহতরা হলেন- দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামের মৃত খোয়াজ আলী মণ্ডলের ছেলে বাউল গুরু জুলমত আলী শাহ (৫২), তার স্ত্রী মোমেনা বেগম (৪১), নাতি ছেলে রাকিব হাসান (৯) ও চণ্ডিপুর গ্রামের মালোপাড়ার মৃত রেনুপদ হালদারের ছেলে বাউল ভক্ত হরেনন্দ্রনাথ গোঁসাই।

বাউল আখড়ার বাউল গুরু ও পুলিশসূত্রে জানা যায়, দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর মোল্লারচর মাঠপাড়ায় রয়েছে একটি বাউল আখড়া। শুক্রবার রাতে ওই বাউল আখড়ায় ৮-১০ জনের সশস্ত্র অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত ঢুকে ঘুমন্ত বাউলদের ডাকে। এরপর বাউল গুরু জুলমত আলী শাহ, তার স্ত্রী মোমেনা বেগম ও বাউল ভক্ত হরেন্দ্রনাথ গোঁসাইকে দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে মারপিট করে। তারা গুরুতর আহত হন। এ সময় হামলাকারীরা হরেন্দ্রনাথ গোঁসাই ও জুলমত আলী শাহ’র মাথার চুল গোড়া পেড়ে কেটে দেয়। দুর্বৃত্তরা বাউল আখড়ার সকল জিনিসপত্র বাইরে বের করে ফেলে। তারা আখড়ার ভেতরের দুটি ঘর ও একটি রান্নাঘরে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়। আখড়ায় থাকা ১৭ হাজার টাকা, একটি শ্যালোমেশিনসহ প্রায় ৩ লাখ টাকার মালামাল আগুনে ভস্মীভূত হয় বলে বাউল সাধুরা জানান।

বাউল গুরু জুলমত শাহর স্ত্রী মোমেনা বেগম জানান, দুর্বৃত্তদের সবার হাতে ধারালো অস্ত্র ছিলো। দড়ি দিয়ে আমাদের বেঁধে ফেলে। নাতি ছেলে আমার কাছে থাকায় বেশি নির্যাতন করেনি। আর স্বামী দড়ির বাঁধন খুলে মাঠে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পায়। পেট্রোল ঢেলে আখড়া পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে তারা।

গতকাল শনিবার বিকেলে বাউল গুরু জুলমত শাহ বাদী হয়ে ৮-৯ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। জেলা বাউল সংঘের সভাপতি মনিরুজ্জামান ধীরু জানান, এটি দুঃখজনক ঘটনা। পুলিশের উদাসীনতার কারণে চুয়াডাঙ্গায় বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। দুর্বৃত্তরা হামলা করে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।

পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান জানান, বাউল ও সাধু আস্তানায় হামলার সাথে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হামলার ঘটনা যাতে পরবর্তীতে না ঘটে সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই রাতে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের একতারপুর গ্রামে সাধু আস্তানায় দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে তিন সাধু ভক্তকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করে। আর গত বছরের ডিসেম্বরে সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের আকন্দবাড়িয়া গ্রামে দুর্বৃত্তরা মাজারের এক সাধুসংঘের আয়োজককে কুপিয়ে খুন করে।