চুয়াডাঙ্গায় দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েই চলেছে : দু খাদ্য ডিলার সাসপেন্ড

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় পৌর এলাকার খাদ্যপণ্যের নয়জন ডিলারের মধ্যে দুজনকে অনিময়ের দায়ে সাসপেন্ড করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার  আটা বিক্রি পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদশনকালে কর্মকর্তারা ওই দু ডিলারের নির্দ্ধারিত গুদামে বরাদ্দকৃত চাল ও আটার মজুদ কাগজ অনুযায়ী  না পাওয়ায় এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। ওই ডিলার হচ্ছেন- ৭ নং ওয়ার্ডের ঝিনাইদহ পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার বজলুর রহমান ও ৯ নং ওয়ার্ডের গম পট্টির আমজাদ হোসেন।

এদিকে গতকাল বুধবার জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন  বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সুযোগে যেন কেউ কৃত্রিম সঙ্কট করতে না পারে, সেজন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নজরদারী বাড়াতে হবে।’

সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তরিকুল ইসলাম জানান, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার নয়জন ডিলারের মাধ্যমে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে খোলাবাজারে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। এসব ডিলারদেরকে শনিবার বাদে সপ্তায় ছয়দিন একটন চাল ও একটন আটা দেয়া হয়। এসব দোকান থেকে ক্রেতারা ২৪ টাকা দরে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চাল ও ২২ টাকা দরে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি করে আটা কিনতে পারবেন। মঙ্গলবার দুজন বাদ দেয়ার পর বর্তমানে সাতজন সাতটি ওয়ার্ডে চাল-আটা বিক্রি করছেন। ওই সাতজন হলেন- ১ নং ওয়ার্ডের কেদারগঞ্জ বাজারে আদম আলী, ২ নং ওয়ার্ডের বুজরুকগড়গড়ির মনোয়ার হোসেন, ৩ নং ওয়ার্ডের কোর্টপাড়ায় জাভেদ মো. রফিজ খান, ৪ নং ওয়ার্ডের ফেরীঘাট রোডের মালিক টাউয়ার বদরে মুনির, ৫ নং ওয়ার্ডের পশুহাটের আলিহীম বিশ্বাস, ৬ নং ওয়ার্ডের তালতলার আজাদ আলী ও ৮ নং ওয়ার্ডের বেলগাছিতে আতিকুর রহমান।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রফিজ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, জেলা প্রশাসকের সাথে পরামর্শক্রমে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শীঘ্রই নতুন দুজন ডিলার নিয়োগ করা হবে। এদিকে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং একের পর এক হরতালে প্রতিদিনই চাল-আটাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় হতদরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্তের পাশাপাশি অনেক মধ্যবিত্তও সম্প্রতি ওএমএসের দোকান থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে এসব কিনছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য না হওয়ায় তারা বাধ্য হয়েই ওএমএসের দোকানে যাচ্ছেন।  সম্প্রতি সরেজমিনে ওএমএসের  দোকানগুলোতে অনেক মধ্যবিত্তকে দেখা গেছে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও বাধ্য হয়ে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন।

সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ হাটে গত সোমবার মোটা হাইব্রিড চাল পাইকারি প্রতি কেজি ২৯ টাকা, রত্না ৩২ টাকা, স্বর্ণা ৩১ থেকে ৩২ টাকা, ব্রি-২৮ (নতুন) ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা, ব্রি-২৮ (পুরোনো) ৩৬-৩৮ টাকা এবং চিকন মিনিকেট ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। গত রোববার জীবননগর মোকামে প্রায় একই দামে এসব চাল বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, এ দুটি মোকামে গত এক মাসে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা এবং চিকন চালের দাম কেজিপ্রতি আট টাকা বেড়েছে। এদিকে তিন-চার দিন ধরে জেলার বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি মোটা হাইব্রিড চাল প্রতি কেজি ৩৩ টাকা, রত্না ৩৫, স্বর্ণা ৩৪ থেকে ৩৬, ব্রি-২৮ (নতুন) ৩৯ থেকে ৪০, ব্রি-২৮ (পুরোনো) ৪০-৪২ টাকা এবং চিকন মিনিকেট ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বিক্রেতারা জানান, এক মাস আগে তিনি প্রতি কেজি আটা ২৭ থেকে ২৮ টাকা দরে বিক্রি করলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৩ টাকা। জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ডে নয়জন পরিবেশকের মাধ্যমে খোলাবাজারে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতিটি পরিবেশক শনিবার ছাড়া সপ্তায় ছয় দিন এক মেট্রিক টন করে চাল বিক্রি করছেন। এছাড়া আগে থেকেই পরিবেশকেরা খোলাবাজারে আটা বিক্রি করছেন। ক্রেতারা পরিবেশকদের কাছ থেকে মাথাপিছু পাঁচ কেজি চাল ২৪ টাকা দরে এবং পাঁচ কেজি আটা ২২ টাকা দরে কিনতে পারছেন।