চুয়াডাঙ্গায় কমেনি শীতের তীব্রতা : দ্রুত পরিস্থিতি বদলানোর পূর্বাভাস

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের শীতে কাঁপা পশ্চিম-উত্তরবঙ্গের তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও শীতের দাপট কমেনি। বরং শীতে বয়ষ্ক ও শিশুদের শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। দরিদ্রদের দুর্ভোগের শেষ নেই। আবহাওয়া অধিদফতর বলেছে, শৈত্যপ্রবাহ আরো দু একদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। তীব্র শীতে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের দুস্থ শীতার্তদের দুর্ভোগ লাঘবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনসহ ব্যক্তিগত তহবিল থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। গতকালও কয়েকটি স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণের খবর জানিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা। তীব্র শীতে চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় গোপালগঞ্জে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো কক্সবাজারে ২৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতপরশু দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। গতকাল সামান্য বেড়ে চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় সর্বো্চ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২১ আর ৬ এর দাপটেই চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের মানুষ কাঁপছে থরথরিয়ে, আর রংপুরের রাজারহাটে? সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ২ আর সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থায় রাজাহাটের মানুষ কেমন আছে? তবে গতকাল বিকেল থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ ছাড়া অন্য এলাকায় তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। আবহওয়া অধিদফতরসূত্র এ তথ্য জানালেও গতরাতে চুয়াডাঙ্গায় পরশু রাতের মতোই হাড় কাঁপানো শীত অনুভুত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার পরবর্তী আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, সীতাকুণ্ড ও শ্রীমঙ্গল অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা আরো দু একদিন অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা রাতের থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার অবস্থায় বলা হয়, রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে পারে। ৫ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, গত তিনদিনে মেহেরপুরের তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে উঠানামা করছে। সাথে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ফলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে কয়েকগুন।
রাত থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে পুরো মেহেরপুর জেলা। সকাল ১০টা পেরিয়ে গেলেও সূর্যের দেখা মেলে না। হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। ঘন কুয়াশার কারণে গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছে চালকদের। আবার অনেক অবৈধযানে হেডলাইট না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা থাকছে। ফলে সতর্কতার সাথে গাড়ি চালাতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে প্রচণ্ড শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষ। শীতের আগে যারা প্রতিদিন ৩ থেকে ৪শ’ টাকা আয় করতেন তাদের অনেককেই কাজ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। ভাটা পড়েছে তাদের নিত্যদিনের আয়ে। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। আবার সরকারি বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র দেয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এদিকে অব্যাহত কুয়াশা থাকলে মশুর ও কুলচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়াও এ সময়ে ধানের চারা রোপণ করলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, শনিবার চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর অঞ্চলের তাপমাত্রা ছিলো ৮, রোববার ৬ দশমিক ১ ও সোমবারের তাপামাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরও কয়েকদিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। কয়েকদিন পর তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি ।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের আলমডাঙ্গা শাখার উদ্যোগে দুঃস্থ অসহায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে ব্যাংক ভবনের ছাদে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন আলমডাঙ্গার নবনির্বাচিত পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু। উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল অফিসের ডিজিএম আমির হোসেন, আলমডাঙ্গা শাখা ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা সিবিএ সভাপতি ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, প্রিন্সিপাল অফিসার রফিকুল আলম রেজা, আশরাফুল হক, সৈয়দ সাহেদুল হক, সিনিয়র অফিসার মসলেম আলী, নাসিম উদ্দিন, ৮ নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলামসহ ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী। শাখার সিনিয়র অফিসার মানোয়ার হোসেনের পরিচালনায় ৮০ জন দুঃস্থ অসহায় শীতার্তের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ। গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে দর্শনা পুরাতন বাজার এলাকায় অট্রোলিয়া যুবলীগ শাখার সহযোগিতায় কম্বল বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, আ.লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম, মোমিনুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, আ. রফিক কাবি, সাবির হোসেন মিকা, নাসির মল্লিক, রাজিব আহম্মেদ, রমিজ মল্লিক,সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।
ভালাইপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার জুড়ানপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে ৪৩০টি শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ইউপি পরিষদের উদ্যোগে ১৯০টি কম্বল ও চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলীর নিজ উদ্যোগে ২৫০ টি কম্বল বিতরণ করা হয়। শীতবস্ত্র বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন জুড়ানপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী, ইউপি সচিব মহাসিন আলী, ইউপি সদস্য ফজলুর রহমান, শামীম হোসেন, রেজাউল হক প্রমুখ।