চুয়াডাঙ্গায় এখন  থেকে বিদ্যালয় চলাকালীন কোচিং কার্যক্রম বন্ধ ॥ গাইড ও নোটবই নিষিদ্ধ

জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বললেন চুয়াডাঙ্গাকে আদর্শ জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, ‘এখন থেকে বিদ্যালয় চলাকালীন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোচিং কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মোবাইলফোন নিষিদ্ধ করা হলো এবং শিক্ষকরা মোবাইলফোন শ্রেণিকক্ষে নিতে পারবেন না। শিক্ষাক্ষেত্রে চুয়াডাঙ্গাকে আদর্শ জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’ গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক পর্যায়ের মাদরাসা ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সাথে জেলা প্রশাসনের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ এসব মন্তব্য করেছেন।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জসীম উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি দে, ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান ও জেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান এ সময় বক্তব্য রাখেন। অন্যান্যের মধ্যে অধ্যাপক এসএম ইস্রাফিল, সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ কুমার সাহা, দামুড়হুদা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মতিন, আলমডাঙ্গা হাটবোয়ালিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলি, সৃজনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আহাদ আলী মোল্লা, তিয়রবিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, পাঁচলিয়া জামাল উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৈয়ব আলী, তিতুদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মীর মোহাম্মদ জান্নাত আলী, রংধনু শিক্ষাদান কেন্দ্রের পরিচালক আব্দুস সালাম, শাহীন একাডেমির পরিচালক আব্দুস সামাদ শাহীন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ফাইজার চৌধুরী, প্রথম আলোর সাংবাদিক শাহ আলম সনিসহ আরও অনেকে এ সময় বক্তব্য রাখেন। মতবিনিময় সভার শুরুতেই পরিচয়পর্ব শেষে তিনটি ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শন ও ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত জনগণের মতামতগুলো তুলে ধরা হয়। এরপর উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সহকারী কমিশনার সচিত্র রঞ্জন দাস, ফখরুল ইসলাম, পাপিয়া আক্তার, ফাতেমা জাহান উর্মি, জীবননগর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন ও আলমডাঙ্গা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দীনেশ চন্দ্র পাল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ আরও বলেন, গাইড বই ও নোটবই এখন থেকে নিষিদ্ধ করা হলো। মাগরিব নামাজের পর অভিভাবক ছাড়া শিক্ষার্থীরা বাইরে থাকতে পারবে না। বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষকদের পড়ানো চলবে না। যে বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাকে সেই বিষয়ে পাঠদান করাতে হবে। এটি বাস্তবায়ন করবেন প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ের পাঠদান সময়সূচি মেনে চলতে হবে। ইভটিজিং বন্ধে বালিকা বিদ্যালয় ও সহশিক্ষা বিদ্যালয়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) লাগাতে হবে। বাল্যবিয়ে বন্ধে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। আত্মহত্যা বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করে তা রোধ করতে হবে। বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক কোনো কোচিং সেন্টারের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। কোচিং সেন্টারের কোনো বিজ্ঞপ্তি পত্রিকা ও সাইনবোর্ড আকারে প্রকাশ করা যাবে না। প্রতি ৬ মাস পরপর বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ করতে হবে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে। পরীক্ষার কম নম্বর সম্পর্কে অভিভাবকদের আপত্তি থাকলে তাদের পরীক্ষার খাতা দেখানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী ১০ দিন অনুপস্থিত থাকলে তাদের সম্পর্কে প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। এক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অন্য বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আইনে না থাকলে শিক্ষককের পদ থাকবে না। যে সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক হাজিরা বেশি থাকবে তাদের নম্বর ও পুরস্কৃত করতে হবে। ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা নিতে হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখাতে পারিনি। তাদেরকে স্বপ্ন দেখাতে হবে। তাদেরকে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিককর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মাদক, ইভটিজিং ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সচেতন করে তুলতে হবে। এজন্য পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। সকলে মিলে যদি আন্তরিকতার সাথে কাজ করি তাহলে সুখি সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে পারবো। ইভটিজিং প্রতিরোধে আপনারা পুলিশকে জানাবেন পুলিশ তাৎক্ষণিক স্কুলে পৌঁছে যাবে।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘শিক্ষার মানে খুলনা বিভাগের মধ্যে চুয়াডাঙ্গার অবস্থান অত্যন্ত নিচে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্কাউটিং দল গঠন এবং সাঁতার প্রশিক্ষণে উদ্বুদ্ধ করবেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জসীম উদ্দীন প্রধান শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘সিদ্ধান্তসমূহ মেনে চলার ব্যবস্থা নেবেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’